বিশ্বজমিন

যুক্তরাষ্ট্রে আরেক রাশিয়ান গুপ্তচর মারিয়া

মানবজমিন ডেস্ক

১৭ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন

আনা চাপম্যানের পর এবার ২৯ বছর বয়সী আরেক রাশিয়ান যুবতীকে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার নাম মারিয়া বুতিনা। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি রাশিয়ান সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপের ভিতর অনুপ্রবেশ করে তথ্য হাতিয়ে নেন। বিশেষ করে তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে। একই সঙ্গে অস্ত্র রাখার অধিকার বিষয়ে একজন পরামর্শক হয়ে ওঠেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল কাউন্সেলর মুয়েলার যে তদন্ত করছেন তার সঙ্গে মারিয়া বুতিনার অভিযোগের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি কাহিনী। অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্রেমলিনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিদের্শনা মতো কাজ করতেন মারিয়া বুতিনা। এ বিষয়ে সোমবার তার আইনজীবী রবার্ট ড্রিসকোল একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, তার মক্কেল কোনো গুপ্তচর বা এজেন্ট নন। তিনি শুধু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক একজন ছাত্রী। তিনি নিজের ব্যবসা পরিচালনার জন্য শুধু এই ডিগ্রিটি নেয়ার চেষ্টা করছেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অতিরঞ্জিত। যুক্তরাষ্ট্রের কোন সুনির্দিষ্ট নীতি, আইনকে খাটো করার বা এখানে প্রভাব বিস্তারের কোনো ইঙ্গিত নেই তার বিরুদ্ধে। তাই তিনি অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক মাস ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, মারিয়া বুতিনা বসবাস করেন ওয়াশিংটনে। গত রোববার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার তার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে জেলেই থাকতে হচ্ছে। এমনটা জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মধ্যে এর কয়েক ঘন্টা পরে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাতে সায় দেন ট্রাম্প। কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের কর্মকর্তাদের ইমেইল হ্যাক করার কারণে আইন মন্ত্রণালয় ১২ জন রাশিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এর কয়েকদিন পরেই গ্রেপ্তার করা হলো মারিয়া বুতিনাকে।  

মারিয়ার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ:
সোমবার এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট কেভিন হেলসনের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তাকে এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল রাশিয়ান ফেডারেশনের স্বার্থে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রভাব ব্যবহার করা হচ্ছে এমন মার্কিনির সঙ্গে কারো সম্পর্ক আছে কিনা তা খুঁজে বের করা। তিনি সরকারের কাছে তার কর্মকান্ডের বিস্তারিত নিবন্ধিত না করেই কাজ শুরু করেন। যেমনটা করা হয় ফরেন এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে। যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ অধিকারকে অনুমোদন দেয় এমন একটি সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেন মারিয়া বুতিনা। আইন মন্ত্রণালয় এ কথা বললেও তারা ওই গ্রুপ অথবা ওই গ্রুপের কোনো রাজনীতিকের নাম প্রকাশ করে নি। এফিডেভিট অনুযায়ী, মারিয়া চেষ্টা করছিলেন রাশিয়ংা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একটি ব্লাক চ্যানেল প্রতিষ্ঠার জন্য। ফৌজদারি অভিযোগে বলা হয়েছে, মারিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন, যাতে তিনি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন। এমন মিশন নিয়ে তিনি একটি ইভেন্ট আয়োজন করেছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের প্রভাবকে রাশিয়ান ফেডারেশনের দিকে ব্যবহার করা যায়। আর এসব বিষয় তিনি রাশিয়ায় কর্মকর্তাদের জানাতেন টুইটার ব্যবহার করে সরাসরি। অথবা অন্য কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে তিনি এটা করতেন।

কে এই গুপ্তচর:
মারিয়া বুতিনার আসল বাড়ি হলো সার্বিয়ায়। তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন স্টুডেন্ট ভিসায়। কিন্তু সেখানে তিনি গোপনে রাশিয়ান সরকারের পক্ষে কাজ করতে থাকেন। তিনি একটি গ্রুপ গড়ে তোলেন। এর নাম দেন ‘রাইট টু বিয়ার আর্মস’। যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার আগেই তিনি এ গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন। আগেই যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র বিষয়ক তদবিরকারী সংস্থা হলো ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশন। এর সঙ্গে সম্পর্ক আছে মারিয়ার। এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টকে মারিয়া বলেছেন, রাশিয়া সরকারের পক্ষে তিনি কাজ করেন না। তিনি রাশিয়ায় একটি ব্যাংকার ও সাবেক সিনেটর আলেক্সান্দার তোরশিনের এসিসট্যান্ট ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এপ্রিলে অবরোধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়।  তোরশিন ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য এবং ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া এ সংস্থার বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দিয়েছেন মারিয়া। এমনকি তিনি ট্রাম্পের প্রচারণা বিষয়ক ইভেন্টেও যোগ দিয়েছেন। ট্রাম্পের কাছে তার রাশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্র নীতি কেমন তাও নাকি জানতে চেয়েছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status