দেশ বিদেশ

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা

খালেদার আপিল শুনানি ফের আজ

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার করা আপিলের  শুনানি গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো শেষ হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আজ বেলা ২টায় আবারো শুনানি হবে। এ মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনের (কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ) আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ গতকাল শুনানিকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উল্লেখ করলে আদালত বলেন, ‘কোন মামলাই পলিটিক্যাল মামলা নয়।’  
গতকাল খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান ও এজে মোহাম্মদ আলী। শুনানিতে আব্দুর রেজাক খান এই মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার (প্রথম সাক্ষী) বক্তব্য নথি থেকে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘এই মামলার প্রথম সাক্ষী হারুনুর রশিদ ছাড়া আর কেউ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বলেননি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মামলার নথিপত্রে খালেদা জিয়ার কোন স্বাক্ষর নেই। এ মামলার প্রথম অনুসন্ধান রিপোর্টের বাইরে সাক্ষ্য দিয়েছেন এই মামলার প্রথম সাক্ষী ও আইও হারুনুর রশিদ।’ এই মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, আমিনুল ইসলাম, কায়সার কামাল, একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির। রোববার এ মামলায় খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন এক আদেশে এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন ১৯শে জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করেন আদালত।
শুনানিতে আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান বলেন, মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী হারুনুর রশিদ ছাড়া ৩২ সাক্ষীর কোনো সাক্ষী বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বলেনি। আব্দুর রেজাক খান বলেন, এ মামলার নথিতে ব্যাংকে হিসাব খোলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্টে কার হাতের লেখা সে বিষয়ে কোন প্রশ্ন নেই। এ মামলায় ব্যাংকের হিসাবসহ কোনো ডকুমেন্টে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নেই। তিনি আরো বলেন, এ মামলার প্রথম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নুর আহম্মদ যে অনুসন্ধান রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছিলেন সেখানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু আসেনি। সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু ছিল না। এ মামলার প্রথম সাক্ষী অনুসন্ধান রিপোর্টের বাইরে সাক্ষ্য দিয়েছেন। শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার অন্য আইনজীবী এজে মোহাম্মাদ আলী আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, এই আপিলের পেপার বুক অসম্পূর্ণ। এ অবস্থায়  মামলার শুনানি করা যায় না। এ সময় আদালত দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে খুরশীদ আলম খান আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা (আসামিপক্ষ) যে আটটি পয়েন্টের কথা বলেছেন তা পেপার বুকে আছে। এ পর্যায়ে আদালত দুদকের আইনজীবীকে তা দেখাতে বলেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ নথি দেখার পরও দুদকের আইনজীবী পেপারবুকের সূচিতে তা দেখাতে পারলেও মুল কাগজপত্রে তা দেখাতে পারেনি। এরপর আদালত দুদকের আইনজীবীকে সোমবার (আজ) ওই পয়েন্টগুলো দেখানোর কথা বলেন এবং সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে বলে জানান।
এরপর আদালত মামলার পেপারবুক থেকে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য পড়তে বললে আইনজীবী এজে মোহাম্মদ কিছুটা আপত্তি জানিয়ে বলেন, এসব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ছাড়া কিভাবে আমরা শুরু করব। এরপর আদালত আবারো তাকে শুনানি শুরু করার কথা বললে আবারো এজে মোহাম্মদ আলী একই কারণ দেখান। এ সময় আদালত কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে এজে মোহাম্মদ আলীর উদ্দেশ্যে বলেন, কোর্ট যা বলে সেটি ফলো করার চেষ্টা করেন। কোর্টকে সহযোগিতা করুন। আপনারা অবশ্যই ডকুমেন্ট পাবেন।
এ সময় আদালত আইনজীবী আহসানউল্লাহর (এ মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত কাজী সালিমুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদের আইনজীবী) উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি কি প্রস্তুত? প্রথম সাক্ষীর বক্তব্য পড়বেন?  
জবাবে আইনজীবী আহসান উল্লাহ বলেন, মাই লর্ড, এটি পলিটিক্যাল  মামলা। তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) আগে শুরু করুক।
এ সময় আদালত বলেন, ‘কোনো মামলাই পলিটিক্যাল মামলা নয়।’ একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান এ মামলার প্রথম সাক্ষীর বক্তব্য পড়া শুরু করেন। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছর ও অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে আইনজীবীদের মাধ্যমে সাজা থেকে খালাস এবং জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। গত ১২ই মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশ গত ১৬ই মে এক আদেশে বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার করা আপিল ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। আপিল নিষ্পত্তিতে সময়ের বাধ্যবাধকতার আদেশ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা আবেদনটি গত বৃহস্পতিবার এক আদেশে স্টা্যন্ডওভার রাখেন আপিল বিভাগ। তবে, ওই সময়ের (৩১শে জুলাই) মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি না হলে সময়ের আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জানান সর্বোচ্চ আদালত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status