শেষের পাতা
সচিব-বৃটিশ দূত বৈঠক
নির্বাচন ও ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা
মিজানুর রহমান
১৬ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
সংকট সমাধানে রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে বৃটেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পর্যন্ত বাস্তুচ্যুতদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে। ঢাকা সফররত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব সাউথ এশিয়ার পরিচালক গ্রেইথ বেলে ও ঢাকাস্থ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে গতকাল এক বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চান। সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র ভবনে প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে সচিব রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং আগামীর পরিকল্পনার বিষয়ে তাদের অবহিত করেন। সূত্রমতে, সচিব-বৃটিশ দূত বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর (ব্রেক্সিট পরবর্তী) বৃটেনের সঙ্গে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৃটেনের কূটনীতিকদ্বয় এ নিয়ে বাংলাদেশের ভাবনার বিষয়েও জানতে চান। আলোচনায় ব্রেক্সিট প্রশ্নে বৃটিশরা যে গণরায় দিয়েছে তা কার্যকর করতে তেরেসা মে সরকারে যে অস্থিরতা চলছে তা সামলে ওঠার চেষ্টায় যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা বাংলাদেশকে অবহিত করেন দূতদ্বয়। সেই প্রেক্ষাপটে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ করে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে কথা হয়। নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন কাজকর্মের বাইরে যে কিছু করতে পারে না তা নিয়েও সচিব তাদের অবহিত করেন। তবে সচিব-বৃটিশ দূত বৈঠকে বহুল আলোচিত খালেদা জিয়ার বৃটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক মানবজমিনকে বলেন- বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ব্যুরো অব সাউথ এশিয়ার ডিরেক্টর এখন ঢাকায়। তাকে নিয়ে আমি পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। তাদের মধ্যে খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন- ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বৃটেনের অত্যন্ত সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের অনেক ইস্যু আছে। আমরা চেষ্টা করেছি এর অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করতে। সচিবের সঙ্গে খুবই চমৎকার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের অনুরোধে ভারতে ঢুকতে না দেয়া কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বৃটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তার কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না? জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন- না, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। কূটনৈতিক সূত্র মতে, গত মার্চে লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ বা কৌশলগত সংলাপের ফলোআপ নিয়ে সচিব-দূত বিস্তারিত আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈশ্বিক ফোরামে বৃটেনের সোচ্চার অবস্থান এবং সরজমিন পরিস্থিতি দেখতে দেশটির সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সিরিজ বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও কথা হয়। উল্লেখ্য, দুদিন আগেই লন্ডনে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত বৃটিশ ফরেন অফিসে যান। সেখানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মার্ক ফিল্ডের সঙ্গে তার কথা হয়। মার্ক ফিল্ড এক টুইট বার্তায় সেই বৈঠকের বিষয়ে বলেন- বার্মিজ দূতের সঙ্গে বৈঠক হলো। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা হয়েছে। বার্মার জন্য এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তার বাস্তবায়ন। একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য এবং স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন এবং তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করা। সামপ্রতিক সময়ে মিয়ানমারের কাচিন ও শান প্রদেশে বর্মী সেনা যেসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাতে উদ্বেগও প্রকাশ করেন বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে তিনি উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি মিয়ানমারে আটক রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিষয়েও গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেন।