খেলা

শিরোপা ফ্রান্সেরই প্রাপ্য ছিল

১৭ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল রাশিয়া বিশ্বকাপ। এখানে ভালো মন্দ অনেক কিছুই ছিল। ফাইনাল জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। আমার কাছে ফাইনাল দেখে মনে হয়েছে ওরাই ছিল শিরোপার যোগ্য। সেটি না হলে অঘটন হতো বলেই মনে করি। ক্রোয়েশিয়া চেষ্টা করেছে। তবে ফাইনালে যেভাবে খেলার কথা ছিল সেটি তারা পারেনি। এর অন্যতম কারণ এ ম্যাচের আগে তারা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কারণ তিনটি ম্যাচে তারা ১২০ মিনিট করে খেলে এসেছে। এর মানে একটি ম্যাচের সময় তারা বেশি খেলেছে। এ ছাড়াও সেমিফাইনালের পর তারা ফ্রান্সের তুলনাতে বিশ্রাম পেয়েছে অনেক কম। যে কারণে শরীরিক শক্তির যে রিকভারি হওয়ার কথা সেটির সময় পায়নি। যে কারণে দেখেন ফাইনালে ওরা প্রথম ২০ মিনিট দারুণ খেললেও ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে। আর ফ্রান্স সেটিই চেয়েছিল। যে কারণে দ্বিতীয়ার্ধে তারা ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছে। যদিও দুটি গোল নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে বিশ্বকাপ জয় ভাগ্যেরও বিষয়। এখানে ভাগ্যও ফ্রান্সের সঙ্গে ছিল বলেই স্পষ্ট।
ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার দুই দলের ফাইনাল যখন যে চিন্তা করবে অবশ্য ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখবে। আমরা তাই জানতাম যে ফাইনালে ফ্রান্স তাদের সেরা শক্তিটা দেখাবে। বিশেষ করে কোচ দিদিয়ের দেশম আসলে ক্রোয়েশিয়ার এ ক্লান্তির সুযোগটাই কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে আমার মনে হয়। তাই খেলা শুরুতে তার দল গোল দিলেও আক্রমণের সুযোগ কিন্তু ক্রোয়েশিয়া বেশি পেয়েছে। ২০ মিনিট পর্যন্ত ফ্রান্স নিজেদের সেরা ফুটবল খেলেনি। কিন্তু এরপর থেকে ওরা জ্বলে ওঠে। ক্রোয়েশিয়ার ফাইনাল খেলার যে চাপ নেয়ার শক্তি সেটি আগেই কম ছিল। ধীরে ধীরে ফ্রান্স যখন গতি বাড়াতে শুরু করলো তখন তারা খেই হারিয়ে ফেলে। শেষ দিকে মনে হয়েছে ওদের লড়াইয়ের শক্তি নেই।
‘ভিএআর’ ক্রিকেটের মতো হওয়া উচিত
এ বিশ্বকাপে অনেক ভালোর মধ্যে সচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে  রেফারিং ও ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) পদ্ধতি। তবে আমি বলবো ভিএআর পদ্ধতি ফুটবলের জন্য ভালো। তবে আরো উন্নতি করতে হবে। তাহলে রেফারিংটা আর বিতর্কিত হবে না। এমন অনেক গোল আছে যা রেফারির ভুলে হয়ে যায় এখানে ভিএআর থাকাতে ভুল কম হয়েছে। তবে পেনাল্টি বা ফাউল হলে রেফারি যখন কনফিউস তখন তাকে মাঠের বাইরে যেতে হচ্ছে ভিএআরের সাহায্য নিতে। যদি এটি ক্রিকেটের নিয়মের মতো হয় তাহলে ভালো হবে। রেফারি মাঠে থেকেই ইশারা দিবে। তখন থার্ড আম্পায়ারের মতো ভিএআর থেকে সিদ্ধান্ত নিবেন।

এমবাপ্পে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে
এ বিশ্বকাপে অনেকেই ভালো খেলেছে। তবে আমি এ বিশ্বকাপের হিরো বলবো ১৯ বছরের এমবাপ্পেকে। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই শিরোপ! এ ছেলে অনেক দূর যাবে। ওর যে গতি, ডিবলিং, শরীরের শক্তি তা দিয়ে আমি মনে করি রোনালদো, মেসি, নেইমারকেও ছড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আছে। সামনের বিশ্বকাপেও ওর দিকেই থাকবে সবার চোখ।

লাতিনদের শিক্ষার বিশ্বকাপ
সবাই অপেক্ষায় ছিল ফাইনালে দারুণ কিছু হবে। কিন্তু আমি মনে করি না ফাইনাল দেখে মন ভরেছে ফুটবল ভক্তদের। আমার নিজেরই ভালো লাগেনি। কারণ আন্ডার ডগ একটি দল যখন ফাইনালে আসে তারা এমন ম্যাচের চাপ নিতে পারে না। দেখেন আগের তিন চারটা ফাইনালে এত গোল হয়েছে কিনা। সব মিলিয়ে ৬ গোল! ফ্রান্স দিয়েছে চারটা। এখানে যদি ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ব্রাজিল, বা স্পেন বা জার্মানি হতো তাহলে হয়তো চিত্রটা অন্যরকমই হতো। যদি ক্রোয়েশিয়ার হারের কারণ বলতে হয় আমাকে আমি কিন্তু ওদের ফাইনালেরর যোগ্য দল বলবো না। কারণ শেষ তিন ম্যাচে ওরা ভাগ্যের জোরে টাইব্রেকারে এসেছে। এ তিনটি ম্যাচে ১২০ মিনিট করে খেলাটাও  ক্রোয়েশিয়ার হারের আরেকটি কারণ। একটাই ক্লান্ত ছিল যে ৩ গোল খাবার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যাই হোক বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে। এখন যদি এ আসরকে মানুষ মনে রাখে সেটি রাখতে হবে লাতিন ফুটবলের শিক্ষার বিশ্বকাপ হিসেবে। লাতিন ফুটবলের যারা গডফাদার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন তারা মনে করেছিল আমরাতো জিতেই যাব। কিন্তু ইউরোপো ফুটবল যে এত উন্নতি করেছে তা তারা মাথাতেই আনেনি। এমনকি যে গ্রুপগুলো সাজানো হয়েছে সেখানেও উইরোপের দলগুলো সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। সব দিক থেক এবার লাতিনরা রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বড় শিক্ষা নিয়েছে বলেই আমার মনে হয়। কারণ তাদের জানা উচিত ইউরোপ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের ফুটবলকে কতদূর নিয়ে গেছে।

মান হারিয়েছে রেফারিং
রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যত্র আলোচনার বিষয় ছিল রেফারিং। ফাইনালেও তাই হয়েছে। গ্রিজম্যানকে  মারায় যে ফ্রি কিকটি দেয়া হয়েছিল। সেটি আসলে তেমন ফাউল ছিল। সেখান থেকেই কিন্তু গোল আসে। আর পেনাল্টি! সেখানেও বুঝলামা না কি হচ্ছে। ভিএআর সুবিধা নিয়ে সিদ্ধান্তই পাল্টে গেল। আমার কাছে মনে হয়েছে ভিএআর থাকাতে রেফারিংয়ের  মান নষ্ট হচ্ছে। তবে এ পদ্ধতিকে একেবারে খারাপ বলা যাবে না। তবে রাখতে হলে আরো উন্নতি করতে হবে। আশা করি কাতারে আরো বেশি ভালো হবে ভিএআর পদ্ধতির ব্যবহার।

১৯-এর এমবাপ্পে বহুদূর যাবে
মনে হচ্ছি না শেষ পর্যন্ত এমন কাউকে পাওয়া যাবে যাকে ভবিষ্যতের রিয়েল ফুটবল হিরো বলা যাবে। কিন্তু ১৯ বছর বয়সে এমবাপ্পে যা করেছে তাতে আমার মনে হচ্ছে সে অনেক দূর যাবে। ওর গতি আর টেকনিক দুটিই সেরা। মাঠে সেকি দাপট। উপরে যাচ্ছে আবার নামছে। কত দ্রুত গতিতে গোল করছে। এ বয়সে তার প্রাপ্তি বিশ্বকাপ। আমার মনে হয় ওর জন্য আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।
অনুলিখন: ইশতিয়াক পারভেজ
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status