শেষের পাতা

কূটনীতিকদের ব্রিফিং

কোটা আন্দোলন নিয়ে দূতাবাসগুলোর বিবৃতিতে অসন্তোষ

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২০ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

কূটনৈতিক রিপোর্টার: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের বিবৃতিতে সরকারের তরফে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিভিন্ন দেশের অর্ধশতাধিক কূটনীতিককে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ব্রিফিংয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভিন্ন দেশের দেয়া বিবৃতির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। ব্রিফিং শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানোÑ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রবর্তনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, কোটার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরও একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কোটা আন্দোলনকে হাইজ্যাক করেছে। তারা ক্যাম্পাসগুলোতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। কোটা সংস্কারের নামে যে আন্দোলন চলছে তা সহিংতাপূর্ণ এবং এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। নৈরাজ্যকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়ি ভাঙচুর ও তার পরিবারের ওপর হামলা করে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের দূরভিসন্ধি ছিল। তাদের লক্ষ্য দেশের চলমান স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে নস্যাৎ করা। এর আগে নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াত-বিএনপি যে সহিংসতা করেছিল কোটা আন্দোলনকে ঘিরেও একই আলামত দেখা গেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের সেই সব আক্রমণ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দুটি রেজুলেশন পাস করার মধ্যদিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ও বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দেশের সাবর্জনীন মানবাধিকার সুরক্ষা এবং উন্নতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকারবদ্ধ। মন্ত্রী জেনেভায় তৃতীয় ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তার উল্লেখ করে বলেন, সেখানে ১০৫টি দেশে অংশ নিয়েছিল এবং তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং উন্নতিকরণের প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক উন্নয়নে যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে যা জাতিসংঘ মহাসচিব ‘মিরাকল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন সেটিও কূটনীতিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে বাংলাদেশ যে ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি সেটি তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, আমরা তাদের নিরাপদে ফেরত পাঠাতে চেষ্টা করে যচ্ছি। মন্ত্রী তার সমাপনী বক্তৃতায় কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে বলেনÑ আমরা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, বহু-জাতিগোষ্ঠী, সংস্কৃতি ও ধর্মের একটি শান্তি ও সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ার জন্য সংগ্রাম করছি। এদিকে ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পশ্চিমা কূটনীতিকরা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সেখানে মূলত কোটা প্রশ্নে দূতাবাসগুলোর তরফে যে বিবৃতি এসেছে তার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। তারা প্রায় অভিন্ন ভাষাতে সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং গৃহীত অর্জনগুলোর প্রশংসা করেন। তবে তারা যে কোটা নিয়ে বিবৃতি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেননি সেটিও বুঝানোর চেষ্টা করেন। পশ্চিমা এক কূটনীতিক বলেন, সরকারের অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু কোটা আন্দোলন নিয়ে যেসব ঘটনাগুলো ঘটেছে তা সরকারের সামগ্রিক ইমেজের সঙ্গে যায় না। সেখানে সহিংস ঘটনাগুলো অবশ্যই নিন্দনীয়। এসব ঘটনাকে আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে খতিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ওই কূটনীতিক বলেনÑ যারা অপরাধী তাদের শাস্তি হোক। তবে প্রত্যেকের অধিকার যেন সমুন্নত থাকে। সার্বজনীন মানবাধিকারের যে নীতি এবং মূল্যবোধ সেটির প্রতি সম্মান প্রদর্শনেই দূতাবাসগুলো বিবৃতি দিয়েছে বলেও জানান তারা। সূত্র মতে, বিফিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছি না। কিন্তু কোটা আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটছে তা তদন্ত হওয়া জরুরি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের চলমান ইস্যুগুলো বিশেষ করে কোটা আন্দোলন এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিষয়ে কূটনৈতিক সম্প্রদায়কে জানাতে ওই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানান, সেখানে রাজনীতি, আসন্ন নির্বাচনসহ সম-সাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গেও কথা হয়। সরকারের তরফে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কূটনীতিকরা সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচন দেখার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোটার বিন্যাসসহ বিস্তারিত তথ্য কূটনীতিকদের জানালেন মন্ত্রী: এদিকে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানানÑ কোটার পদ্ধতির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী কূটনীতিকদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। বলেনÑ সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমির প্রেক্ষাপটে মানুষদের অংশগ্রহণমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭২ সালে কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুযোগ সৃষ্টির জন্য নারী, প্রতিবন্ধী নৃৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য কোটা চালু করা হয়েছিল বলেও জানান মন্ত্রী। তারপরও বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বেশিরভাগ নিয়োগ মেধা তালিকা থেকে হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রী পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন- ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ৩৩তম বিসিএসে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগের হার ছিল ৭৭.৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে হওয়া ৩৫তম বিসিএসে এটা ছিল ৬৩.৬৯ শতাংশ। আর ২০১৬ সালের ৩৬তম বিসিএসে নিয়োগ হয় ৭০.৩৮ শতাংশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status