খেলা

লড়াকু মানসিকতাই গড়ে দিয়েছে ব্যবধান

কাফি কামাল

১৬ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১:২৯ পূর্বাহ্ন

বিশ্বকাপের নিষ্ঠুর ম্যাচ খ্যাত তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বেলজিয়ামের লড়াকু মানসিকতাই ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি বলেন, বিশ্বকাপের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ম্যাচ বলা হয় থার্ড প্লেস নির্ধারণী। যে ম্যাচে দুটি দলই মাঠে নামে ফাইনালে উঠতে না পারার বেদনা নিয়ে। ফাইনালে উঠতে না পারার ব্যর্থতা ইংল্যান্ডেকে যতটা মুষড়ে দিয়েছে, বেলজিয়ামকে ততোটা পারেনি। বেলজিয়াম সত্যিকার অর্থেই ইতিবাচক ফুটবল খেলেছে। তারা তৃতীয়স্থান নির্ধারনী ম্যাচকেও নিয়েছিল ফাইনাল হিসেবে। তাদের এ লড়াকু মানসিকতাই গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ব্যবধান। বেলজিয়ামের ফুটবলারেরা টানা নব্বই মিনিটই খেলেছেন একই ছন্দে। তিনি বলেন, বেলজিয়ামের আক্রমণগুলো ছিল সম্মিলিত। ম্যাচের মাত্র ৪ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। দারুণ এক সঙ্গবদ্ধ আক্রমণ থেকে গোলটি করেছেন ডিফেন্ডার টমাস মুনিয়ের। এ গোলের মাধ্যমে একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ভালো খেলা এবং সফল হওয়ার জন্য তারা কতোটা উদগ্রিব ছিল তার প্রমাণ হচ্ছে তাদের গোলদাতার সংখ্যা। মুনিয়ের বেলজিয়ামের দশম খেলোয়াড় হিসেবে গোল করেছেন রাশিয়া বিশ্বকাপে। ফরমেশনের দিক থেকে না হলেও মাঠের নৈপুন্যে তাদের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে টোটাল ফুটবলের ধারা। চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কিন্তু তারা তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সাফল্য নিয়েই দেশে ফিরছে। আমিনুল বলেন, মাঝমাঠে বেলজিয়ামের ছন্দ নষ্ট করতে ইংলিশ কোচ সাউথগেট ফরমেশন পরিবর্তন করে মিডফিল্ডে শক্তি বাড়িয়েছিলেন। মিডফিল্ডে পরিস্কার প্রভাববিস্তার করে ছিল ইংলিশরা। ইংল্যান্ডের ৬৯৮টি পাসের মধ্যে ৬৪১টিই ছিল নিখুঁঁত পাস। অন্যদিকে বেলজিয়ামের ৫১১টির মধ্যে নিখুঁত পাস ছিল ৪৫০টি। কিন্তু বলের দখলের লড়াই এগিয়ে থাকলে বা পাস বেশি খেললেই যে জেতা যায় না, ব্রাজিল-স্পেনের ব্যর্থতা থেকেও সে শিক্ষা নিতে পারেনি সাউথগেটের শিষ্যরা। এখন ফুটবলটা খেলতে হয় অনেক অঙ্ক করে। ইংল্যান্ড যেখানে পাস থেকে আক্রমণ বের করতে গেছে সেখানে বেলজিয়াম ছিল পাল্টা আক্রমণাত্মক। হ্যারি কেইনরা বেলজিয়ামের রক্ষণে সেভাবে আতঙ্ক তৈরি করতে পারেননি। ছিল না কোনও উইং প্লে। তিনি বলেন, ইংল্যান্ড ম্যাচটি সাজিয়েছিল পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে। এ কৌশলে ইংল্যান্ড খেলেছে ভালো, লড়াইও জমিয়েছে। বল পজিশনে তারা বেলজিয়াম থেকে এগিয়েছিল। আক্রমণের সংখ্যায়ও ছিল এগিয়ে। কিন্তু কাজের কাজটি করতে পারেনি ইংলিশ অ্যাটাকাররা। উল্টো কাউন্টার অ্যাটাকে বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ডরা বারবার কাঁপন ধরিয়েছে ইংলিশ রক্ষণে। রোমেলু লুকাকোসহ অন্যরা উপর্যুপরি মিস না করলে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান আর বড় হতে পারতো। আমিনুল বলেন, তিনি বলেন, দুই দলের মধ্যে ইংল্যান্ডের রক্ষণ ছিল অনেক বেশি ক্লান্ত। তাদের খেলায় ক্লান্তির ছাপ ভর করছিল। অন্যদিকে হ্যারি কেইনদের আক্রমণগুলো কার্যকরভাবে রুঁখে দেয়ায় বাহবা পেতে পারে বেলজিয়ামের ডিফেন্স লাইন। খেলার ৭০ মিনিটে এরিক ডায়ারের নেয়া শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন বেলজিয়াম ডিফেন্ডার টবি অ্যালডারউইয়ারল্ড। যে গোল পেলে পাল্টে যেতো ম্যাচের চিত্র। বাংলাদেশ দলের সাবেক এ গোলরক্ষক বলেন, পুরো টুর্ণামেন্টে ভালো ও ইতিবাচক খেলেছে বেলজিয়াম। ইংল্যান্ডের খেলা তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল দ্বিতীয় শিরোপার। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গের পাশাপাশি তাদের দূর্বলতাও প্রকাশ পেয়েছে তৃতীয়স্থান নির্ধারনী ম্যাচে। বেলজিয়াম যেখানে তাদের ফুটবল এ্যাবিলিটি ও ম্যাচুরিটিকে কাজে লাগিয়েছে সেখানে ইংল্যান্ড ছিল স্বপ্নভঙ্গে মুর্মুর্ষু। আমিনুল বলেন, ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে দুই কোচের কৌশল এবং মানসিকতায়। ইংল্যান্ডের কোচ সাউথগেট যেখানে বলেছেন, ‘এটা এমন একটা ম্যাচ, যা কোনও দলই খেলতে চায় না।’ অন্যদিকে বেলজিয়ামের কোচ রবের্তো মার্তিনেস বলেছেন, তাঁর পাখির চোখ এখন ২০২০ সালের ইউরো কাপ। শনিবার থেকেই (থার্ড প্লেস ম্যাচ) তার প্রস্তুতি শুরু করতে চান। দুজনের এই মানসিক পার্থক্যও ব্যবধান গড়েছে মাঠের খেলায়। আমিনুল বলেন, থার্ড প্লেস ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড় বিশেষ করে দুই প্রধান খেলোয়াড় হ্যারি কেইন ও রোমেলু লুকাকোর উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। সেই চাপ থেকেই তারা বারবার ভুলে করেছে। হ্যারি কেইন যেমন তার গোলের সংখ্যা বাড়াতে পারেনি, তেমনি লুকাকো গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেনি। তবে দুই খেলোয়াড়ই রাশিয়া বিশ্বকাপে ঘটিয়েছেন তাদের লড়াকু চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। প্রমাণ করেছেন তাদের শ্রেষ্ঠত্বের সামর্থ।
অনুলিখন: কাফি কামাল
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status