শেষের পাতা

নজর কাড়ার চেষ্টায় বিএনপি লিটন বলছেন মিথ্যাচার

আসলাম-উদ-দৌলা, রাজশাহী থেকে

১৭ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী সিটি নির্বাচনের দৌড়ে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বিজয়ী করতে দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। নির্বাচনীর প্রচারণার শুরু থেকে একতরফা প্রচারণার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফেস্টুন-পোস্টারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের জয়জয়কার। দেরিতে হলেও প্রচারণার দৌড়ে কিছুটা হলেও চমক সৃষ্টি করেছে বিএনপি। প্রথাগত ভোটার মাইকিং থেকে বেরিয়ে ভোটারদের নজর কাড়ছে বিএনপি।

‘যে গর্জে, সে বর্ষে না’, ‘ভোট বিপ্লব ঘটবে, বুলবুল ভাই জিতবে’, ‘জেল খেটেছে বুলবুল ভাই, মা-বোনদের ভোট চাই’, ‘খালেদা জিয়া জেলে তাই, মাগো তোমার ভোট চাই’ স্লোগান সংবলিত মাইকিং ভোটারদের ভেতরে আগ্রহ তৈরি করছে।  বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে যখন ইমোশনালি ভোটের প্রচারণা চলছে। সেখানে বিএনপির ভোটের কৌশল মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে ভরপুর বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রচারণায় উন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছে।

নগরী জুড়ে বিএনপির মাইকিংয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে নৌকা প্রতীকের ভোট প্রার্থনা। ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ’, ‘ধারাবাহিতকার সরকার, এই মুহূর্তে দরকার’, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের মানুষের শান্তি মেলে’, ‘দূষণ মুক্ত রাজশাহী, লিটন ভাইয়ের উন্নয়ন’, ‘লিটন ভাইয়ের উপহার, রাজশাহীতে আইটি পার্ক’, ‘শেখ হাসিনার উপহার, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার’।

প্রচারণার দৌড়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমানে টক্কর দিতে প্রস্তুত বিএনপি। কিন্তু ভোট শুধু প্রচারণায় হয় না দাবি করে আওয়ামী লীগ বলছে, তাদের প্রার্থী বিগত ১ বছর ধরে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন এবং ভোটারা নিজে আশ্বস্ত করছেন লিটন ভাই মেয়র না থাকায় রাজশাহী উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, বিএনপি যে অভিযোগগুলো করেছে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। কারণ মিথ্যাচার-অপপ্রচার করা বিএনপির অভ্যাস। তারা শুরু থেকেই মিথ্যাচার করে আসছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যে অভিযোগগুলো দিচ্ছি, সেগুলো একদম  সত্য। আমরা এখনো আশা করি তাদের (বিএনপির) সুবুদ্ধির উদয় হবে। নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রেখে নির্বাচন করবে। জনগণ তাদের মতামত দিবে। সেই মতামত যেটাই হোক না কেন তাদের মেনে নিতে হবে। আমরাও জনগণের মতমত মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা নির্বাচনের পরিবশে সুষ্ঠ রাখবো। তারা (বিএনপি) কী করবে জানি না। কারণ তাদের সঙ্গে তো জামায়াত-শিবির আছে।’

নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে ঘনিয়ে আসছে ততই সংঘবদ্ধ হচ্ছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপি প্রার্থীর উইনিং ভোট জামায়াতের। সে জামায়াতের নিরবতা কারণে বিএনপিকে শেষ লড়াইয়ে বেগ পেতে হবে মনে করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে জামায়াত-শিবিরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন তার ফেসবুকে রাসিকের আগামীর মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে স্টাট্যাস দেন। ওই স্টাট্যাসে ২০১৩ সালের নির্বাচনে ব্যানার ও পোস্টারের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘২০১৩ সালে জামায়াত-শিবির বুলবুল ভাইয়ের নির্বাচনী মাঠে ছিল অথচ এবার ২০১৮ সালে নাই কেন???’

এদিকে গতকাল সকালে বিএনপি প্রার্থী বুলবুলের পক্ষে শোডাউন দেয় বিএনপি। এছাড়া সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০, ১১ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এবং বিকেল থেকে রাত অবধি ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন নেতাকর্মীরা।

এসময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তাফা, রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম সমাপ্ত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি প্রমুখ।

গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বুলবুল বলেন, ‘বিএনপি পূর্ব থেকেই একটি সুশৃংখল ও সুসংগঠিত একটি দল। বর্তমানে আরো সুসংগঠতি হয়েছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে বিএনপির অবস্থধা আরো ভালো হচ্ছে। বিএনপিীর বিজয় নিশ্চিত জেনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা ও গ্রেপ্তার করছে। সেইসাথে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনী সেন্টার ভাঙচুর করছে। পোস্টার, ব্যানার ও ফ্যাস্টুন ছেঁড়া অব্যাহত রয়েছে। বুলবুল বলেন, যতই বাধা ও নির্যাতন বিএনপি নেতাদরে উপর আসুক  না কেন বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাজশাহী বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে ধানের শীষ ছাড়া জনগণ অন্যকোন প্রতীক চিন্তা করতে পারে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ ভোটারগণ ভয় করছিলেন। কিন্তু বিএনপি’র গণজোয়ার ও গণমিছিল দেখে জনগণের মধ্যে আরো সাহস সঞ্চার হয়েছে। তারা এখন আওয়ামী লীগ আর ভয় পায় না।’

গতকাল পৌনে ১১টায় নগরীর বনপুকুর এলাকা থেকে দিনের গণসংযোগ শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। পরে কাদিরগঞ্জ, গ্রেটার রোড এলাকা, দড়িখরবনা ও নিউ মার্কেট এলাকায় দুপুর পর্যন্ত গণসংযোগ করেন তিনি।

বনপুকুর এলাকায় সমবেত জনতার উদ্দেশে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্বীপনার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত এমন পরিবেশ বজায় থাকবে। বিএনপির সদ্য বিদায়ী শেযর বুলবুলের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপির  মেয়রের কারণে রাজশাহী অনেক পিছিয়ে গেল। গত ৫ বছরের কোনো উন্নয়নি হয়নি। যারা কাজ করতে পারেননি, তাদের নতুন করে দেখার সুযোগ নাই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status