শেষের পাতা

নবীগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতার ইভটিজিং, প্রতিবাদ করায় অধ্যক্ষের ওপর হামলা

স্টাফ রিপোর্টার, নবীগঞ্জ থেকে

১৮ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

নবীগঞ্জে বহিরাগত বখাটে ছাত্রলীগ নেতার ইভটিজিংয়ের কবল থেকে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের জনৈক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ, অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান গুরুতর আহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে  ভর্তি হয়েছেন। গতকাল দুপুরে নবীগঞ্জ মহাবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ইভটিজিংকবলিত শিক্ষার্থী ও ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের আরেক ছাত্রী আহত হয়। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক ইভটিজিং এবং কলেজ অধ্যক্ষকে আহত করার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। এ সময় শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এ নিয়ে কলেজ পাড়ায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও কলেজ সূত্র জানায়, শহরের পৌর এলাকার মদনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দ্বীপন আহমদ মুন্না অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের জনৈক ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ইভটিজিং (উত্ত্যক্ত) করে আসছিল। এ ঘটনা ওই শিক্ষার্থীর তরফ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় বখাটে ছাত্রলীগ নেতা দ্বীপন আহমদ মুন্না। গতকাল দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ওই ছাত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক মোবাইলে সেলফি তোলার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেনের নিকট অভিযোগ দেয়ায় মুন্না তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। পরে মুন্নার পরিবার ওই কলেজছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করে বিকালে অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে যান। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে অনার্স পরীক্ষা চলায় পরিদর্শনে যাওয়ার পথে বখাটে মুন্নার নেতৃত্বে কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদের গলায় ও হাতে ছুরিকাঘাত করে বখাটেরা।

এ সময় অধ্যক্ষকে বাঁচাতে কলেজ দপ্তরি মজিদ উল্লার ছেলে ফয়জুর রহমান এগিয়ে এলে সেও ছুরিকাঘাতের শিকার হয়। প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে আহত হয় অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী চৈতী। এ সময় পরীক্ষা হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এলে মুন্না দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। তবে তার সহযোগী একই গ্রামের জলফু মিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবিরকে আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা কলেজ সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। ফলে রাস্তার উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র কলেজের অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী, প্রভাষক ফজলে এলাহী ফরহাদ, দুদু মিয়া প্রমুখ। বক্তারা বলেন, নবীগঞ্জের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। বখাটে মুন্না অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যেই ছুরিকাঘাত করেছিল। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে কলেজ দপ্তরি ফয়জুর রহমানের হাতের রগ কেটে গেছে।

সার্বিক বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম আতাউর রহমান বলেন, অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ওদিকে, আলোচিত ঘটনার খবর পেয়ে কলেজ অধ্যক্ষসহ আহতদের দেখার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু, পৌর মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক অলিউর রহমান সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে বলেন, কলেজের ইতিহাসে বখাটেদের তাণ্ডব নজিরবিহীন। আলোচিত ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status