বাংলারজমিন

খেতাবপ্রাপ্ত এক মুক্তিযোদ্ধার কান্না

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে

২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

খেতাবপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম। বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখসমরে বীরত্বের জন্য ভূষিত হয়েছিলেন ‘বীরপ্রতীক’ উপাধিতে। কিন্তু জীবনের এই পড়ন্তবেলায় প্রতারণার শিকার হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ট্যাংক চালনায় পারদর্শী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। ঢাকায় খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্লট দেয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আকমল ও জাহিদ নামের দুই প্রতারক। এছাড়া নোয়াখালীর চাটখিলের সোমপাড়া বাজারে ক্রয়কৃত একটি দোকানও দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নিজের ক্রয়কৃত ওই দোকানটি ফিরে পেতে ও প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কাছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতবছরের ৩০শে আগস্ট প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নূরুন আকতার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও দোকানের দখল বুঝে পাননি তিনি। গ্রেপ্তার হয়নি ওই প্রতারক জাহিদ। উদ্ধার হয়নি ১০ লাখ টাকা।         
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমের (বীরপ্রতীক) বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলের দক্ষিণ রামদেবপুরে। ১৯৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। এরপর ভারী অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেয়ার পাশাপাশি ট্যাংক চালনায় পারদর্শী হয়ে উঠেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। তৎকালীন ইউনিট কমান্ডার মেজর আমিন আহমেদের অধীনে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সৈয়দপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি ঘাঁটি ট্যাংক দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন দুর্ধর্ষ এই যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য ‘বীরপ্রতীক’ খেতাব পান তিনি। এরপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন আবদুল হালিম। চাকরি জীবনের সঞ্চিত পুঁজি দিয়ে চাটখিলের সোমপাড়া বাজারে একটি দোকান কিনেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা দোকানটি দখল করে নেয়। এদিকে আবদুল হালিমের গ্রিস প্রবাসী পুত্র সেলিমকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত রাজধানীর মিরপুরে ৫ কাটা প্লট পাইয়ে দেয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দেয় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার শুকুরখাটা গ্রামের আকমল হোসেন। সে বলে- ১০ লাখ টাকা দিলেই তার ছোটভাই জাহিদ প্লট বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। প্রতারক আকমলের কথামতো ৫০ লাখ টাকা দামের ওই প্লটের জন্য তিন কিস্তিতে ১০ লাখ টাকা পাঠান। আলফাডাঙ্গার রূপালী ব্যাংক শাখার জাহিদের একাউন্টে (এসি নং ১৪৩৪) পাঁচ লাখ, একই ব্যাংকের শাখার আকমলের স্ত্রী খাদিজার একাউন্টে (এসি নং ৭৭৯৯৭) আড়াই লাখ ও আকমলের হাতে নগদ তিন লাখ টাকা দেন। এরপর বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমকে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় ৫০ বার এনে হয়রানি করেন। এরপরই প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি। ওদিকে  মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নেয় এক দশক আগে চাটখিলের সোমপাড়া বাজারের ক্রয়কৃত দোকানটি। এরপর স্থানীয় প্রভাবশালীদের উচ্ছেদ করে দোকানটি দখল বুঝিয়ে দিতে এবং প্রতারক আকমল ও জাহিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধ আবদুল হালিম। ওদিকে গ্রিসের বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, ফরিদপুর ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর আরেকটি অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতবছরের ৩০শে আগস্ট প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নূরুন আকতার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও দোকানের দখল ফিরে পাননি। গ্রেপ্তার হয়নি প্রতারক আকমল ও জাহিদ। উদ্ধার হয়নি ১০ লাখ টাকা। এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মাহবুবুল আলম তালুকদার বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status