অনলাইন

রাইফার মৃত্যু:অবশেষে মামলা রেকর্ড করলো পুলিশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২০ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

রাইফা মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা এজাহারটি অবশেষে মামলা হিসেবে রেকর্ড করলেন চট্টগ্রাম মহানগর চকবাজার থানার পুলিশ। গতকাল বিকালে চকবাজার থানায় এ মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। মামলা নম্বর ০৮/১৮।

এর আগে গত বুধবার সকালে রাইফার বাবা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সদস্য ও সমকালের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খান নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালের চার চিকিৎসককে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন।

পুলিশ সেটা নথিভুক্ত করতে গড়িমসি করছিল। ফলে বৃহস্পতিবার বিকালে রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান শুক্রবারের মধ্যে এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না করলে শনিবার থেকে চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশনের হুমকি দেন।

আর এই হুমকির মুখে এজাহারটিকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানান, এজাহার মোতাবেক ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি ডা. লিয়াকত আলী ও কর্তব্যরত তিন চিকিৎসককে আসামি করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা হলেন- ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্রদেব। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন শিশু রাইফার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিল সরাসরি আর লিয়াকত আলী ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি। তাদের প্রত্যেকের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ম্যাক্স হাসপাতালে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় ২ বছর চার মাস বয়সী শিশু রাইফার মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, দুদিন পর শুক্রবার বিকালে এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখন আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার দেখতে চাই।

প্রসঙ্গত, সাংবাদিক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮শে জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯শে জুন রাতে তার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা। পরে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি এ ঘটনার তদন্ত করে।
সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ম্যাক্স হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। তাদের মধ্যে দেবাশীষ ও শুভ্রকে ইতিমধ্যে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানান ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সিভিল সার্জনের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই তাদের ছিল না।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদান করেননি বলে শিশুর পিতা-মাতা যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যাহা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।

আর সেই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ৮ই জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দেন বলে জানান মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরীক্ষিত চৌধুরী।
এদিকে বিতর্কিত ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়মের দায়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে ৮ই জুলাই রোববার চালানো এই অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে ডা. দেওয়ান মাহমুদ মেহেদি হাসান, ওষুধ প্রশাসনের প্রতিনিধি গুলশান জাহানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাক্স হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবে যথেষ্ট দক্ষ জনবল নেই। বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে এইচএসসি পাস লোকজন চাকরি করছে। এখানে মিনিমাম ¯œাতক ডিগ্রিধারী বা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্নদের কাজ করার কথা। এখানে বায়োকেমিস্ট ও মাইক্রোবায়োলজিস্টও নেই। একটি হাসপাতাল চালাতে হলে নমুনা পরীক্ষার নিজস্ব ব্যবস্থা থাকার নিয়ম থাকলেও ম্যাক্সে সে নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন স্যাম্পল কালেকশন করে তারা চট্টগ্রাম ও দেশের বাইরের বিভিন্ন ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের নামে রিপোর্ট দেয়। অনেকটা কমিশন এজেন্টের মতো তারা কাজ করে। এসব অনিয়মের কারণে ম্যাক্স হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি অনিয়ম ও ত্রুটি সারাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status