এক্সক্লুসিভ

ফের আটকে গেল গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার

২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

ফের আটকে গেল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরও তা আটকে দিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা। এ নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মঞ্জুরি কমিশন। কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের মতো ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়। এর নেপথ্যে ভর্তি ফরম বিক্রি থেকে প্রতি বছর কোটি টাকার ভাগবোটোয়ারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রেীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সম্মত করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই ধরনের নির্দেশনা দেন। কারও নির্দেশনা না মেনে আগের নিয়মেই ভর্তি পরীক্ষা সময়সূচি ঘোষণা করেছেন ভিসি পরিষদ। গত সপ্তাহে রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পরিষদের এক বৈঠকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেন। এতে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হওয়ায় আগের নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কৃষি অনুষদগুলো নিয়ে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা নেয়ার এজেন্ডা ছিল বৈঠকে। কিন্তু বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের আপত্তির মুখে পিছু হটেন পরিষদ। এ ব্যাপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা কেবল মধ্যস্থতা করেছি। মহামান্য প্রেসিডেন্টের নির্দেশনার পর বিষয়টির বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। ভিসি পরিষদের  বৈঠকে সেটি পাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন হয়নি তা পরিষদ ভালো বলতে পারবে। তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়ন করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তারা যদি না চায় সেক্ষেত্রে আমাদের কি করার আছে? একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা জানান, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি ফরম বিক্রির নামে কোটি কোটি আয় করেন। গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি শুরু হলে সেই আয় বন্ধ হয়ে যাবে। এ আয়ের শীর্ষে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগরসহ বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা মূলত এ ভর্তি প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছেন। অন্যদিকে তারাই আবার আইন মানছে না। নিয়ম অনুযায়ী, ভর্তি ফরম বিক্রির আয়ের ৪০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় নামে মাত্র কিছু টাকা কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা দিয়ে বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয় এই খাতে মোট আয় করেছিল ৫৫ কোটি ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এরমধ্যে ৪২ কোটি ৫৫ লাখ ১৪ হাজার টাকাই খরচ করা হয়। তহবিলে জমা পড়েছে মাত্র ১২ কোটি ৬০ লাখ ২ হাজার টাকা। এটা মোট আয়ের মাত্র ২৩ ভাগ। আর মোট ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭টি সরকারের নির্দেশনা মেনে ৪০ ভাগ অর্থ জমা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ গত ১লা ফেব্রুয়ারি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী, সচিব ও ইউজিসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিততে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে ভিসিরা সবাই নীতিগতভাবে একমত হন। বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসির চেয়ারম্যান তখন বলেছিলেন, আচার্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। সবাই একমত হয়েছেন আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা হবে। প্রেসিডেন্টের সভার পরে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার গাইড লাইন তৈরি করতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। কমিটিকে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু কমিটি মন্ত্রণালয়ে কোনো প্রতিবেদন জমাই দেয়নি। এরজন্য ইউজিসি চেয়ারম্যানের উদাসীনতাকে দায়ী করেছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অপর দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন  করে দেয় ভিসি পরিষদ। তারাও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এরমধ্যে গত ৯ই জুলাই ইউজিসির চেয়ারম্যান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে একটি সভা করেছেন। সভায় ভিসিরা বলেছেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে না। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হলে একটি নীতিমালা দরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে, সেগুলোকে সমন্বয় করা, প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জটিলতা ও গোপনীয়তা, মাইগ্রেশন পদ্ধতি কিভাবে থাকবে, কোন শিক্ষার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তা পরীক্ষা পদ্ধতিতেই চয়েজ রাখতে হবে। এসব সমন্বয় করতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন বলে ভিসিরা মত দিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার আয়োজন করা হলে আসন প্রতি প্রতিযোগীর সংখ্যা ১০ জনের নিচে নেমে আসবে। অভিভাবকদের হয়রানি ও অর্থ খরচ কমে যাবে। কোচিং বাণিজ্যও নিরুৎসাহিত হবে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে ভিসিদের বিরোধিতার কারণে বাস্তবায়ন করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরা সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। সিলেটে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তা ভেস্তে যায়। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ফের কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরোধিতায় তখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status