শেষের পাতা

ফরহাদ হত্যার নির্দেশ আসে বিদেশ থেকে

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাড্ডার আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হত্যার নির্দেশ আসে বিদেশ থেকে। পলাতক রমজানই ফরহাদকে হত্যার নির্দেশ দেয়  । আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তাকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাতেন বলেন, ফরহাদকে হত্যার জন্য রমজান তার ছোট ভাই সুজন ও তার সহযোগী জাকির এবং আরিফকে নির্দেশ দেন। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে ভারতে থাকা আসিক, আমেরিকায় থাকা মেহেদী জড়িত। তাদের নির্দেশেই ১৫ই জুন বাড্ডার বায়তুস সালাম জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজ    

পড়ে বের হওয়ার পরপরই ফরহাদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর ফরহাদের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর। ১৩ই জুন ডিবির এক বিশেষ অভিযানে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. জাকির হোসেন, মো. আরিফ মিয়া, মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, মো. বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনি। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগাজিন ও ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
বাতেন বলেন, ফরহাদ হত্যা মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে সুজনকে গত ১০ই জুলাই গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দির ভিত্তিতে ১৩ই জুলাই গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. জাকির হোসেন ও মো. আরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় জাকির হোসেনের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি এবং আরিফ মিয়ার কাছ থেকে ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে এই দুইজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শাহ আলী এলাকায় এক অভিযান চালিয়ে মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, মো. বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাতেন  বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও ডিশ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিয়ে রমজানের সঙ্গে ফরহাদের দ্বন্দ্ব চলছিল। কে কোন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করবে। কোন এলাকা থেকে চাঁদা উঠাবে- এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফরহাদ প্রতিবাদ করে আসছিল। পরে শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, বিদেশে পলাতক মেহেদী ও আসিক ফরহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে রমজান বিদেশে পালিয়ে যায়। তবে তার আপন ছোট ভাই সুজন এবং সহযোগী জাকির ও আরিফের ওপর দায়িত্ব দিয়ে যায়। অপরদিকে বিদেশ পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী তার বাংলাদেশের কমান্ডার অমিতকেও ফরহাদকে হত্যার নির্দেশনা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে অমিত তার ভাড়াটে কিলার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদকে দায়িত্ব দেয়। নির্দেশ মোতাবেক ঘটনার দিন সকালে তারা উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে গিয়ে মিলিত হয়। অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয় নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ। আর অমিতের সঙ্গে ব্যাকআপ হিসেবে থাকে সাদ। ওই দিন বেলা ১২টার দিকে সন্ত্রাসী রমজানের ছোট ভাই সুজন কিলিং মিশনে অংশ নেয়া তিনজন ও ব্যাকআপ সাদকে জাকিরের সঙ্গে অস্ত্র গ্রহণের জন্য একটি রিকশা গ্যারেজে পাঠায়। চারজনকেই অস্ত্র বুঝিয়ে দেয় মেহেদীর আরেক আস্থাভাজন পুলক। এরপর জাকির তাদেরকে নিয়ে আরিফের কাছে পৌঁছে দেয়। পরিকল্পনামাফিক আরিফ কিলারদের মসজিদের কাছে নিয়ে ফরহাদকে চিনিয়ে দেয়। নামাজ পড়ে ফরহাদ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিলাররা উপর্যুপরি গুলি করে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে গুলশান চেকপোস্টে আটকালে সেখানেও তারা গুলি করে। পরবর্তীতে কিলাররা তাদের অস্ত্রগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর কমান্ডার অমিতের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য পল্লবী যায়। অমিত কিলারদেরকে ওই সময় ১ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন আরো জানান, ৪ঠা জুলাই ডিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী নিহত হন। পরবর্তীতে জানা যায় তারা ফরহাদ হত্যা মামলার আসামি নুর ইসলাম ও মেহেদীর কমান্ডার অমিত। এছাড়া গ্রেপ্তার সবাই পেশাদার খুনি। টাকার বিনিময়ে তারা খুনখারাবি করে থাকে। বিভিন্ন গ্রুপের কাছ থেকে তারা মাসিক চাঁদাও পায়। মূলত বিদেশ থেকে নির্দেশ পেয়েই তারা বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেয়। গ্রেপ্তারকৃত এসব আসামির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বাতেন বলেন, অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তবে আমাদের কাছে তারা অপরাধী- এটাই বড় বিষয়। বাড্ডা এলাকার নিয়ন্ত্রণ কারা করছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাতেন বলেন, বাড্ডা-গুলশান এলাকার নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক ও মেহেদী।

তার মধ্যে মেহেদী আমেরিকায় আর আশিক ভারতে থাকে। তাদের গ্রুপের আরো কয়েকজন রয়েছে সুইডেন, ফ্রান্স ও মালয়েশিয়ায়। তবে আশিক বিএনপির সময়ে বিশাল একটি ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করতো। বিদেশে বসে তারা রাজধানীর বিভিন্ন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করছে। তারা চাইছে আবার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status