এক্সক্লুসিভ

১০ বছরে ৩,৯৪২ অপরাধীর দণ্ড মওকুফ

মহিউদ্দিন অদুল

২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

দেশের কারাগারগুলোতে গত ১০ বছরে ৩ হাজার ৯৪২ অপরাধীর কারাদণ্ড মওকুফ হয়েছে। কারাবিধান অনুযায়ী লঘু অপরাধ বিবেচনায় জাতীয় ও ধর্মীয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন মেয়াদে কয়েদিদের কারাদণ্ড মওকুফ করা হয়। তবে ওই মওকুফের আগেই  তাদের সবাই প্রাপ্ত কারাদণ্ডের অর্ধেকের বেশি সাজা ভোগ করেছেন। অনেকেই একই শর্ত পূরণ করে অসুস্থতাজনিত মানবিক কারণে মুক্তি পেয়েছেন।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কারাদণ্ড মওকুফের মাধ্যমে মুক্তির প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। তবে মুক্তির জন্য কয়েদিকে পূরণ করতে হয় বেশ কিছু শর্ত। সিংহভাগ কারাগারে সেই শর্তগুলো পূরণ করে মুক্তিযোগ্য কয়েদি সুপারিশ করার জন্য কমিটি প্রায় ক্ষেত্রেই নাম পায় না। ফলে বেশির ভাগ কারা কর্তৃপক্ষ শূন্য তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অথচ বহু কারাগারে শত শত অচল, অক্ষম কয়েদি মানবেতর কারা জীবন পার করছে। লঘু অপরাধে কারাদণ্ড মওকুফের শর্ত শিথিল করা হলে কয়েদিদের সাজা মওকুফের হার বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নানা অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রাপ্ত বন্দিদের সাজার অর্ধেক মেয়াদ পার করলে সদাচরণ ও অসুস্থতাসহ নানা কারণে জাতীয় ও ধর্মীয় দিবস বা উৎসব উপলক্ষে মুক্তিযোগ্য কয়েদি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পূরণ করতে হয় নানা জটিল শর্ত। এ নিয়ে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কারা ২ শাখা পরিপত্র জারি করে। তা দেশের সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিসির কাছে পাঠানো হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় বা জেলা কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেল সুপার, সিভিল সার্জন, সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সুপারিশকারী কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে মুক্তিযোগ্য কয়েদিদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কারাগারে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে তাদের মুক্তি দিয়ে থাকেন।
তবে এক্ষেত্রে মুক্তিযোগ্য কয়েদির সুপারিশ পাওয়ার জন্য তাদের পূরণ করতে হয় কঠোর শর্তাবলী। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কোন কয়েদি এই সুপারিশের জন্য বিবেচিত হয় না। ওই সভার তারিখের আগেই কয়েদির কারাদণ্ডের মেয়াদ ন্যূনতম অর্ধেক পার করতে হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, এসিড অপরাধ দমন আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং ১৯৬০ সালের ৪৫ নম্বর আইনের কিছু ধারায় দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীরা মুক্তির জন্য সুপারিশযোগ্য হয় না। কারাগারে অসদাচরণ না করলেও একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল চলমান থাকলেও এই বিবেচনায় আসে না। সেনা, বিমান ও নৌ-বাহিনী আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং একাধিক অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও সুপারিশযোগ্য নয়। এছাড়া ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার শর্ত বা বিধি লঙ্ঘনের জন্য দণ্ডপ্রাপ্তরাও মুক্তির জন্য বিবেচিত হয় না। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মোবাইল কোর্ট এবং বিডিআর বা বর্তমান বিজিবি আইনে দণ্ডিতরা মুক্তির জন্য সুপারিশ পায় না। তবে অচল, অক্ষম, দৃষ্টি শক্তি নষ্ট বা প্রায় অকেজো, দুরারোগ্য মরণব্যাধিতে আক্রান্ত এমন দুরবস্থার শিকার অপরাধ ও শর্ত নির্বিশেষে সাজা মওকূপের জন্য বিবেচিত হয়ে থাকে। ফলে এত সব শর্তের বেড়াজালে দেশের ৬৮ কারাগারের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি কারাগারের হাতেগোনা অল্প কিছু কয়েদিই এই সুপারিশের আওতায় আসছে। মুক্তি পাচ্ছে আরো কম। হাতেগোনা কয়েক জন।

পরিসংখ্যানও বলছে একই কথা। যেমন গত ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের ৬৮ কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারের মধ্যে মাত্র কয়েকটি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে ৭ কয়েদি। অপর দিকে মাসখানেক আগে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে ৮ জন। এ বছর মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৫ জন। শুধু এ বছরই নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েদিদের সাজা মওকুফের হার কমছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধসহ গত ১০ বছরে সাজা মওকুফের জন্য সুপারিশ পেয়েছে ৩ হাজার ৯৪২ জন কয়েদি। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৯৭১, ২০১০ সালে ১ হাজার ৬৪১, ২০১১ সালে ৪৯৭, ২০১২ সালে ১৩৬, ২০১৩ সালে ৪৮৯, ২০১৪ সালে ৪২, ২০১৫ সালে ৪০, ২০১৬ সালে ৬০, ২০১৭ সালে ৫১ জন মুক্তি পেয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছর মুক্তি পায় ১৫ কয়েদি।

উপ কারা মহাপরিদর্শক (সদর দপ্তর) বজলুর রশিদ বলেন, বিশেষ দিবসে কারাবন্দিদের জন্য বিশেষ আয়োজনের পাশাপাশি সাজা মওকুফ কয়েদিদের জন্য একটা পুরস্কার। অনেকে সুশৃঙ্খল কারা জীবনের পাশাপাশি এই পুরস্কারের প্রতীক্ষায় থাকে। হাতেগোনা কয়েকজন তার স্বাদ পায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status