বাংলারজমিন

প্রবীরের আগে স্বপনকেও খুন করে পিন্টু

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত প্রবীর ঘোষ হত্যার মূল ঘাতক পিন্টু দেবনাথ ও তার সহযোগী বাপনকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। ২১ মাস আগে স্বপন অপহরণ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে বুধবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত একটি চরিত্র এখন পিন্টু দেবনাথ। দুজন জ্বলজ্যান্ত মানুষকে ফিল্মি স্টাইলে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। একজনের লাশ ব্যাগে ভরে ফেলে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যায়। আরেকজনের লাশ রেখে দেয় নিজ বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে। ট্যাংকে লাশ রেখেই দুই তলার ফ্লাটে ২১ দিন ঘুমিয়ে ছিলেন পিন্টু। আর তার গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে বেরিয়ে এসেছে এর আগেও আরেক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার ঘটনা। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীর স্বামী ও ছেলের মৃত্যুর পেছনেও হাত থাকতে পারে পিন্টুর। এসব ঘটনা যোগ করলে হতে পারে ৪ খুনের ঘটনার নায়ক পিন্টু। এসব ঘটনায় নাম এসেছে দুজন নারীর। একজনের নাম শীলা রানী ও অপরজন রত্মা রানী চক্রবর্তী। দুজনের মধ্যে রত্মা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর শীলা গেছেন পালিয়ে। সেটাও গত ৯ই জুলাই পিন্টু দেবনাথ গ্রেপ্তারের পর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেপ্তারকৃত রত্মা রানীর বাড়ি শহরের মাসদাইর এলাকাতে। সে ছিল পিন্টু দেবনাথের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের একজন। আর পিন্টুর হাতেই খুন হওয়া স্বপন কুমার সাহার বান্ধবী ছিল রত্মা। কয়েক বছর আগে পিন্টুর সঙ্গে রত্মাকে পরিচয় করিয়ে দেন স্বপন। পরে ধীরে ধীরে স্বপনের সঙ্গে রত্মার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পরে রত্মার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়ে পিন্টু দেবনাথের।
জানা গেছে, কালীরবাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, পিন্টু দেবনাথ ছিল প্রচন্ড নারী আসক্ত। সে কারণে সে বিয়ে করেনি। বিভিন্ন স্থানে নারীদের সঙ্গে সময় কাটাতো সে। ছিল মারাত্মক পরকীয়ায় আসক্ত। এ কারণে শহরের আমলাপাড়া ও কালীরবাজার স্বর্ণপট্টিতে সে ছিল ‘লেডিকিলার’ হিসেবে পরিচিত। কালীরবাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পিন্টু দেবনাথ প্রায় ২০ থেকে ২২ বছর যাবৎ এই স্বর্ণপট্টিতে রয়েছেন। তার বাড়ী কুমিল্লার চন্দনপুর। নারায়ণগঞ্জে তিনি একা আসেন এবং সুচতুর বুদ্ধিতে আজ দুই দোকানের মালিক এবং কোটিপতিও বটে। স্বর্ণপট্টি’র স্বর্ণের নকশা মাস্টার খ্যাত প্রয়াত অপু’র সহকারী ছিলেন পিন্টু দেবনাথ। দেখতে সুদর্শন পিন্টু দ্রুত নকশা কাজ বুঝে যাওয়ায় অপু তাকে দিয়ে অনেক স্বর্ণের গয়না তৈরি কাজ করাতেন। স্বল্পভাষী ছিলেন পিন্টু। কিন্তু তার কথায়ও অনেক সময়ে টনক নড়ে যেত সহকর্মীদের। পিন্টু আমলাপাড়া এলাকাতে রাশেদুর ইসলাম ঠান্ডু মিয়ার যে ফ্লাটে থাকেন এক সময়ে ওই ফ্লাটেই থাকতেন অপু। প্রায় পনের বছর আগে অপু রায় পরলোক গমন করলেও সে বাড়িতেই অপু রায়ের স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে থেকে যায় পিন্টু। পিন্টু থাকার সময়েই পরকীয়ার খবর রটে যায়। ঘটনা ব্যাপক জানাজানি হলে শীলা রানীকে শহরের টানবাজারে ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেয় পিন্টু। এতে বাধ সাধে অপু কর্মকারের ছোট ছেলে রনি। কিছুদিন পরে রনিও মারা যায়। তখন পিতা পুত্রের মৃত্যুর বিষয়টি প্রচার চালায় ‘ক্যানসার’ বলে। আর নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে তাতে জোরালো সমর্থন দেয় সুন্দরী পরকীয়া প্রেমিকা দুই সন্তানের জননী শীলা রানী।  যে এখনো পর্দার আড়ালেই রয়েছে।
শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের খাস কামরায় প্রবীর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পিন্টু দেবনাথের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সেখানে সে প্রবীর ঘোষকে একা হত্যা করে ৭ টুকরা করার ঘটনা স্বীকার করে। এরপর আরো তদন্তের জন্য পিন্টুর কর্মচারী ও প্রবীর হত্যাকাণ্ডে তার অন্যতম সহযোগী বাপেন ভৌমিককে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। মঙ্গলবার রিমান্ডের শেষ দিনে বাপেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দিতে প্রবীর হত্যাসহ ২১ মাস আগে অপহৃত স্বপন কুমার সাহা হত্যাকাণ্ডের কথাও বেরিয়ে আসে। স্বপনকেও পিন্টু তার নিজ বাড়িতে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। গত ১৮ই জুন রাতে নিখোঁজ হন কালিরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। নিখোঁজের ২১ দিন পর ৯ই জুলাই রাত ১১টায় ঘাতক পিন্টুর দেয়া তথ্যমতে শহরের আমলাপাড়া এলাকার পিন্টু যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সেই ৪ তলা ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রবীরের লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে প্রায় দেড় বছর আগে নিখোঁজ কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহার নিখোঁজের আসল রহস্য।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status