বিশ্বজমিন
নতুন সুপারস্টার হবেন মদরিচ অথবা এমবাপ্পে
লুথার ম্যাথিউস
১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১২:০৩ অপরাহ্ন
এটা হতে যাচ্ছে এমন এক বিশ্বকাপ, যেখানে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আর রোববার আমরা দেখতে যাচ্ছি বিশ্বকাপ ফুটবলের নতুন এক বিজয়ীকে। শুধু তাই নয়, আমরা আরও দেখতে যাচ্ছি কোনো একজন ব্যক্তি বা খেলোয়াড়কে, যিনি এক দশকের ইতিহাসকে মুছে দিচ্ছেন।
১৯৯১ সালে ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার হিসেবে আমার নাম প্রথমবার ঘোষণা করার জন্য আমি গর্বিত। গত ১০ বছর ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিয়নেল মেসি। তারা প্রতিজন ৫ বার করে এ পুরস্কার জিতেছেন।
রোববার যখন বিশ্বকাপের শেষ বাঁশি বাজবে তখন আমি মনে করি নতুন একজন ব্যালন ডি’অর বিজয়ী পেয়ে যাবো আমরা। তিনি হতে পারেন লুকা মদরিচ অথবা কিলিয়ান এমবাপ্পে। আমি এমবাপ্পেকে খুব ভালবাসি। তিনি ক্ষিপ্ত গতি সম্পন্ন। বল নিয়ে অতি দ্রুত ছোটেন। সবাইকে পিছনে ফেলে দ্রুত গতিতে পৌঁছে যান লক্ষ্যে। তার খেলা দেখলে মনে হয় তিনি গ্রেট। তিনিই হবেন আগামী ফুটবলের সুপারস্টার। আর ক্রোয়েশিয়ার জন্য মদরিচ হলেন একজন চমক সৃষ্টিকারী নাম। পুরো মাঠ চষে বেড়ানোর সক্ষমতা আছে মদরিচের। তিনি সব সময় দৌড়ান। তাই এই ফুটবল যুদ্ধে প্রাধান্য বিস্তারের লড়াইটাই শুধু হবে না তার ও এন’গোলো কান্তের মধ্যে। ক্রোয়েশিয়া দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মদরিচ। তিনি চমৎকার শারীরিক সুস্থতায় রয়েছেন। তার টিমমেটদের যেখানে তাকে প্রয়োজন, তিনি নিজেকে সেখানেই কিভাবে যেন ফুটিয়ে তোলেন। অর্থাৎ তিনি সেখানে গিয়ে হাজির। ফ্রান্স ভাল করে জানে যে, মদরিচের পায়ে বেশি সময় বল রাখতে দেয়া যাবে না। তাকে ফাঁকা রাখা যাবে না। তাকে আনচেকড রাখা যাবে না।
এই রাশিয়াতে যখন বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়েছিল তখন কেউ ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে ভেবেছিলেন বলে আমি মনে করি না। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত ভাবতে হচ্ছে। তারা ভাবিয়েছে। কেন? তার উত্তর তারা প্রতিটি ম্যাচে দিয়েছে।
ফ্রান্সের চেয়ে অনেক বেশি ফুটবল তারা খেলেছে। যেটা এক্ষেত্রে একটি বড় ব্যবধান এনে দিতে পারে। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ম্যাচ ছিল অনুল্লেখ্য। তারা নকআউট পর্বে তিনটি খেলায়ই নির্ধারিত ৯০ মিনিটে জয় পেয়েছে। বিশ্বকাপে তারা আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে। এটা হতে পারে এবার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় গেম। একটি ফ্যান্টাসি। কিন্তু উরুগুয়ে ও বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলায় তাদেরকে খুব বেশি কর দিয়ে খেলতে হয় নি। ক্রোয়েশিয়াকে তিনটি ম্যাচই খেলতে হয়েছে ১২০ মিনিট। প্রতিটিতে অতিরিক্ত সময় খেলতে হয়েছে। এরপর হয়েছে টাইব্রেকার।
ক্রোয়েশিয়া দলে খেলোয়াড়দের বয়স অপেক্ষাকৃত বেশি। তাদের অনেকেই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এর পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেবেন। তাদের এমন বয়স সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা তাদের সমৃদ্ধ। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ জয় করতে পারবেন বলেই মনে হয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মদরিচ, ইভান রাকিটিচ ও মারিও মুনজুকিচের মতো খেলোয়াড়রা পরিস্কার প্রমাণ দিয়েছেন যে, তাদের উদ্দেশ্য আছে। শক্তি আছে। বিশ্বকাপ জেতার জন্য তাদের গুণগত যোগ্যতা আছে।
অন্যদিকে ফ্রান্সে রয়েছে অনেক দ্রুত গতিসম্পন্ন খেলোয়াড়। তাদের গতির কাছে হয়তো অস্বস্তিতে পড়তে পারে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের স্কোয়াডে এমন মিসাইল শুধু এমবাপ্পেই নন। আছেন অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান এবং ব্লেইস মাতুইদি। প্রকৃত এক ছোবল দিয়ে তারা আক্রমণ করে বসতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাদের সম্পদ শুধু গতি নয়। তারা একই সঙ্গে স্মার্টও। ক্রোয়েশিয়ার পায়ের ভিতর দিয়ে তারা এগিয়ে যেতে পারেন। তাদেরকে ক্রোয়েশিয়া এক্ষেত্রে থামাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
আমার মনে হয় এক্ষেত্রে ফ্রান্স বেশি সুসংগঠিত দল। তাদের যে ডিফেন্স আছে সেটাই বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাফায়েল ভারানি ও স্যামুয়েল উমতিতি সারা টুর্নামেন্টে শক্তি ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে চমৎকারবাবে খেলেছেন। একই সঙ্গে তারা দু’জনেই দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি করে গোল করেছেন। তারা ফ্রান্সকে দিয়েছেন একটি প্রকৃত হুমকি সৃষ্টি করার মতো সক্ষমতা। যখনই ফ্রান্সের ডেলিভারি যথার্থ হয় তখনই তারা ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।
এই ফাইনালটি হচ্ছে এমন দুটি দলের মধ্যে যারা পুরোপুরি আলাদা স্টাইলে খেলে। আলাদা ধরন অনুসরণ করে। এ জন্যই হয়তো আজকের এ ম্যাচটি এত বেশি ব্যতিক্রম হয়ে উঠতে পারে।
মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বিজয়ী হতে চাইবে ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা কঠিন সময়েও টিকে থেকেছে। ক্রোয়েশিয়ার জন্য কোয়ালিটি হলো তাদের আক্রমণভাগ। যদি তারা সামনে উঠে যেতে পারে তাহলে বিশ্বের যেকোনো টিমকে পরাজিত করার সামর্থ রাখে। তাদেরকে বিজয়ী দেখতে পেলে আমি খুশি হবো।
কিন্তু কেলিয়ান এমবাপ্পে ও এন’গোলো কান্তের মতো মাঝমাঠে জ্বলে উঠা তারকাদের নিয়ে ফ্রান্স চমৎকার অবস্থানে আছে। তাদের ডিফেন্স এবং আক্রমণভাগের মধ্যে রয়েছে ভারসাম্য।
(লুথার ম্যাথিউস ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী জার্মান দলের সাবেক অধিনায়ক। অনলাইন দ্য সান পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখার অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ আবুল হোসেন)
১৯৯১ সালে ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার হিসেবে আমার নাম প্রথমবার ঘোষণা করার জন্য আমি গর্বিত। গত ১০ বছর ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিয়নেল মেসি। তারা প্রতিজন ৫ বার করে এ পুরস্কার জিতেছেন।
রোববার যখন বিশ্বকাপের শেষ বাঁশি বাজবে তখন আমি মনে করি নতুন একজন ব্যালন ডি’অর বিজয়ী পেয়ে যাবো আমরা। তিনি হতে পারেন লুকা মদরিচ অথবা কিলিয়ান এমবাপ্পে। আমি এমবাপ্পেকে খুব ভালবাসি। তিনি ক্ষিপ্ত গতি সম্পন্ন। বল নিয়ে অতি দ্রুত ছোটেন। সবাইকে পিছনে ফেলে দ্রুত গতিতে পৌঁছে যান লক্ষ্যে। তার খেলা দেখলে মনে হয় তিনি গ্রেট। তিনিই হবেন আগামী ফুটবলের সুপারস্টার। আর ক্রোয়েশিয়ার জন্য মদরিচ হলেন একজন চমক সৃষ্টিকারী নাম। পুরো মাঠ চষে বেড়ানোর সক্ষমতা আছে মদরিচের। তিনি সব সময় দৌড়ান। তাই এই ফুটবল যুদ্ধে প্রাধান্য বিস্তারের লড়াইটাই শুধু হবে না তার ও এন’গোলো কান্তের মধ্যে। ক্রোয়েশিয়া দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মদরিচ। তিনি চমৎকার শারীরিক সুস্থতায় রয়েছেন। তার টিমমেটদের যেখানে তাকে প্রয়োজন, তিনি নিজেকে সেখানেই কিভাবে যেন ফুটিয়ে তোলেন। অর্থাৎ তিনি সেখানে গিয়ে হাজির। ফ্রান্স ভাল করে জানে যে, মদরিচের পায়ে বেশি সময় বল রাখতে দেয়া যাবে না। তাকে ফাঁকা রাখা যাবে না। তাকে আনচেকড রাখা যাবে না।
এই রাশিয়াতে যখন বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়েছিল তখন কেউ ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে ভেবেছিলেন বলে আমি মনে করি না। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত ভাবতে হচ্ছে। তারা ভাবিয়েছে। কেন? তার উত্তর তারা প্রতিটি ম্যাচে দিয়েছে।
ফ্রান্সের চেয়ে অনেক বেশি ফুটবল তারা খেলেছে। যেটা এক্ষেত্রে একটি বড় ব্যবধান এনে দিতে পারে। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ম্যাচ ছিল অনুল্লেখ্য। তারা নকআউট পর্বে তিনটি খেলায়ই নির্ধারিত ৯০ মিনিটে জয় পেয়েছে। বিশ্বকাপে তারা আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে। এটা হতে পারে এবার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় গেম। একটি ফ্যান্টাসি। কিন্তু উরুগুয়ে ও বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলায় তাদেরকে খুব বেশি কর দিয়ে খেলতে হয় নি। ক্রোয়েশিয়াকে তিনটি ম্যাচই খেলতে হয়েছে ১২০ মিনিট। প্রতিটিতে অতিরিক্ত সময় খেলতে হয়েছে। এরপর হয়েছে টাইব্রেকার।
ক্রোয়েশিয়া দলে খেলোয়াড়দের বয়স অপেক্ষাকৃত বেশি। তাদের অনেকেই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এর পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেবেন। তাদের এমন বয়স সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা তাদের সমৃদ্ধ। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ জয় করতে পারবেন বলেই মনে হয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মদরিচ, ইভান রাকিটিচ ও মারিও মুনজুকিচের মতো খেলোয়াড়রা পরিস্কার প্রমাণ দিয়েছেন যে, তাদের উদ্দেশ্য আছে। শক্তি আছে। বিশ্বকাপ জেতার জন্য তাদের গুণগত যোগ্যতা আছে।
অন্যদিকে ফ্রান্সে রয়েছে অনেক দ্রুত গতিসম্পন্ন খেলোয়াড়। তাদের গতির কাছে হয়তো অস্বস্তিতে পড়তে পারে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের স্কোয়াডে এমন মিসাইল শুধু এমবাপ্পেই নন। আছেন অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান এবং ব্লেইস মাতুইদি। প্রকৃত এক ছোবল দিয়ে তারা আক্রমণ করে বসতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাদের সম্পদ শুধু গতি নয়। তারা একই সঙ্গে স্মার্টও। ক্রোয়েশিয়ার পায়ের ভিতর দিয়ে তারা এগিয়ে যেতে পারেন। তাদেরকে ক্রোয়েশিয়া এক্ষেত্রে থামাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
আমার মনে হয় এক্ষেত্রে ফ্রান্স বেশি সুসংগঠিত দল। তাদের যে ডিফেন্স আছে সেটাই বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাফায়েল ভারানি ও স্যামুয়েল উমতিতি সারা টুর্নামেন্টে শক্তি ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে চমৎকারবাবে খেলেছেন। একই সঙ্গে তারা দু’জনেই দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি করে গোল করেছেন। তারা ফ্রান্সকে দিয়েছেন একটি প্রকৃত হুমকি সৃষ্টি করার মতো সক্ষমতা। যখনই ফ্রান্সের ডেলিভারি যথার্থ হয় তখনই তারা ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।
এই ফাইনালটি হচ্ছে এমন দুটি দলের মধ্যে যারা পুরোপুরি আলাদা স্টাইলে খেলে। আলাদা ধরন অনুসরণ করে। এ জন্যই হয়তো আজকের এ ম্যাচটি এত বেশি ব্যতিক্রম হয়ে উঠতে পারে।
মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বিজয়ী হতে চাইবে ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা কঠিন সময়েও টিকে থেকেছে। ক্রোয়েশিয়ার জন্য কোয়ালিটি হলো তাদের আক্রমণভাগ। যদি তারা সামনে উঠে যেতে পারে তাহলে বিশ্বের যেকোনো টিমকে পরাজিত করার সামর্থ রাখে। তাদেরকে বিজয়ী দেখতে পেলে আমি খুশি হবো।
কিন্তু কেলিয়ান এমবাপ্পে ও এন’গোলো কান্তের মতো মাঝমাঠে জ্বলে উঠা তারকাদের নিয়ে ফ্রান্স চমৎকার অবস্থানে আছে। তাদের ডিফেন্স এবং আক্রমণভাগের মধ্যে রয়েছে ভারসাম্য।
(লুথার ম্যাথিউস ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী জার্মান দলের সাবেক অধিনায়ক। অনলাইন দ্য সান পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখার অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ আবুল হোসেন)