শেষের পাতা

আরপিও সংশোধন করে খালেদা তারেককে সরানোর শঙ্কা ফখরুলের

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারার অনুরূপ একটি ধারা নির্বাচন কমিশনের আরপিওতে সংযুক্ত করে সরকার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি।  বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে দলীয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সর্বসম্মত প্রস্তাবে বিলুপ্ত ৭ নম্বর ধারার অনুরূপ একটি ধারা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিওতে সংযোজন করার অপচেষ্টা চলছে। এরপর ওই ধারার দোহাই দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, গত ১১ই জুলাই বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর-পর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসংসদীয় কটুবাক্যের ধারাবর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা পরিবর্তন করলো কেন? প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য উদ্ভট, অলীক ও অন্তঃসারশূন্য। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা গত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সংশোধিত। হঠাৎ করে পরিবর্তন করেনি। তিনি বলেন, আকস্মিকভাবে কয়েকদিন ধরে বিএনপির গঠনতন্ত্রের এই ধারা পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। হঠাৎ করেই বিশেষ কয়েকটি পত্রিকায় বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা নিয়ে দরদ উথলে পড়তে শুরু করেছে। সেখানে বলা হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সুবিধা দেয়ার জন্যই আমরা এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে এসেছি। এই অলিক প্রচারণাগুলো এতদিন কিন্তু ছিল না। যখনই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়ে কারাগারে নেয়ার পর বিএনপিকে ভেঙে ফেলতে ব্যর্থ হয়েই এখন তারা ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। কয়েকটি পত্রিকায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিউজের পর ৭ নম্বর ধারা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ। মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে এতই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, তারা এখন ষড়যন্ত্র করছে। আমি এই কথাটা বারবার বলছি, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই কথাটা মিডিয়াতে সেইভাবে গুরুত্ব পায় না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন আর রাজনীতি নেই। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে, সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে রাজনীতিতে টিকে আছে। এই জন্য সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে ও বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচার চালিয়ে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায় সেই কৌশল তারা ব্যবহার করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মইন-ফখরুদ্দীন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিল সেই একই কায়দায় এখন পুনরায় বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল। বিএনপির বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে সরকারের সংস্থাগুলো নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের আরপিও সংক্রান্ত কিছু উদ্দেশ্যপূর্ণ রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য মাঠে নেমেছে। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, একটি বিশেষ সংস্থা সাংবাদিকদের অনেককেই ডেকে নিয়ে একটি পেপার সরবরাহ করেছে। সেই কাগজের কপি আমাদের কাছে আছে। সেটা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার আগে আমরা পেয়েছি। সুতরাং এটা জনগণের কাছে যেমন পরিষ্কার, আমাদের কাছেও পরিষ্কার যে- বিএনপিকে সবদিক দিয়ে বেকায়দায় ফেলে দেয়ার জন্য তারা এই অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে ৭ ধারা বাতিলসহ দলের গঠনতন্ত্রে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়। যা পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্টতর করার জন্য কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রে সদস্য পদের আবেদনপত্র সংশোধন করে ‘আমি কখনোই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবো না’ এই বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানামতে কোনো দলের গঠনতন্ত্রে সদস্য পদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেয়ার বিধান নেই। সর্বোচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজা পেয়েও আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখনো সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং আওয়ামী লীগে তার সদস্যপদ ও নেতৃত্ব বহাল রেখেছেন। এছাড়াও, মহীউদ্দীন খান আলমগীর একইভাবে তার এমপি পদ বহাল রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এগুলোতে কোনো দোষ দেই, পাপ নেই, অন্যায় নেই। একমাত্র ত্রুটি হচ্ছে- বিএনপি চেয়ারপারসনকে একটি মামলায় সাজা দিয়েছেন। এখন তাকে কী করে রাজনীতি থেকে দূরে সরানো যাবে এই প্রক্রিয়ায় আপনারা নেমে পড়েছেন। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা বহুদিন থেকে বলে আসছি- ওয়ান ইলেভেনের সরকার মাইনাস টু থিউরির ষড়যন্ত্র করেছিল। আর এখন আওয়ামী লীগ মাইনাস ওয়ান থিউরি প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপপ্রচার ও সরকারি ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকারের কোনো অশুভ নীল নকশার অংশ না হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সকল গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ এত বোকা নয় যে, সরকারের এসব ছল-চাতুরী বুঝতে পারে না। সরকারের উচিত হবে এইসব নোংরা কৌশল থেকে বিরত থেকে সোজা পথে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। সরকারের এইসব অপকৌশল জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের চেয়ারপারসনের পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে শনিবার কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিল কারাকর্তৃপক্ষ। তারা গিয়েছিলেনও। কিন্তু খালেদা জিয়া যে ভবনে রয়েছেন সেই ভবনের নিচে তাদেরকে অবস্থান করতে বলা হলে তিনি সেখানে আসতে পারেননি। কারণ গত কয়েকদিন ধরেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত। তার হাঁটু ও কোমরের ব্যথা অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় হাঁটতেই পারছেন না। এজন্য তিনি নিচে নেমে আসতে পারেননি। ফলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখাও হয়নি। আজকে ১৩ দিন ধরে দেশনেত্রীর সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারছেন না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য আমরা বারবার কারাকর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি। অনেকগুলো পদক্ষেপও নিয়েছি। আইজি প্রিজন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমরা চিঠি দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দুইবার গিয়েছি। তখন বলেছি- খালেদা জিয়ার শরীর অত্যন্ত খারাপ। সেখান থেকে তাকে বের করে সুচিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। কিন্তু সরকার আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং যেখানে খালেদা জিয়া যেতে চান না সেখানেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এগুলো পরিকল্পিত ব্যাপার। পরিকল্পনা হলো- খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। সেই সঙ্গে তাকে অসুস্থতার এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যে, তিনি আর সেখান থেকে ফিরে আসতে না পারেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহ না করুক- দেশনেত্রীর জীবন যদি হুমকির সম্মুখীন হয় তাহলে তার সমস্ত দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। ৭৩ বছর বয়স্ক একজন মানুষকে তার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার মতো এতবড় প্রতিহিংসা পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশের মানুষ করতে পারে না। এটা বর্বরোচিত আচরণ। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কারাবিধিতে পরিষ্কার করে বলা আছে- আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে সাজাপ্রাপ্তদের সঙ্গে সপ্তাহে অন্তত একদিন দেখা করতে দিতে হবে। এমনকি কোনো বন্দি অসুস্থ থাকলে তার কক্ষে এবং সেলে দেখা করানোর কথা বলা আছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন- আগামী শুক্রবার বিকাল তিনটায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সারা দেশের জেলা ও থানায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। জেলা ও থানার নেতারা তাদের সুবিধামতো সময়ে এ কর্মসূচি পালন করবেন। আশা করি, এবিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমাদের এ কর্মসূচি পালনে সহযোগিতার সুযোগ দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status