বাংলারজমিন

‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই কন্যাকে হত্যা’

নূরুল ইসলাম মনি, বাহুবল (হবিগঞ্জ) থেকে

১৮ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

সাড়ে ১১ মাস পর দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া নাঈমা হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। পিতা ফরিদ মিয়া নিজেই কন্যা নাঈমাকে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। গতকাল বাহুবল সার্কেল অফিসে সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সার্কেল অফিসের ইন্সপেক্টর বিশ্বজিৎ দেব, বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুক আলী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সেলিম হোসেন। গত বছরের ৯ই আগস্ট সোয়াইয়া গ্রামের ফরিদ মিয়ার কন্যা স্থানীয় সোয়াইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী নাঈমার লাশ বাড়ির পাশের খালের পাড়ে কচুরিপানার নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার প্রায় একমাস পর ৬ই সেপ্টেম্বর নিহতের পিতা ফরিদ মিয়া বাদী হয়ে আদালতে তারই ভাই-ভাতিজাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে বাহুবল থানা পুলিশ। দীর্ঘ তদন্তকালে পুলিশ মামলার বাদীকেই সন্দেহ করতে থাকে। গত ১৩ই জুলাই ফরিদ মিয়াকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। একপর্যায়ে ফরিদ মিয়া হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পরদিন পুলিশ তাকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মোছা. শাহিনুর আক্তার-এর আদালতে হাজির করা হলে সেখানে ফরিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
ফরিদ মিয়া পুলিশ ও আদালতকে জানায়, তার ভাই ও ভাতিজাদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে তারা তাকে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার-নির্যাতন করে আসছে। গত বছর ৮ই আগস্ট সোয়াইয়া বাজারে ফরিদ মিয়াকে তার ভাই-ভাতিজারা মারধর করে। এ সময় তারা তাকে হুমকি-ধমকি দেয়। ভয়ে ওই রাতে ফরিদ মিয়া আর বাড়ি ফিরেনি। সোয়াইয়া বাজারেই রাত যাপন করে। শুকুর মিয়া ও তার পুত্রদের সঙ্গে পূর্ব বিরোধ থাকা একই গ্রামের সমরাজ মিয়ার পুত্র সাজন মিয়া এসে ফরিদ মিয়াকে কু-প্ররোচনা দেয়। উভয়ে মিলে প্রতিপক্ষ শুকুর মিয়া ও তার পুত্রদের ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে।
৯ই আগস্ট ফরিদ মিয়ার কন্যা মাতৃহারা নাঈমা আক্তার শামীমার ছিল দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। বেলা ২টার পর পরীক্ষা শেষে সোয়াইয়া বাজারে তার পিতা ফরিদ মিয়ার সঙ্গে দেখা করে। এ সময় ফরিদ মিয়া তাকে চকলেট কিনে খাওয়ায়। এক সময় বাড়ি ফিরে নাঈমা আক্তার। তার এক ভাই ও এক বোন স্কুল এবং মাদরাসায় এবং এক ভাই প্রবাসে থাকায় নাঈমা নিজেই দুপুরের খাবার খায়। এ সময় তাদের ঘরে আসে সাজন মিয়া। তাকে রেখেই নাঈমা বাড়ির পুকুরে যায় বাসন পরিষ্কার করতে। কিছুক্ষণ পর ফরিদ মিয়া ঘরে ফিরে নাঈমাকে বাড়ির পাশের একটি নিচু জায়গায় ডেকে নেয়। সেখানে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাজন মিয়া একটি ছেঁড়া মশারির টুকরো নাঈমার গলায় পেঁচিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ফরিদ মিয়া সঙ্গে সঙ্গে নাঈমার দু’পা চেপে ধরে। একপর্যায়ে নাঈমার মৃত্যু নিশ্চত হলে তারা লাশ পার্শ্ববর্তী খালের পাড়ে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে। বিকাল ৫টার দিকে গ্রামের লোকজন নাঈমার লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই ফরিদ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে সাজন মিয়া বিদেশ পাড়ি জমানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় ফরিদ মিয়া আদালতে মামলা দায়েরের সময় সাজন মিয়াকেও হত্যা মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। তিনি জানান, নাঈমা হত্যার অন্যতম হোতা সাজন মিয়া বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status