বিনোদন

সিনিয়র শিল্পীদের উপস্থিতি কমছে টিভি নাটকে

এন আই বুলবুল

২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

একটা সময় পারিবারিক বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল টিভি নাটক। পরিবারের সকলে একইসঙ্গে তা উপভোগ করতেন। কিন্তু এখন টিভি নাটকে সেই জৌলুস নেই বললেই চলে। কারণ, পরিবারের সকলে একসঙ্গে বসে উপভোগ করার মতো নাটক খুব কমই নির্মাণ হচ্ছে। এসব নাটকে নেই বাবা-মা বড় ভাই-বোন, কিংবা দাদা-দাদির চরিত্রগুলো। টিভি নাটকের সোনালি দিনগুলোতে দেখা যতে একটি নাটকে অনেক চরিত্রের সমন্বয় ঘটতো। এ কারণে চরিত্রের প্রয়োজনে নাটকে নায়ক-নায়িকার বাইরে সিনিয়র শিল্পীদেরও দেখা যেত। এই নাটকগুলো দর্শক সানন্দে গ্রহণ করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে টিভি নাটকের গল্প তার বিপরীতে। বেশির ভাগ নাটক নির্মাণ হচ্ছে দু’জন মানুষের প্রেম অথবা ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে। এগুলোতে শুধু নায়ক-নায়িকার উপস্থিতিই থাকে। গল্পে পারিবারিক আবহ দেখা যায় না। এসব কারণে আজকাল অনেক সিনিয়র শিল্পীর হাতে নাটকের কাজ নেই। আবার কেউ কেউ মাঝে-মধ্যে দু’-একটিতে কাজ করেন বলে জানা যায়। দু’-একজন শিল্পীকে নিয়ে কাজ করার কারণে আজকাল নাটকে দর্শক বৈচিত্র্য পায় না বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে সিনিয়র শিল্পীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ক্ষোভও প্রকাশ করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য চ্যানেলগুলো দায়ী বলে আমি মনে করি। চ্যানেলগুলো অল্প টাকায় খারাপ নাটক কিনে সেগুলো প্রচার করছে। যদি বাজেট ঠিকমতো থাকতো তাহলে এমনটা হতো না। আবার যে বাজেট আছে সেটা দিয়েও অনেক সময় নির্মিত নাটকে বাবা-মা, ভাই-বোন বা অন্য চরিত্রগুলো রাখা যায়। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। কারণ, এই ক্ষেত্রে চ্যানেলগুলোর চাওয়া রোমান্টিক কমেডি নাটক। এ জাতীয় নাটকের জন্য সিনিয়র শিল্পীদের প্রয়োজন পড়ে না। অন্য শিল্পীদের মতো সিনিয়র শিল্পীরাও অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কাজ না থাকার কারণে তাদের অনেকে এখন হতাশায়ও ভুগছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের নাট্যাঙ্গনে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। নাটকের বাজেটের বড় একটি অংশ শুধু নাটকের দুজন আর্টিস্টের কাছে চলে যায়। সেই কারণে নির্মাতা নাটকের অন্য চরিত্রগুলো অপেশাদার লোকদের দিয়ে করছেন। চ্যানেল যখন শিল্পী নির্ধারণ করে দেয় তখন নির্মাতার আর কোনো শক্তি থাকে না। নাটকের একটি গল্পকে শক্তিশালী করতে হলে নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি পেশাদার অন্য শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে সিনিয়র শিল্পীর বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে মঞ্চ-টিভি ও চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী আফরোজা বানু বলেন, এখন নাটকের গল্প দেখি শুধু দুজন মানুষকে নিয়ে। বেশির ভাগ একক নাটক দু’চারজন শিল্পী দিয়েই নির্মাণ করা হয়। ধারাবাহিকগুলোরও একই অবস্থা। মূল চরিত্রে দুজন পরিচিত শিল্পী থাকে। সত্যি বলতে, এখন আমাদের আমাদের ভালো স্ক্রিপ্টের অভাব রয়েছে। ভালো স্ক্রিপ্ট না হলে ভালো নাটক নির্মাণ সম্ভব নয়। স্ক্রিপ্টের দিকে নির্মাতাদের মনোযোগী হতে হবে। একটি যৌথ পরিবারে যেমন বাবা-মা থাকেন তেমনি সিঙ্গেল পরিবারেও বাবা-মা থাকেন। গল্পে বাবা-মা কিংবা অন্য চরিত্রগুলো না আসলে গল্পের মান কমে যায়। আমি মনে করি যখনই গল্পে এই চরিত্রগুলো আসবে তখন সিনিয়র শিল্পীদেরও প্রয়োজন পড়বে। নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, আমাদের দেশে অভিনয়ে পরিপূর্ণ শিল্পীদের নিয়ে কাজ না করা একটি প্রথা চালু হয়েছে। যে সময় একজন শিল্পী অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন, তখনই তাকে অভিনয় থেকে দূরে সরে যেতে হয় বিভিন্ন কারণে। নির্মাতারা তাকে নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক থাকেন না। এই প্রথাটি ভাঙতে না পারলে টিভি নাটক ক্রমান্বয়ে তার ঐতিহ্য হারাতে থাকবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status