দেশ বিদেশ
মানসিক রোগীর চিকিৎসায় অবহেলা করলে স্বজনদের সাজা
বিশেষ প্রতিনিধি
১৭ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির চিকিৎসায় অবহেলা করলে অভিভাবক বা স্বজনদের শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব করে নতুন আইন হচ্ছে। সম্পত্তি ভাগাভাগিতে এই ধরনের ব্যক্তিদের ঠকালেও হবে সাজা। এই ধরনের অপরাধের শাস্তি হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানিয়ে বলেন, ১৯২১ সালের একটি আইন ছিল দ্য লোনেসি অ্যাক্ট। এটিকে বাংলায় ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত নাগরিকদের মর্যাদা সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ, পুনর্বাসন ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আইনটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ৩রা জানুয়ারি এ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইনে ৩১টি ধারা রয়েছে জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সব কার্যক্রম পরিচালনা, সমপ্রসারণ, উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব সরকারের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় পেশাজীবী হিসেবে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কিত বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা সার্টিফিকেট দিলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বা সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে অবহেলা বা আদালতের কোনো নির্দেশ বাস্তবায়ন না করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি এ আইনের অন্য কোনো বিধান বা এর অধীনে প্রণীত কোনো বিধি লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনে সহযোগিতা বা প্ররোচনা বা প্রতিপালনের বিষয়াদি বা সরকারের কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রতিপালন না করা বা প্রতিপালন না করতে সহযোগিতা করা বা বাধা দিলে তিনি সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ছয় মাসের কারাদণ্ড উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তিনি বলেন, খসড়া আইনে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা প্রদান এবং এ সংক্রান্ত সংক্ষুব্ধতার ক্ষেত্রে প্রতিকারের লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ মনিটরিং কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসাবিষয়ক হাসপাতাল স্থাপন, পরিচালনা ও মানসম্মত সেবা প্রদান সংক্রান্ত বিধানের উল্লেখ রয়েছে খসড়া আইনে। এছাড়া মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির অভিভাবক, নিয়োগ ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে সচিব জিয়াউল আলম বলেন, অভিভাবকহীন ও আত্মীয় পরিচয়হীন মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন-সংক্রান্ত বিষয়াদি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির মানসিক অবস্থার বিচারিক অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত বিধানও খসড়া আইনে রয়েছে। মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে অপরাধ আমলে নেয়া এবং বিচার পদ্ধতি সম্পর্কে খসড়া আইনে একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সচিব জিয়াউল আলম বলেন, গত ৫ থেকে ৭ই জুন মেয়াদে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জাব্বারের থাইল্যান্ড সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে সামপ্রতিক সময়ে অভাবনীয় সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগামী দিনেও এই সাফল্য অব্যাহত রেখে সালমা বাহিনী বাংলাদেশের জন্য আরো পুরস্কার জিতে আনবে বলেও আশাবাদী সরকার। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অন্যান্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি টাইগ্রেসদের তাক লাগানো পারফরম্যান্স নিয়েও কথা হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে এই বিষয়টি না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পরে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাস হয় নারী দলকে অভিনন্দন জানিয়ে। সেই সঙ্গে তাদের আরো উন্নতির জন্য করণীয় বিষয়েও কথা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বোন সায়মা হকের মৃত্যুতেও শোক প্রস্তাব পাস হয়েছে। এছাড়া শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান আইনমন্ত্রীর বোন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে ভুগছিলেন। বৈঠকে আরেকটি ধন্যবাদ প্রস্তাব পাস হয়েছে। অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী মহা হিসাবরক্ষক নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।