প্রথম পাতা

লিটনের পক্ষে খুলনার মেয়র বুলবুলের পক্ষে গয়েশ্বর

আসলাম-উদ-দৌলা/প্রতীক ওমর, রাজশাহী থেকে

২০ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

চারদিকে মাইক বাজছে। ধ্বনিত হচ্ছে প্রার্থীদের গুণগান। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। জোরেশোরেই রাজশাহীতে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা।  ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহীর মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের লিটনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন সদ্য নির্বাচিত খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি পৃথকভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোট চাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করছেন। অপরদিকে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বৃহস্পতিবার  নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লক্ষ্মীপুর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়  বুলবুলকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা করেছেন।  এদিকে নির্বাচনের সপ্তাহ দেড়েক বাকি থাকতেই চুলচেরা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রাজশাহীর ভোটাররা তাদের হিসাব মেলাতে নানাভাবে ভাবছেন। তবে স্বাভাকিভাবে ভোট দিতে এবং নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টা নিয়েও চিন্তায় আছে অনেক ভোটার। তাকে এখানকার ভোটাররা গেল দুই সিটির ভোটের প্রেক্ষাপটে রাজশাহীতে পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। তারা নিজের ভোট নিজে বুথে গিয়ে প্রদান করতে চায়। যদিও প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন দৃঢ়তার সঙ্গেই বলছে ভোট নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হবে। এজন্য যা যা করা দরকার তার সবই করা হবে।

এদিকে গেল ১৭ তারিখে বিএনপির প্রচারণায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দলটির নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্টের আশঙ্কা করছে তারা। সেই সঙ্গে তারা দৃঢ়ভাবেই বলছে সাধারণ মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের পরিবেশ পায় তাহলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত। বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই নির্বাচনের কমপক্ষে সাত দিন আগে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। গতকাল রাজশাহীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সেনা মোতায়নের দাবি তোলেন। এসময় তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বিঘ্নে ভোটারগণ যাতে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারেন সেই নিশ্চয়তা প্রশাসনকেই দিতে হবে। সাধারণ ভোটারদের আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মাইকিং করতে বাধা প্রদান করছে। নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মীদের বাধা এবং গালিগালাজ করছে। এই অবস্থায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আইশৃঙ্খলাবাহিনীর কিছু সদস্যও বিএনপির লোকজনকে হুমকিধমকি দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে মাঠে নামেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তালুকদার রুহুল কুদ্দুস দুলু। কয়েক দিন অবস্থান করে গতকাল সন্ধ্যায় তিনি রাজশাহী ছেড়েছেন। এখন রাজশাহীতে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লক্ষ্মীপুর এলাকায় কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। এসময় সঙ্গী হিসেবে হেভিওয়েট নেতা সাবেক মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন উপস্থিত ছিলেন। ওই এলাকায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালান তারা।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। বাংলাদেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সরকারে  এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠুৃ ও অবাধ হবে না। তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান। সেইসঙ্গে তিন সিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ বিভাগের সদস্যদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। এর ব্যত্যয় ঘটলে সরকারকেই এর দায়ভার বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন এই নেতা।

বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, যতই বাধা আসুক না কেন ধানের শীষে প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। ধানের শীষের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে উল্লেখ করে সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে ধানের শীষে ভোট প্রদান করে পুনরায় মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

পরে চন্ডীপুর এলাকা থেকে মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন প্রচারণা শুরু করেন।

কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি, বাধা-বিঘ্নের মধ্যেও কৌশলী প্রচারণায় বিএনপির তৃণমূলের  নেতাকর্মীদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী করছে। শেষ পর্যন্ত মান ভেঙে মাঠে নেমেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নিজেই কোনো শীর্ষ নেতা ছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। বেলা ১১টায় নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দাশপুকুর মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর দাশপুকুর বউবাজার, পূর্বপাড়া, বহরমপুর ও বন্ধগেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। পাড়া-মহল্লার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট চান এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শান্তি-সম্প্রীতির শহর রাজশাহীতে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মাধ্যমেই নির্বাচনের দিন পর্যন্ত পার করতে চাই। সেজন্য আমি সেনা মোতায়নের পক্ষপাতি নই। আর বিএনপির প্রার্থীকে বলছি, এই জাতীয় দাবি না করে, বরং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিয়ে কীভাবে ভোটারদের মন জয় করা যায়, সেই কাজ করেন। তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকবে।
উন্নয়নের বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী বৈতরণী বার হতে চান আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। কোনো অপপ্রচার-প্রপাগান্ডায় গা ভাসাবে না। মেয়র হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অক্লান্ত পরিশ্রম ও জনগণের প্রতি ভালোবাসা তাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে নিয়ে গেছে। এর সঙ্গে যখন খুলনার মেয়র প্রচারণায় যুক্ত হন তখনই ভোটাররাসহ নেতাকর্মীরাও উৎফুল্ল-উজ্জীবিত হয়। এটা স্বাভাবিক।’

এদিকে খুলনা মেয়রের নির্বাচনী প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ‘খুলনা মেয়র এখনো দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি। তাই তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কিংবা রাজশাহীতে অবস্থানের কারণে কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম রাজশাহীতে এসে পৌঁছেছেন। তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে সংবর্ধনা দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্র্মীরা। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্র্থীর জন্য গণসংযোগ শুরু করেন।
খুলনা মেয়র তার নিকট আত্মীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এহসানুল হুদা দুলুর কুমারপাড়ার বাড়িতে উঠেছেন। তিনি আগামী ২৫শে জুলাই পর্যন্ত রাজশাহীতে অবস্থান করবেন।

এহসানুল হুদা দুলু মানবজমিনকে জানান, খুলনা মেয়র আত্মীয়তার কারণে রাজশাহীতে এসেছেন, একই সঙ্গে সিটি নির্বাচনে জাতীয় নেতার ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন। যেহেতু তিনি এখনো খুুলনা মেয়রের দায়িত্ব বুঝে পাননি। তাই নির্বাচনী প্রচারণার কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না বলে জানিয়েছেন খুলনা মেয়র।

খালেদ গতকাল সকালে নিউমার্কেট এলাকায় গণসংযোগ চালান। পরে দুপুরে তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনে যান। এদিকে নির্বাচনী প্রচারণা শক্তিশালী করতে বাইর থেকে আসা নেতৃবৃন্দ ভোটারদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করেছে বিএনপি।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো প্রতিদিনই নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু না কিছু উদ্বোধন করে যাচ্ছেন। খুলনা মেয়র প্রচারণায় এসেছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধান কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করছে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status