খেলা

রিভিউ

রাশিয়া বিশ্বকাপই কি ইতিহাসের সেরা?

স্পোর্টস ডেস্ক

১৮ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

বিশ্বকাপের ২১টি আসর দেখলো ফুটবলবিশ্ব। সবশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপ শিহরণ জাগিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। প্রতি আসর শেষেই ফিফা সভাপতি বলেন, আমরা সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ দেখলাম। এবার জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর কথায় তার ব্যতিক্রম ছিল না। আসলেই কি রাশিয়া বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ? অন্তত পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে এই টুর্নামেন্টকে সর্বকালের সেরা বলতে পারেন! এছাড়াও নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে রাশিয়া বিশ্বকাপ। নাটকীয়তা, উত্তেজনা ছিল গ্রুপ পর্ব, নকআউট পর্ব এমনকি ফাইনালেও। প্রযুক্তির ব্যবহারও দারুণ প্রভাব ফেলে এবারের আসরে। চলুন রাশিয়া বিশ্বকাপের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক দেখে নেয়া যাক...
নাটকীয়তা আর শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচের দিক থেকে হতাশ করেনি ২০১৮ বিশ্বকাপ। এবারের আসরের দ্বিতীয় দিনেই স্পেন ও পর্তুগালের মধ্যকার ৩-৩ গোলের রোমাঞ্চকর ড্র দেখেন দর্শকরা। আসরের অন্যতম ক্লাসিক ম্যাচ এটি। শেষদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দর্শনীয় ফ্রি-কিকে ১ পয়েন্ট নিশ্চিত করে পর্তুগাল। মিশরের বিপক্ষে উরুগুয়ের ৮৯ মিনিটের জয়সূচক গোল, ইরানের বিপক্ষে ৯৫ মিনিটের মরক্কোর আত্মঘাতী গোল কিংবা সুইডেনের বিপক্ষে জার্মানির শেষ মিনিটের গোল ছড়িয়েছে নাটকীয় জয়ের রোমাঞ্চ। সব মিলিয়ে ৯০ মিনিট বা ইনজুরি সময়ে ৯টি জয়সূচক গোল দেখেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। যা একটি বড় রেকর্ডও। অতীতের যে কোনো আসরের চেয়ে বেশি এমনকি ১৯৯৮ থেকে পাঁচ আসর মিলিয়ে মাত্র একটি কম। এবার ৯০ মিনিট বা ইনজুরি সময়ের হার এড়ানো গোলে ড্র হয় চারটি ম্যাচ।
বড় দলগুলোর সঙ্গে ছোট দলের ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। এবার অনেক বড় দলই আগেভাগে বিদায় নেয়। ফেভারিট তত্ত্ব এবার কাজ করেনি। গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ার লজ্জায় ডোবে ২০১৪ আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। শেষ ষোলো রাউন্ডে বাদ পড়ে স্পেন ও আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাড়ির পথ ধরে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বে মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জার্মানির হার, আইসল্যান্ডের সঙ্গে আর্জেন্টিনার ড্র, জাপানের বিপক্ষে কলম্বিয়ার হার, ইরানের সঙ্গে পর্তুগালের ড্র ও মরক্কোর বিপক্ষে স্পেনের হার এড়ানো চোখে আঙুল দেখিয়ে দেয় ছোট দলগুলোকে বলেকয়ে হারানোর দিন শেষ। টুর্নামেন্ট যত গড়িয়েছে ততোই দলীয় ব্যবধান কমে আসার প্রতিফলন দেখা গেছে। নকআউট পর্বে স্পেনকে টাইব্রেকারে বিদায় করে রাশিয়া। জাপানের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে বড় বাঁচা বাঁচে বেলজিয়াম। এবারের বিশ্বকাপকে আনপ্রেডিকটেবল বললেও ভুল হবে না। নইলে ক্রোয়েশিয়া যে ধীরে ধীরে ফাইনালে উঠে যাবে তা কে ভেবেছিল! নকআউট পর্বে তিন ম্যাচেই ১২০ মিনিট খেলে প্রথমবার ফাইনালে ওঠার ইতিহাস গড়ে ক্রোয়াটরা।
বড় তারকাদের পতনও দেখে রাশিয়া বিশ্বকাপ। সময়ের দুই সেরা ফুটবল লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আলো ছড়াবেন সেই প্রত্যাশাই ছিল সমর্থকদের। স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে শুরুতে সেই আভাস দিয়েছিলেন রোনালদো। চার ম্যাচেই ভিন্ন ভিন্ন ফরমেশনের গ্যাঁড়াকলে দলকে টেনে নিতে পারেননি মেসি। নকআউট পর্বে এক রাতেই রোনালদোর পর্তুগালকে উরুগুয়ে ও মেসির আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে ফ্রান্স। সময়ের আরেক সেরা তারকা নেইমার। সবচেয়ে বেশি শট (২৬) ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৩) গোলের সুযোগ তৈরি করে টুর্নামেন্ট শেষ করলেও বেশিদূর যেতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৬) ফাউলের শিকারও হন নেইমার। ইডেন হ্যাজার্ডের চেয়ে একটি কম। হ্যাজার্ডের বেলজিয়ামের কাছে হেরেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় নেইমারের দল। মেসি-রোনালদো-নেইমারদের ব্যর্থতায় বাজিমাত করেন ফ্রান্সের উঠতি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই বিশ্বকাপ তার জীবনে অবিস্মরণীয় হয়েই থাকবে। শেষ ষোলো রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জোড়া গোল করে পেলের পর প্রথম কিশোর খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ ম্যাচে দুই গোলের কীর্তি গড়েন তিনি। আর ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের পর দ্বিতীয় কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোলের রেকর্ড গড়েন ১৯ বছর বয়সী এমবাপ্পে। টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে তার হাতে।
সেটপিস থেকে এতো গোল আগের কোনো আসরে দেখা যায়নি। রাশিয়া বিশ্বকাপে ১৬৯ গোলের ৪৩% (৭৩টি) আসে ফ্রি-কিক, কর্নার কিংবা পেনাল্টি থেকে। সেটপিসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮% গোল ১৯৯৪ আসরে। এবার রেকর্ড ২৯টি পেনাল্টি উপহার দেয় রাশিয়া বিশ্বকাপ। যার ২২টি গোলে পরিণত হয়। ১৯৯০, ১৯৯৮ ও ২০০২ এই তিন আসরেই আগের সর্বোচ্চ ১৮টি পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। মোট গোলের হিসেবে রেকর্ডের কাছাকাছি যায় এবারের আসর। এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৭১ গোল হয় ১৯৯৮ ও ২০১৪ আসরে। এবার গোল উৎসবের বিশ্বকাপ হলেও গোলরক্ষকদের যে বিশ্বকাপটা খারাপ গেছে তা বলা যাবে না। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ যদি নয়্যার-নাভাস-ওচোয়াদের হয়ে থাকে, এই বিশ্বকাপটা কুরতোয়া-সুবাসিচ-লরিস-স্মাইকেল-
আকিনফেভদের। এবার মাত্র একটি ম্যাচ গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হয় (ফ্রান্স-ডেনমার্ক)। ১৯৫৪ বিশ্বকাপের পর যা এই প্রথমবার হলো।
প্রযুক্তি ব্যবহারের নিরিখে রাশিয়া বিশ্বকাপ আলাদা হয়েই থাকবে। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্যবহৃত হয় গোললাইন প্রযুক্তি। এবার বাড়তি মাত্রা যোগ করে ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি)। পেনাল্টি গোলের রেকর্ডে দারুণ প্রভাব রাখে ভিএআর। এছাড়াও রেফারিদের সিদ্ধান্তে সহায়ক ভূমিকায় ছিল এটি। ভিএআর রিপ্লেতে এবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হলুদ কার্ড দেখা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিশ্বকাপ শুরুর আগমুহূর্তে এই প্রযুক্তির সফলতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেক ফুটবলবোদ্ধা। শেষ পর্যন্ত পুরো আসর মিলিয়ে বেশ সফলতার সাক্ষর রাখে ভিএআর। মানবীয় ভুল যে অনেক কমে এসেছে এটা স্বীকার করবেন অনেকেই। প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বকাপ যে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ফাইনালেও ছিল ভিএআর’র প্রভাব। ভিডিও রিপ্লে দেখেই ক্রোয়াট উইঙ্গার ইভান পেরিসিচের হ্যান্ডবল ধরে পেনাল্টির বাঁশি বাজান আর্জেন্টাইন রেফারি নেস্তর পিতানা। রেফারির পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনাই হয়ে গেল। যার নেপথ্যে বিশ্বকাপের নতুন ফর্মুলা ভিএআর!
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status