দেশ বিদেশ

প্রথমবারের মতো ভিন্ন রক্তের গ্রুপের কিডনির সফল প্রতিস্থাপন দেশে

স্টাফ রিপোর্টার

২১ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর মিরপুরের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভিন্ন ব্লাড গ্রুপের এক রোগীর দেহে সফল কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়েছে। এবিও ইনকমপ্যাটিবল’ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্প্রতি এ ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়। এ ধরনের কিডনি প্রতিস্থাপন বাংলাদেশে প্রথম ও কিডনি সংযোজনে ঘটলো যুগান্তকারী ঘটনা উল্লেখ করে কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটা নিয়মিত সম্ভব হলে রোগীর সঙ্গে ডোনারের রক্তের গ্রুপের মিল থাকার দরকার হবে না। ফলে বেড়ে যাবে কিডনি দাতার সংখ্যা, সমাধান হবে ডোনার সংকটের, কমে যাবে কিডনি বেচা-কেনার মতো অবৈধ কাজ। এটা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বড় অর্জন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, কুড়িগ্রামের তেইশ বছর বয়সী ইমরান ফিরোজের দুটো কিডনি বিকল হয়। তার রক্তের গ্রুপ ছিলো ‘ও’। ছেলেকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতে চাইলেও ইমরানের মায়ের রক্তের গ্রুপ আলাদা থাকায় জটিলতা ছিলো। কেন না কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি দাতার সঙ্গে রোগীর রক্তের গ্রুপ ও টিস্যু টাইপিংয়ের যথেষ্ট মিল থাকতে হয়। গত ৫ই জুলাই এবিও ইনকমপ্যাটিবল কিডনি প্রতিস্থাপন (এবিওআই) পদ্ধতির সফল প্রয়োগে তার দেহে তার মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ নেফ্রোলজি টিম, ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. খুরশিদুল আলম ও অধ্যাপক ডা. সাজিদ হাসানের নেতৃত্বে ট্রান্সপ্লান্ট টিম, ব্লাড ব্যাংক স্পেশালিস্ট, অ্যানেসথেসিস্ট ও নার্সের সমন্বয়ে বিশেষ টিম এই ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ইতিমধ্যে ইমরান ও তার মা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় গেছেন এবং ভালো আছেন।
যে পদ্ধতিতে ভিন্ন ব্লাড গ্রুপের রোগীর প্রতিস্থাপন : কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে ‘প্লাজমাফেরেসিস’ পদ্ধতিতে রক্তের প্লাজমা বা রক্তরসকে রক্তকোষ থেকে আলাদা করা হয়। একটি ছাঁকনির মাধ্যমে বার বার ছেঁকে সেখান থেকে অ্যান্টিবডিগুলো আলাদা করা হয়। আর অ্যান্টিবডি আলাদা করলে অন্য রক্তের গ্রুপের কোনো ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকে না। ইমরান ফিরোজের এন্টিবডি ছিলো ১ : ১২৮ যা ব্ল্যাড এফেরেসিস মেশিনের মাধ্যমে ও কিছু ওষুধ প্রয়োগ করে ১ : ৮ এ নামিয়ে আনা হয়। পুরো প্রস্তুতি শেষ হতে সময় লাগে তিন সপ্তাহ। এরপরই ট্রান্সপ্লান্টের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, উন্নত বিশ্বে এই প্রক্রিয়ায় কিডনি ট্রান্সপ্লান্টে সাফল্যের হার প্রায় ৯৫ ভাগ। স্বাভাবিক ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের মতো তাদের ক্ষেত্রেও ইনফেকশন ও কিডনি রিজেকশন ছাড়া অন্য তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।
তবে ট্রান্সপ্লান্টের পর বিশেষ ফলোআপে থাকতে হয় কিছুদিন। উল্লেখ্য, দেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতিবছর সম্পূর্ণভাবে কিডনি বিকল হয় প্রায় ৪০ হাজার রোগী যাদের ৮০ শতাংশই মারা যায়। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে ৯৫ ভাগ হেমো ডায়ালাইসিস ও ২ থেকে আড়াই ভাগ সিএপিডি ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ২ হাজারের বেশি রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে যাদের সবই জীবিত এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে নেয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status