বাংলারজমিন
হাতিয়ার নৌরুট
একটি সি-ট্রাক বন্ধ, আরেকটি লক্কড়ঝক্কর, ভোগান্তি
নাসির উদ্দিন বাদল, নোয়াখালী থেকে
১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নৌ-রুটের দুইটি সি-ট্রাকের মধ্যে চরচেঙ্গা-চেয়ারম্যানঘাটের সি-ট্রাকটি গত সাত মাসেরও বেশি সময় বন্ধ। প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর সপ্তাহ খানেক আগে সচল হওয়া অপর সি-ট্রাকটিও লক্কড়ঝক্কর। ফলে এই রুটে জেলা সদরে যাতায়াতকারী দ্বীপের বাসিন্দারা সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যাদের অনেকে বাধ্য হয়ে উত্তাল নদীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, হাতিয়া থেকে জেলা সদরে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য দুইটি সি-ট্রাক রয়েছে। এর একটির নাম আবদুর রব সেরনিয়াবাত, যেটি হাতিয়ার চরচেঙ্গা-চেয়ারম্যানঘাট রুটে চলাচল করতো। আর অপর সি-ট্রাকটি হলো শেখ ফজলুল হক মনি। এটি চলাচল করতো হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট-নলচিরা নৌ-রুটে। এই দুইটি রুটে সি-ট্রাকে চড়ে গড়ে প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার যাত্রী হাতিয়া যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে চরচেঙ্গা-চেয়ারম্যানঘাট রুটের সি-ট্রাক আবদুর রব সেরনিয়াবাত। আবার নলচিরা-চেয়ারম্যানঘাট রুটের শেখ ফজলুল হক মনি সি-ট্রাকটিও দুই মাসের মতো বন্ধ থাকে। গত সপ্তাহ থেকে সেটি চালু হলেও লক্কড়ঝক্কর। রঙ করে ছেড়ে দিয়েছে, চালু হওয়ার দুই দিন পর পুনরায় নষ্ট হয়। পরে আবার চালু হয়। সব সময় এভাবেই সি-ট্রাক দুইটি চলাচল করে। সি-ট্রাকের এমন অবস্থা হওয়ায় হাতিয়ার লাখ লাখ মানুষ বেশিরভাগ সময়ই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে যাতায়াত করছেন। বিআইডব্লিউটিসির সার্টার এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, চরচেঙ্গা-চেয়ারম্যানঘাট রুটে চলাচলকারী আবদুর রব সেরনিয়াবাত নামের সি-ট্রাকটি যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে প্রায় সাত মাস পূর্বে বিআইডব্লিউটিসির নারায়ণগঞ্জ ডক-ইয়ার্ডে পাঠানো হয়, যা অদ্যবধি মেরামত হয়ে আসেনি। এই সময় ওই রুটের যাত্রীদের বেশিরভাগই নলচিরা-চেয়ারম্যাঘাট রুটে চলাচলকারী সি-ট্রাক শেখ ফজলুল হক মনির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কিন্তু তাদের শেষ ভরসাটুকুও বন্ধ হয়ে যায় ১৪ই এপ্রিল। প্রায় দুই মাস পরে এজেন্টের পক্ষ থেকে ২২ লাখ টাকা খরচ দিয়ে মেরামত করে ঈদুল ফিতরের সময় পুনরায় চালু করা হয়েছে। অথচ এজেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ছিল কোনো প্রকার ত্রুটি হলে তা মেরামত করবে বিআইডব্লিউটিসি। নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী স্নেহা মানবজমিনকে বলেন, তার বাড়ি হাতিয়ার জাহাজমারা এলাকায়। সি-ট্রাক বন্ধ থাকায় জরুরি পারিবারিক কাজেও তিনি হাতিয়া যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। রমজান মাসে কলেজ বন্ধ হলেও নদী উত্তাল হওয়ায় ভয়ে তিনি বাড়ি যাননি। তাকে ঈদ করতে হয়েছে মেসে। তবে, অনেকেই প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে মেঘনা পার হচ্ছেন বলে জানান তিনি। সরজমিন গেলে আবদুর রহিম, শেখ মোহাম্মদ হাফেজ, নজির আহমদসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, বর্তমানে বর্ষা মৌসুম চলছে। সাগর এখন সব সময় উত্তাল। এর মধ্যে সি-ট্রাক নেই। যা একটি আছে তাও দিনে দুই বার যাতায়াত করে। ফলে প্রতিদিনই নানা কাজে যাতায়াত করা হাতিয়ার হাজার বাসিন্দা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে যাতায়াত করছে। আবার ট্রলারেও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তাদের অভিযোগ, ট্রলার মালিকরা বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষকে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সি-ট্রাক বন্ধ রাখে। এতে লাভবান হয় তারা। আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাজার হাজার বাসিন্দাকে। সি-ট্রাকের সার্টার এজেন্ট গোলাম মাওলা বলেন, আবদুর রব সেরনিয়াবাত নামের সি-ট্রাকটি প্রায় সাত মাস পূর্বে নারায়ণগঞ্জের সোনাচোরা ১ নম্বর ডক-ইয়ার্ডে নেয়া হয়। অদ্যবধি সি-ট্রাকটির মেরামত শেষ হয়নি। গত দুই মাস পূর্বে পুনরায় শেখ ফজলুল হক মনি নামের সি-ট্রাকটিও মেরামতের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার নিজ তহবিল থেকে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি মেরামত করে ঈদের সময় পুনরায় চালু করা হয়। তবে, কবে নাগাদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সি-ট্রাকটি সচল করা হবে তা বিআইডব্লিউটিসি থেকে তাকে নিশ্চিত করেনি। জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোপাল চন্দ্র মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, আবদুর রব সেরনিয়াবাত নামের সি-ট্রাকটি বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি বন্ধ রয়েছে। তবে, আগামী কোরবানির ঈদের আগেই সি-ট্রাকটি মেরামত করে যাত্রীদের জন্য দেয়া হবে।