দেশ বিদেশ

গোলটেবিলে রাসিকের চার প্রার্থীর কাছে দাবি দীর্ঘমেয়াদি নগর পরিকল্পনা নিন

প্রতীক ওমর, রাজশাহী থেকে

২১ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

সকাল ১১টা। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের হলরুমে উপস্থিত চার মেয়র প্রার্থী। গোলটেবিল বৈঠক। রাজশাহী সিটিতে কেমন নির্বাচন চাই। এই শিরোনামের উপর আলোচনা। চারপাশে গোল হয়ে বসেছেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পর্যায়ক্রমে সবাইকে মাইক দেয়া হচ্ছে। প্রার্থীদের কাছে চাওয়া-পাওয়া, রাগ-অনুরাগ, অভিমান অনর্গল বলছেন বক্তারা। প্রার্থীরা সামনে থাকা নোট প্যাডে সবকিছু টুকছেন। সাধারণের কথা শেষ হলে জবাব দেবেন প্রার্থীরা। দীর্ঘমেয়াদি নগর পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন, গ্রীনসিটি, ক্লিন সিটি, শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আনা, রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, রাজশাহীর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য রেশনসহ নানা ধরনের পরিকল্পনা এবং দুর্গতির হাত থেকে বাঁচতে মেয়র প্রার্থীদের প্রতি অসংখ্য দায়িত্ব প্রদান করেন বক্তারা।
কথা বলেন, উইমেন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রোজেটি নাজনিন। তিনি বলেন, ‘আসছে নির্বাচনের যিনিই নগর পিতা হোন না কেন তার হাত দিয়েই রাজশাহীকে মডেল হিসেবে দেখতে চাই। রাজশাহীর কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে বাংলাদেশে অন্যকোথাও সে রকম নাই। সুতরাং যিনিই আমাদের মেয়র নির্বাচিত হোন না কেন তিনি যেন রাজশাহীকে বাংলাদেশের ম্যাপে বড় একটা জায়গায় পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেন। নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দেবেন এবং দিচ্ছেন নির্বাচিত হওয়ার পরে সেসব প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেভাবে উন্নয়নের দিকে এগুচ্ছে আমরা চাই আপনাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের চূড়ান্ত শিখায় পৌঁছবে। আর সরকার ঘোষিত ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে রাজশাহীকে এগিয়ে নিতে হবে। জনগণ কোনো কাজ করবে না। তারা আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। কাজ যা করার আপনাদেরকেই করতে হবে’।
কথা বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মী মনিরা রহমান। তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উদার সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। তিনি শংকা প্রকাশ করে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। যিনি আমাদের নগর পিতা নির্বাচিত হবেন তার কছে অনুরোধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য ভূমিকা রাখতে। সেইসঙ্গে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে অবাধ দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ আপনাদের নিতে হবে’।
আর্কিটেক্ট অধ্যাপক আসাদুজ্জামান তার ব্যক্তিগত চিন্তা উপস্থাপন করেন প্রার্থীদের কাছে। তিনি বলেন, ‘একটি নগরীকে মানুষের জন্য বাসযোগ্য করে তুলতে হলে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্প হাতে নিয়ে এগুতে হবে। নগরের রাস্তা-ঘাট আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়েই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি সম্ভাব্য মেয়রদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর আমাদের এই নগরী নিয়ে কমপক্ষে পঞ্চাশ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। রাজশাহীর সাধারণ মানুষের স্বার্থেই আপনাদের এসব তাজ করতে হবে’।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ছদরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী শহরকে ক্লিন সিটি বলা হয়। এটি আসলে এখন কেবলি মুখের বুলি। তিনি বলেন, রাজশাহী কোর্টের সামনে ময়লার এতোবড় স্তূপ কিভাবে দিনের পর দিন থাকতে পারে থাকে আমার বোধে আসে না। কোর্টের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতিদিন ময়লা ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে তালাইমারী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অসংখ্য জায়গায় ময়লার স্তূপ আছে। এগুলো ময়লা পরিষ্কারের জন্য প্রথমেই নির্বাচিত মেয়রকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ভোটের স্বচ্ছতা এবং ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কথা বলেন নতুন ভোটার নাছরিন আক্তার। তিনি, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমি কি আমার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দিতে পারবো? সেদিন ভোটের প্রচারণায় ককটেল হামলা হয়েছে। আমি কি ভোটের দিন নিরাপদে কেন্দ্রে যেতে পারবো? আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?
নাছরিনের কথার রেশ ধরে সুজন সভাপতি আহম্মেদ শফিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে। স্বচ্ছ ভোটের চিত্র সবার সমানে সরাসরি দেখানোর জন্য কেন্দ্রগুলোতে ক্যামেরা লাগানো হোক। শুধু যেখানে ভোটাররা সিল মারবেন সেই জয়গা ছাড়া অন্য সব জায়গা ক্যামেরার আওতায় আনা হোক। তাতে জোর করে কেউ সিল মারলো কিনা তা সবাই পরিষ্কারভাবে জানতে পারবে। কেউ কোনো প্রশ্ন তুলবে না’। সেই সঙ্গে বেকার তরুণদের কর্মমুখী ট্রেনিংয়ের উদ্যোগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া টেক্সটাইল মিল চালুর করার জন্য প্রার্থীদের কাছে জোর দাবি উত্থাপন করেন গোলটেবিল বক্তারা।
বক্তাদের এসব দাবির প্রেক্ষিতে ২০ দলীয় জোটপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমি রাজশাহীর উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিবেদিত করেছি। গত পাঁচবছরে মানুষের কাজ করতে গিয়ে নিজের পরিবার ছেলে-মেয়েকে একদিনের জন্য সময় দিতে পারিনি। রাত তিনটার সময়েও আমাকে ফোন রিসিভ করতে হয়েছে। কাজেই আমি উন্নয়নের পক্ষে। জণগণের পক্ষে। আমাকে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে সুযোগ দিন। তিনি এ সময় নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, আমাকে নগরীর কোথাও একটি পোস্টার লাগাতে দেয়নি। কয়েক জায়গায় লাগানোর দশ মিনিট পরেই আওয়ামী লীগ বাহিনীর ক্যাডাররা ছিঁড়ে ফেলে। তিনি আরো বলেন, শুধু আমার পোস্টার নয়, কাউন্সিলররাও কোথাও পোস্টার লাগানোর জায়গা পাননি। তিনি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করুন। এ দায়িত্ব আপনাদের। আমার এজেন্টরা যদি নিজের বাড়ি থেকে কেন্দ্রে যেতে না পারে নির্বাচনের আগের রাতে গ্রেপ্তারের জন্য হয়রানি করা হয় তাহলে আমি ভোট থেকে সরে দাঁড়াবো। তখন পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হবে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। জনগণ তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবে। আইশৃঙ্খলা বাহিনীও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলেছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমি গাজীপুর, খুলনার ভোটে যেসব অভিযোগ উঠেছে এমন অভিযোগ রাজশাহীতে হবে না। তিনি উপস্থিত বক্তাদের দাবিগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে নির্বাচিত হলে পর্যাক্রমে সবকিছু বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। জনগণের দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতি দেন জনসংহতি সমর্থিত প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) হাবিবুর রহমান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status