প্রথম পাতা

লড়াইয়ে প্রস্তুত বুলবুল, আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ

আসলাম-উদ-দৌলা, রাজশাহী থেকে

২১ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার মাঝে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের কথা ও কাজের মিল না পাওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ঘাম ঝরাচ্ছে বিএনপি। নীরব প্রচারণার ভেতরে গুছিয়ে ফেলেছে অনেকটাই। প্রতিদিনের গণসংযোগে বিএনপি প্রার্থী এলাকায় প্রতিটি ভোটারের দোড়গোড়া পর্যন্ত যাচ্ছেন। প্রতিটি ঘণ্টা তারা কাজে লাগাতে মাঠে থাকছেন। আর দীর্ঘ প্রচারণার সুযোগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মাঠ নিয়ন্ত্রণে। তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। নৌকা প্রতীকের ভোট মূলত তারাই করছে।

বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কথা-কাজের কোনো মিল নাই। নির্বাচনী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলে। অথচ রাতে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক আওয়ামী লীগ প্রার্থীর স্ত্রী রেনী ভাবির সঙ্গে রেস্টুরেন্টে ডিনার করেছেন। সিটি করপোরেশনের ভেতর মেয়রের ঢোকা বাধা আছে। অথচ বৃহস্পতিবার খুলনা মেয়র সিটি করপোরেশনে ভেতরে গিয়ে নৌকা প্রতীকের ভোট করছেন। ওইদিন বিকালে সিটি হাসপাতালে গাড়ি রেখে ফিরে আসার পথে আমার দলীয় কর্মী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা যাতে মাঠে নামতে না পারে সেজন্য নতুন করে সাতটি মামলা দেয়া হয়েছে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘রাজশাহী নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হলে নির্বাচন কমিশনার, সচিব হেলাল ও ডিসিকে সেই দায় নিতে হবে।’

বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব জানান, ‘কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের হাত করে প্রায় ২২০০ কর্মচারীকে নৌকার ভোট করতে বাধ্য করেছে আওয়ামী লীগ। অধিকাংশের চাকরি মাস্টারোলে হওয়ায় ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে নৌকার ভোট করতে বাধ্য করা হচ্ছে। গত ৫ দিন আগে সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের ব্যানারে সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় তারা প্রচারণা চালিয়েছে।’
এদিকে, গতকাল বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ৩০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রচারণা চালান। সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের বিসমিল্লাহ্‌ টাওয়ারের সামনে থেকে এই প্রচারণা শুরু হয়। হেঁটে বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুর হক মিলনসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। পরে সেখান থেকে হেঁটেই বুধপাড়া, মির্জাপুর ও মোহনপুর এলাকায় গণসংযোগ চালান। কিছু সময় পর রিকশা নিয়ে মিজানুর রহমান মিনু পেছনে পেছনে প্রচারণা বহরে সঙ্গ দেন। তিন হেভিওয়েট নেতার সমন্বিত প্রচারণায় ক্রমেই ভোটারদের ঝোক বিএনপির দিকে ঘুরছে। প্রচারণার বহরে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। এক সময় নির্বাচনী গণসংযোগ বিশাল মিছিলে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগ যেখানে পোস্টার-ফেস্টুনে শহর দখল করেছে। সে জায়গায় কৌশলে লিফলেট হাতে ভোটারদের দোড়গোড়ায় ছুটছে বিএনপি।

বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী বহর যে এলাকায় যাচ্ছে সেখানকার মানুষকে সম্পৃক্ত করছে। ভোটারদের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক এবারের লড়াইয়ে বিএনপি প্রার্থীর শক্তি হিসেবে কাজ করবে। হাঁটতে হাঁটতে চারখুটা মোড় এলাকায় পৌঁছালে সুরজাহান নামের এক মহিলা বিএনপির প্রার্থীর মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘গতবার বুলবুল মেয়র দোয়া নিয়ে গেছে, পাস করেছে। এবারো পাস করবে।’

চারখুটার মোড় থেকে নেমে নতুন বস্তি এলাকার প্রতিটি বাড়ির দরজায় যান মেয়র প্রার্থী বুলবুল। যেখানে ভোট রয়েছে ৭০/৮০টি। পরে মোহনপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার রাস্তার পাশের প্রতিটি বাড়ি হয়ে চলে এই প্রচারণা। কেউ বাদ পড়ে গেলে রিকশায় পেছনে পেছনে আসা মিজানুর রহমান মিনু তাদের সঙ্গে কুশল-বিনিময় করছেন। আবার কখনো ভোটাররা ক্ষোভ ঝাড়ছেন। আম্বিয়া নামের এক ভোটার জানান, ‘বন্যায় বাড়ি ভেঙে আছে এক ব্যান্ডিল টিনও পাইনি। ধানের শীষে ভোট দিবো না।’ এ সময় তিনি তিন বছর জেলে থাকায় কিছু নাগরিক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে, অন্য ভোটাররা ভোট দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কথা হলো ওই এলাকার দোকানদার ইয়াসিন আলীর সঙ্গে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মোহনপুর এলাকার ৫শ’ ভোটের ভেতর ২০/২৫টা ভোট আওয়ামী লীগের। সে কথার কিছুটা সত্যতাও মিললো। সারা শহর যখন নৌকা প্রতীকের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত গ্রাম এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার আছে নামমাত্র। এখানে কাউন্সিলর প্রার্থীর আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে।
পরে রাজশাহী চেম্বার ভবনে প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ চার মেয়র প্রার্থীর উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সোহরাব হোসেন তাকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলে আপত্তি তুলে নিজেকে ২০ দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেন।

মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘কেমন নির্বাচন চাই-এটা এ সময়ের বড় প্রশ্ন। নির্বাচন আসলে কে করবে? নির্বাচন কমিশন, না অন্য কেউ? খেলার মাঠে রেফারিকে যদি বাইরে থেকে নির্দেশনা দেয়া হয় তা হলে আর খেলা থাকে না, নাটকে পরিণত হয়। আমরা চাই, ভোটাররা যেন দুপুরে খেয়ে-দেয়ে ২টার দিকে ভোট দিতে গিয়ে দেখে তার ভোটটা নিরাপদে আছে। সে নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করতে হবে। এই নিরাপত্তা পুলিশ দেবে না কি বিজিবি দেবে। এই নিরাপত্তা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।’

বুলবুল আরো জানান, আজকে পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নাই। আমার বৃদ্ধ মা পর্যন্ত বলেন, ‘ব্যাটা তুই এবার বসে যা, জিততে পারবি না। কে যেন আগে থেকেই জিতে আছে। তুই ভোট করিস না।’
নির্বাচন কমিশনকে আবারো সতর্ক করে বলেন, ‘ভোটের দিন ১৪০০ পোলিং এজেন্ট যেন তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন। ব্যত্যয় ঘটলে, তাদেরকে নিজ বাড়ি থেকে কেন্দ্রে যেতে না দেয়া হলে সেই নির্বাচনে অংশ নেবো না। নির্বাচন কমিশনকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না।’

অন্যদিকে দিনের প্রথম ভাগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। পরে সেখান থেকে শাহ্‌ মখদুম দরগা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে প্রচারণা চালান। মুসল্লিদের মাঝে লিফলেটসহ গণসংযোগ করেন, কুশলাদি বিনিময় করেন।

বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। আমি খুলনা মডেল কি? গাজীপুর মডেল কি জানি না। আমার ছোট ভাই বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ক্ষোভ থেকে কিছু কথা হয়তো বলেছে। সবাই জেতার আশা নিয়ে ভোটের মাঠে নামেন। তিনিও বিজয়ী হওয়ার আশা রাখেন বলেই দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status