দেশ বিদেশ

আজাদের ওয়ার্ডে টিলাগড়ে ইভিএম চান আরিফুল হক

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

সিলেটে একক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকা আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদের এলাকা টিলাগড়ে ইভিএম চান বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল সিলেট সিটি করপোরেশনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে তিনি এ দাবি জানান। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এবার সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আরিফের এই দাবি আদৌ পূরণ করা যাবে কী না- এ নিয়ে সন্দিহান নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কর্মকর্তারা। আরিফের দাবির প্রেক্ষিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামান বলেন- কমিশনের কাছে তিনি আরিফুল হক চৌধুরীর প্রস্তাব প্রেরণ করবেন। আর সেটি সিদ্ধান্ত আসবে ঢাকা থেকে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড হচ্ছে নগরীর পূর্বপাশের টিলাগড় এলাকা। সিটি করপোরেশনের সিনিয়র কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের নির্বাচনী এলাকা এ ওয়ার্ড। আজাদ মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। এবার আজাদ তার ওয়ার্ডে বিনাভোটে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী নেই। আরিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আশঙ্কা করে বলেন- ‘এই ওয়ার্ডে ভোট জালিয়াতি সহ নানা ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য তিনি এ ওয়ার্ডের ভোট গ্রহণ পদ্ধতিতে ইভিএম চান।’ ২০১৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করেছিল নির্বাচন কমিশন। এবার সেটি যাচ্ছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ আওয়ামী লীগের হলেও সিটি করপোরেশনের বিগত পরিষদে তিনি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছাকাছি ছিলেন। অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মেয়র হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরী সিনিয়র কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের পরামর্শ নেন। আর আজাদও মেয়রকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেন। কিন্তু তফশিল ঘোষণার পর থেকে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ড হচ্ছে আওয়ামী লীগের অন্যতম ভোটব্যাংক। এখানে সংখ্যালঘুদের ভোট বেশি। পাশাপাশি এমসি কলেজকেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের ভোট বেশি। ফলে আরিফ আশঙ্কা করছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি নৌকার পক্ষে একতরফাভাবে প্রভাব খাটাবেন। এ কারণে তিনি সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে ওই ওয়ার্ডে ইভিএম চান। এদিকে- আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে আরো নানা অভিযোগ করেছেন। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানান- তার পোলিং এজেন্টদের তালিকা চাওয়া হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। নানা ধরনের হুমকি অব্যাহত রয়েছে। ফলে নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আশংকা করছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জানান- সিলেটের মাটিতে কোনো অন্যায় জনতা মেনে নেবে না। সামনে জাতীয় নির্বাচন। সুতরাং সিটি নির্বাচনে কোনো ধরনের কারসাজি হলে কেউ মেনে নেবে না। রিটানির্ং কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বাইরে এসে সাংবাদিকদের কাছে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- নির্বাচনে ‘সিভিল মার্শাল’ল চলছে। এই সিভিল মার্শাল ল’ এর বাইরে এসে নির্বাচন কমিশন কতটুকু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করে সেটি এখন দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। আরিফুল হক চৌধুরী অভিযোগের পাহাড় মুখে বলে বেড়ালেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নিশ্চুপ। তিনি বলেন- ‘আমি কখনো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দেই না। কিংবা আওয়ামী লীগ কখনো অভিযোগ দেয়ার মতো কোনো কাজ করে না। বিএনপির সংস্কৃতিই হচ্ছে নালিশ দেয়া। আর সেটি তারা করেও যাচ্ছে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের আশঙ্কায় বিএনপির প্রার্থী এখন নানা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। সে কথাগুলো ভোটাররা গ্রহণ করছে না। তার কারণ- ভোটাররা দেখছে আমরা কী করছি। আমরা সব প্রার্থী মিলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। আর কেবলমাত্র বিএনপির প্রার্থী সবখানে অনিয়ম দেখছেন।’
পৃথক দুটি অভিযোগ: সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় প্রকাশ্যে আলোকসজ্জা সম্বলিত কাঠের তৈরি নৌকা রাখায় নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আলী আহমদ বলেন, নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ আল্লাহু পয়েন্টের কাছে একটি মবিল-পেট্রোল দোকানের সামনে আলোকসজ্জা সম্বলিত কাঠের তৈরী নৌকা গত কয়েক দিন থেকে রাখা হয়েছে, যা নির্বাচন আচরণ বিধি অনুযায়ী স্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬, ১৭ ও ১৮নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হোসেনকে ফোন দিয়ে এ বিষয়টি জানানো হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আলী আহমদ বলেন, জনসম্মুখে নৌকার পক্ষে এসব অপরাধের একাধিক অভিযোগ দায়ের করলেও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখনো নেননি। ফলে তারা প্রতিদিন আচরণ বিধি লঙ্ঘন করার সাহস পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা আইনসম্মত নয়। এটা সংবিধান ও নির্বাচন আচরণবিধি পরিপন্থি। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন চলছে এবং অব্যাহতভাবে গণ-গ্রেপ্তার করার হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সাদা পোশাকধারীর বেশে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে রাতে নেতাদের বাড়িতে গিয়ে বিনা ওয়ারেন্ট ও মামলাবিহীন বিএনপি নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে এবং আমাদের এজেন্টদের ভয় দেখাচ্ছে। যার ফলে কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না। এসব ঘটনা আমাদের দেশে আইন সম্মত নয় ও মানবাধিকার পরিপন্থি। অন্যদিকে অপর এক অভিযোগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার শুরুতেই বার বার আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা দিনদিন অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠছে। মঙ্গলবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভ্যন্তরে বিশাল স্টেজ, ব্যানার, কয়েক শতাধিক চেয়ার ও বেশ কয়েকটি মাইক বাজিয়ে নৌকার পক্ষে সমাবেশ করছে। যা স্পষ্ট নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন। এ ছাড়া ওসমানী হাসপাতাল একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। এখানে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এখানে মাইক বাজিয়ে জনসমাবেশ করা বেআইনি। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রকাশ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে বলে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণাদি আছে। বিষয়গুলো সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানান তিনি।   
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status