শেষের পাতা

গোলটেবিলে নাগরিক সমাজ

দমন-পীড়নের পথে হাঁটলে তা ভালো পরিণতির দিকে যায় না

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে সরকার দমন-পীড়নের পথে হাঁটলে তা ভালো পরিণতির দিকে যায় না। যেসব বিষয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয় তা দূর করাই সরকারের কাজ। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায্য দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার: কোনো পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক  গোলটেবিল আলোচনায় উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রফিক আহমেদ সিরাজী। এতে বলা হয়, দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রশ্ন, দেশে কি আদৌ কোনো আইনের শাসন আছে? যদি থাকে, তাহলে আমাদের প্রশ্ন হলো কোন আইনের ভিত্তিতে এবং কার নিদের্শে ছাত্রলীগের সেই নেতাকর্মীরা দেশের নাগরিকদের ওপর নিপীড়ন করার বৈধতা পেয়েছে? আর কোন আধিকার বলেই বা তারা এ ধরনের অপরাধ  করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি সময়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিদ্যারয় ও কলেজের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও সরকারি চাকরি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি উত্থাপিত হচ্ছে, যা একটি সক্রিয় আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশই নয়, একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালাচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। হামলার সময় নিষ্ঠুরভাবে মারপিট করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে লাঠি, লোহার রড এমনকি হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। এসব হামলায় এরই মধ্যে গুরুতর আহত অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে এবং চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এই মুহূর্তে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৭ জন ৪টি মামলায় কারাগারে আছেন। রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ৪ জনকে। এর মধ্যে তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে ভাঙচুর, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার বাঁশ ও  কাঠে আগুন এবং ভাঙচুর, আন্দোলনের সময়ে শাহবাগে গাড়ি আটকে রাখা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলা বিভিন্ন সময়ে শত শত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা হয়েছিল।

বক্তব্যে বলা হয়, আন্দোলকারীরা এদেশের নাগরিক। তাদের মতপ্রকাশের বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সংবিধানেই লিপিবদ্ধ।  শিক্ষার্থীদের শিকার অধিকার রক্ষার্থে এবং শিক্ষা পাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করার পরিবর্তে ঢাবি ও রাবির ভিসির কাছ থেকে এ আন্দোলন ও আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যে পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

বক্তব্যে বলা হয়, যেসব কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দেয়, সেগুলো দূর না করে সরকার দমনপীড়নের পথে হাঁটলে তা ভালো পরিণতির দিকে যায় না। কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকারের অবস্থা স্বচ্ছ হতে হবে। নাগরিক সমাজ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। একই আন্দোলনকারী নেতাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তারের পর অহেতুক মামলায় জড়ানো এবং পুলিশি রিমান্ডে তাদের নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করারও দাবি জানানো হয় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সংবিধানে কোনো কোটার কথা নেই। কোটা সংস্কার করতে অসুবিধা  কোথায়? এটা  মেনে নিলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়তো। তিনি বলেন, নাগরিকেদরে ওপর স্টিম রোলার চলছে।
সুপ্রিম কোটের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশের ঘাড়ে ফ্যাসিস্ট সরকার চেপে বসেছে।  শিক্ষার সংস্কৃতি ধ্বংস করা হয়েছে। এ সরকারের জনগণের ওপর আস্থা নেই। জনগণের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধে নেমেছে। আসুন, এর বিরুদ্ধে পথে জাগ্রত হই।

সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, আদালতের রায় মানা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রায়ের পর্যবেক্ষণ মানা বাধ্যতামূলক নয়।
নারীনেত্রী খুশি কবিরের সঞ্চলনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, গবেষক মালেকা বেগম, আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রেজাউর রহমান লেলিন, ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী লাকী আক্তার প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status