বাংলারজমিন

সর্বস্বান্ত যুবসমাজ

রংপুরে পথে পথে বাজির ফাঁদ

রেজাউল করিম পান্না, বদরগঞ্জ (রংপুর) থেকে

১৬ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

আইপিএলকে ঘিরে সম্প্রতি রংপুরে বাজির বড় আসর বসেছিল। সেখানে কোটি কোটি টাকার ক্রিকেট বাণিজ্য হয়েছে। অনেকেই এ জুয়ায় অংশ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কেউবা বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করেও ক্রিকেট বাজির টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ বাজির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যাও করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। কারো কারো দাম্পত্য জীবনে সৃষ্টি হয়েছে চরম অশান্তি। কারো ভেঙেছে সংসার। এরই মধ্যে আবার বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা নিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসেছিল বাজির আসর। ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বের খেলা ঘিরে এ অঞ্চলে আয়োজন চলেছে ফুটবল জুয়ার আসর। বিভিন্ন পেশার অনেকেই এ জুয়ায় অংশ নিয়ে ইতিমধ্যেই নিঃস্ব হয়েছেন। এরপর ফাইনাল খেলাকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার বাজি হয়েছে। তারা এরই মধ্যে বাজি ধরতে তাদের নিয়োজিত ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে। তবে প্রশাসনের লোক দেখানো তৎপরতা থাকলেও কার্যকর কিছুই হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বাজিকররা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রংপুর মহানগরসহ জেলার ৮ উপজেলার হাটবাজার, পাড়া-মহল্লা, সড়কের মোড়ে দোকানে বসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সহজ-সরল মানুষ এ জুয়ায় অংশ নিচ্ছেন। সবচেয়ে বড় বাজির আসর বসছে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হোস্টেল ও ছাত্রাবাসগুলোতে। কেউ টিভিতে খেলা দেখে বাজি ধরছে। কেউবা মোবাইল ফোনে মাধ্যমে, কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাজিতে অংশ নিচ্ছে। তবে বাজিতে অংশ নেওয়া অধিকাংশরাই উঠতি বয়সের তরুণ-যুবক। সরজমিন রংপুরনগরীর মডার্ন মোড়, লালবাগ, হারাগাছ, মেডিকেল মোড়, লালকুটি, শালবন, মুলাটল, ধাপ, স্টেশন কলোনিসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা গেছে, স্কুল-কলেজের ছাত্র, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বাজি ধরতে দ্বিধা করছে না। মাদকের মতো নেশায় পরিণত হয়েছে বাজিধরা। তারা ক্রিকেটে রান, বল ও ওভারপ্রতি বাজি ধরছে। আর ফুটবলে প্রতিটি খেলায় এক একটি দলের পক্ষে ১ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় বাজি ধরার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে পৌরশহরের থানা মোড়, গরুহাটি, কথাকলি রোড, সাহাপুর বাসটার্মিনাল, বালুয়াভাটা রেলঘুমটি, কলেজ রেলঘুমটি এলাকায় বাজি নিয়ে চলছে মাতামাতি। বদরগঞ্জের রাধানগর ইউনিয়নের লালদীঘি, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কচুবাড়ী, বিচিবাড়ী, রামনাথপুর ইউনিয়নের টেকসেরহাট, দামোদরপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট, কালুপাড়া ইউনিয়নের গুটিরডাঙ্গা, লোহানীপাড়া ইউনিয়নের মন্ডলেরহাট ও কাঁচাবাড়ী, গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজারে দেদার চলছে বাজি নিয়ে হইচই। এদিকে গংগাচড়া উপজেলা শহর, আলমবিদিতর ইউনিয়নের মন্ডলেরহাট, বড়বিল ইউনিয়নের মনছনা, বেতগাড়ী ইউনিয়নের বেতগাড়ী হাটে জমজমাট জুয়ার আসর বসছে। মিঠাপুকুর উপজেলার শটিবাড়ী, জায়গীর, বৈরতী হাট, মহাসড়কের আশপাশসহ উপজেলার শহরের বিভিন্ন দোকানে প্রতিদিনই বসছে ফুটবল ও ক্রিকেট বাজির বড় আসর। পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের ছেচাকান্দি ও সৈয়দপুরবাজার, ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানাহাট, কল্যাণী ইউনিয়নের বিয়ারী বাজার এলাকায় বসছে প্রতিদিন বাজির আসর। রংপুর সদরের মমিনপুর, সদ্য পুষ্করনী ইউনিয়নের পালিচড়া, চন্দনপাট ইউনিয়নের লাহিড়ীরহাটসহ বিভিন্ন হাট বাজারে ফুটবল ও ক্রিকেট বাজির রমরমা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও কাউনিয়া ও পীরগঞ্জ উপজেলার হাট বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একই চিত্র দেখা গেছে। এসব হাটে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সহজ সরল মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। তারা বাজিকরদের পাতা ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব্ব হচ্ছেন। ১৫ই জুলাই ফাইনালকে ঘিরে বাজিকরদের মধ্যে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র বেলাল হোসেন ও হারাগাছ পৌর শহরের বাসিন্দা নুর হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুটবলে সবাই বাজি ধরে না। কিন্তু ক্রিকেটে সব পর্যায়ের লোকজন বাজি ধরে। তারা বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে, মোবাইল ফোনে বাজি ধরছে। তারা আরো বলেন, সব এলাকায় বাজি ধরিয়ে দিতে ডিলার রয়েছে এবং বাজি ধরার নিজস্ব কিছু ভাষাও রয়েছে। ডিলাররা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকার ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাজি ধরিয়ে দিচ্ছে। এর বিনিময়ে তারা হাজারে ৫০ টাকা করে নিচ্ছে বলে জানান ওই ভুক্তভোগীরা। পীরগাছা উপজেলার বাজিকর লিটন, পলাশ ও বদরগঞ্জ উপজেলার রাসেল ও প্রিন্সসহ অনেকেই জানান, বাজির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করেছে। হাজার হাজার মানুষ পথে বসেছে। এরপরও প্রতিদিনই বাজিতে ঝুঁকে পড়ছে অসংখ্য মানুষ।একই কথা বলেন, রংপুর মহানগরের মডার্ন মোড় এলাকার বাজিকর শিমুল আহম্মেদ ও স্টেশন এলাকার বেলায়েত হোসেন। বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, কারো বিরুদ্ধে ক্রিকেট ও ফুটবল নিয়ে বাজি ধরার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবিষয়ে রংপুর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্রিকেট ও ফুটবল বাজিকরদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কিছুই করার নেই। যারা এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status