প্রথম পাতা

ইতিহাস গড়লো বেলজিয়াম

স্পোর্টস ডেস্ক

১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

সেমিফাইনালে হারের পর দুইদলের কোচই মাথা উঁচু রেখে টুর্নামেন্ট শেষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে শেষ হাসি হাসলো বেলজিয়াম। তাতে লেখা হলো নতুন ইতিহাস। গতরাতে সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে মাঠ ছাড়ে ইডেন হ্যাজার্ডের দল। সোনালী প্রজন্মের হাত ধরে নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা সাফল্যের দেখা পায় বেলজিয়াম। রাশিয়া বিশ্বকাপে  ইংলিশদের শেষটাও হলো বিষাদের মধ্য দিয়ে। গ্রুপ পর্বের পর স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও বেলজিয়ামের বিপক্ষে হার দেখলো ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে অর্ধশতাব্দীতে সেরা সাফল্য পাওয়া হলো না ৬৬’র চ্যাম্পিয়নদের।

এর আগে একবারই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। তাতে দুই দলেরই হারের স্মৃতি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হার দেখে ইউরোপের ‘ডার্ক হর্স’ বেলজিয়াম। আর ১৯৯০ আসরে তৃতীয় হওয়ার লড়াইয়ে স্বাগতিক ইতালির বিপক্ষে ২-১ গোলে হারে ইংল্যান্ড।

গতকাল ৪ মিনিটের গোলে দুর্দান্ত শুরু পায় বেলজিয়াম। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরেই সতীর্থদের উদযাপনের মধ্যমণি বনে যান রাইটব্যাক টমাস মুনিয়ের। বাম প্রান্ত দিয়ে নাসের চাদলির ক্রস জালে পাঠান তিনি। ১-০ গোলে শেষ হয় প্রথমার্ধ। ৫৭ শতাংশ বল দখলে রেখে ম্যাচে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। তবে আক্রমণাত্মক ফুটবলে কিছুটা এগিয়ে ছিল বেলজিয়াম। গোলমুখ তাক করে ৮টি শট নেন হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনা-লুকাকুরা। যদিও ২টি শট থাকে পোস্টে। বিপরীতে কেইন-স্টার্লিংদের ৬ প্িরচেষ্টার তিনটি শট ছিল সরাসরি গোলমুখে। তিনটি সেভ করেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কুরতোয়া। ১টি সেভ করেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। দলকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ পান ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন। ২৩ মিনিটে তার লক্ষ্যভ্রষ্ট শট চলে যায় পোস্টের বাম পাশ দিয়ে। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায় বেলজিয়াম। কেভিন ডি ব্রুইনার পাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে গোল পেতে পারতেন রোমেলু লুকাকু। ৩৫ মিনিটে ডি-বক্স থেকে বেলজিয়ান ডিফেন্ডার টবি অলডারভিরাল্ড ওভারহেড কিক ক্রসবারের ঠিক উপর দিয়ে চলে যায়। বিরতির পর সমতায় ফেরার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন কেইন।

ডি-বক্সে জেসে লিনগার্ডের বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি। উল্টো ২ মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো বেলজিয়াম। কিন্তু এবারও ডি ব্রুইনার সহজ পাস পায়ে রাখতে পারেননি লুকাকু। ৬১ মিনিটে লুকাকুকে তুলে নেন কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। মাঠে নামেন দ্রিস মার্টেন্স। ৭০ মিনিটে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় ইংল্যান্ড। কুরতোয়ার গায়ের ওপর দিয়ে আলতো টোকায় বল বাড়ান এরিক ডায়ার। দৌড়ে এসে গোল লাইন থেকে ডায়ারকে নিরাশ করেন বেলজিয়ান ডিফেন্ডার অলডারভিরাল্ড। ৭৯ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে মুনিয়েরের বুলেট শট এক হাতে প্রতিহত করেন পিকফোর্ড। ৮২ মিনিটে আর পারেননি তিনি। বেলজিয়ামকে দ্বিতীয় গোল এনে দেন অধিনায়ক হ্যাজার্ড। শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফেরা হয়নি ইংলিশদের। ২-০ গোলের জয়ে ইংল্যান্ডকে হতাশায় ডুবিয়ে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়ে বেলজিয়াম।

পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজান ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। বাদ পড়েন ডেলে আলি, জর্ডান হেন্ডারসন, অ্যাশলে ইয়াং, কাইল ওয়াকার ও জেসে লিনগার্ড। একাদশে ডাক পান ফিল জোন্স, ড্যানি রোজ, এরিক ডায়ার, রুবেন লফটাস চিক ও ফাবিয়ান ডেলফ। অন্যদিকে দুইটি পরিবর্তন আনেন বেলজিয়ামের স্প্যানিয়ার্ড কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। হলুদ কার্ডের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরেন মুনিয়ের। মাঝমাঠে নামেন উঠতি মিডফিল্ডার ইউরি তিয়েলেমান্স। একাদশে সুযোগ পাননি মিডফিল্ডার মারুয়ান ফেলাইনি ও মুসা দেম্বেলে।

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ এবারের আসরে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি দাঁড় করায় ইংল্যান্ড ও বেলজিয়ামকে। গ্রুপ পর্বে দুইদলের প্রকৃত লড়াই দেখেনি দর্শকরা। আগেই নকআউট পর্ব নিশ্চিত করায় নিয়মিত একাদশের বেশির ভাগ খেলোয়াড়কে বিশ্রামে রাখেন দুই দলের কোচ। গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে ১-০ গোলের জয় পায় বেলজিয়াম। গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে একাদশে ৯টি পরিবর্তন আনেন মার্টিনেজ। সাউথগেট ৮ পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজান। এতে যে কোনো ধরনের ফুটবলে এক ম্যাচের শুরুর একাদশে রেকর্ড ১৭টি পরিবর্তন দেখে দর্শকরা।

শিরোপা দৌড়ে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড। শেষ চারে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও ২-১ গোলে হার দেখে ইংলিশরা। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার ফাইনালে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্ম। ফ্রান্সের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের হতাশায় ডোবে ইডেন হ্যাজার্ডের দল।

ইংল্যান্ডের জার্সিতে অনন্য রেকর্ড গড়া হয়নি অধিনায়ক হ্যারি কেইনের। এক গোল করলেই গ্যারি লিনেকারকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়তেন তিনি। গোল না পেলেও এবারের আসরে ‘গোল্ডেন বুট’ জয়ের পথে আছেন কেইন। ৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লুকাকু ৪ গোল নিয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করলেন। কেইনকে ছুঁতে হলে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করতে হবে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। ফ্রান্সের আরেক তারকা আন্তোইন গ্রিজম্যানের নামের পাশেও ৩ গোল। ক্রোয়েশিয়ার কারো দুই গোলের বেশি নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status