খেলা

বিশ্লেষণ

ফাইনাল নিয়ে কোচ ও সাবেক-বর্তমান ফুটবলারদের ভাবনা

১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

‘অতিরিক্ত সময়ে খেলা ক্রোয়েশিয়ার বিপদ - হাসানুজ্জামান খান বাবলু
অনেক পথ, চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিয়ে দুই দল ফাইনালে এসেছে। ফ্রান্সের জন্য ফাইনালের আবেদনটা একরকম আর ক্রোয়েশিয়ার জন্য আরেক রকম। যেহেতু ফ্রান্স একবার বিশ্বকাপ জিতেছে তাই তাদের জন্য এটি মর্যাদা পুনরুদ্ধারের বিষয়। তাই যে কোনো ভাবেই তারা জিতে যেতে চাইবে। অন্যদিকে প্রথমবার ফাইনালে এসেছে ক্রোয়েশিয়া তাই তারা লড়াই করবে ইতিহাস সৃষ্টির জন্য। তাই লড়াই হবে সমানে সমান। তবে আমি একটি বিশেষ জায়গাতে ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখতে চাই। ক্রোয়েশিয়া ১২০ মিনিটের ৩টি ম্যাচ খেলেছে। এর মানে ওরা কিন্তু একটি ম্যাচের সময় অতিরিক্ত খেলেছে। তাই দলটি এখন বেশ ক্লান্ত। যে কারণে ফ্রান্সের সঙ্গে অতিরিক্ত সময়ে খেলা গেলে ক্রোয়েশিয়ার জন্য বড় বিপদ আছে। তবে আমার মনে হয় দুই দলই ঘর ঠিক রেখে খেলবে।

ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার দেশপ্রেমও - শেখ মোহাম্মদ আসলাম
ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া দুটি দলই সব দিক থেকে পরিপূর্ণ মাঠের লড়াইয়ে কমতি আছে বলে মনে হয় না। যদিও ফ্রান্স বেশ কিছু দিক থেকে এগিয়ে থাকবে। তাদের বড় শক্তি শ্বিকাপের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার কিন্তু এবারই প্রথম। একটি বিষয় আবার ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে দেখা গেছে ওরা কিন্তু একক শক্তিতে বা বিশেষ কিছু খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করে না। আক্রমণে গেলে এক সঙ্গে আবার ডিফেন্স করলেও একই সঙ্গে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দেখেন পিছিয়ে থেকেও কি লড়াই করেছে। তারা প্রমাণ করেছে টিম ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কারো জয় সহজ হবে না। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে ওদের দেশপ্রেম। এটি অন্যরকম একটি বিষয়। বলছি না যে ফ্রান্সের দেশপ্রেম নেই। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাস দেখেন ওরা কিন্তু লড়াকু জাতি। দেশের জন্য ওরা যেমন যুদ্ধে উজাড় করেছে তেমনি ফুটবল মাঠেও করছে। ওদের এ দেশপ্রেমটাই ফ্রান্সের জন্য আরেকটি প্রতিপক্ষ হবে।’

‘লড়াই জমবে মাঝ মাঠে’- শফিকুল ইসলাম মানিক
দুই দলের শক্তির খুব পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি না। বেশ কিছু কারণে ফ্রান্স ফাইনালে এগিয়ে থাকলেও ক্রোয়েশিয়াকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তবে ফাইনাল বলে কথা। দুই দলই লড়াই করবে সমানে সমান। এর মধ্যে খেলা জমবে আসলে মাঝ মাঠে। ফ্রান্সের দিকে পগবা, কান্তে ও টলিসো অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার মাঝ মাঠের প্রাণ ব্রোজেভিচ, রাকিটিচ, পেরিসিচ। ফাইনালে দেখবেন এই মাঝ মাঠেই লড়াই জমে উঠবে দারুণভাবে। ফ্রান্সের চেষ্টা থাকবে ক্রোয়েশিয়ার এই মাঝ মাঠের শক্তিকে গুঁড়িয়ে দেয়ার। তবে এত সহজ হবে না। তবে আমি কিন্তু ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখছি। ওরা বেশ ফুরফুরে আছে। শেষ তিন ম্যাচের অতিরিক্ত সময় খেলতে হয়নি। ইনজুরিও তেমন নেই। কিন্তু মাঠের বাইরের খেলাতে ক্রোয়েশিয়া কিন্তু পিছিয়ে। ওরা শেষ তিন ম্যাচেই খেলেছে অতিরিক্ত সময়ে। বলতে গেলে ৯০ মিনিট মাঠে একটি বাড়তি ম্যাচের সমান। আবার কিছু ইনজুরিও আছে। যে কারণে ওরা কিছু মাঠে নামার আগেই পিছিয়ে।

‘ফ্রান্সের ডিফেন্স ভাঙা কঠিন’-হাসান আল মামুন
আমি সরাসরিই বলছি আমার মতে ফাইনালেও এগিয়ে থাকবে ফ্রান্স। ওদের আক্রমণ ভাগ থেকে ডিভেন্স অসাধারণ। বিশ্বের সেরা তারকা ফুটবলারই খেলে এখানে। যে কারণে খুব ভাল করে কোন সময় কিভাবে খেলতে হয়। বিশেষ করে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ওদের মনে হয়েছে ডিফেন্স শক্ত রেখে খেলবে। সেটিই করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো ওদের ডিফেন্স আসলেই কঠিন। এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচের একটিও গোল খায়নি। এ পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে ওদের রক্ষণভাগের ক্ষমতা কতটুকু। বেলজিয়ামকে ওরা সুযোগই দেয়নি গোল দেয়ার। আর কাউন্টারে যে ওদের গোল করার দক্ষতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ক্রোয়েশিয়ারও একটি পরিকল্পনা নিশ্চয় থাকবে। যেমন এমবাপ্পেকে আটকানোর। তবে সেই মার্কিনটা কিভাবে হবে সেটিই আসল। তবে ম্যান মার্ক করে এমবাপ্পেকে আটকানো সহজ হবে না। জোন মার্ক করে আটকাতে হবে। যেটি করে সফল হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ডেন মার্ক। জোন মার্ক বলতে যে জোনে সে যাবে সেই জোনেই যে থাকবে সে তাকে চেক দেবে। আরেকটি বিষয় ফাইনাল তো এখানে বলা খুব কঠিন। মাঠের খেলার পরও ভাগ্য বলে কিছু একটা আছে। সেটি কার দিকে হেলে তা কেউ বলতে পারে না। এমন ম্যাচ তো হয়েছে যে নিশ্চিত গোল হয়নি আবার যেটি না হওয়ার হয়ে গেছে।

একপেশে ফাইনাল হতে পারে- আলফাজ আহমেদ
আমার কাছে মনে হয় একপেশে ফাইনাল হতে পারে। এখানে সব দিক থেকেই এগিয়ে ফ্রান্স। ওরাই ডোমিনেট করবে বলেই মনে হয়। কয়েকটি কারণের ক্রোয়েশিয়া বেশ ক্লান্ত। আরেকটি হলো ওরা ওদের মাঝ মাঠ শক্ত হলেও আক্রমণ ভাগ কিন্তু ফ্রান্সের চেয়ে পিছিয়ে। ওদের এমবাপ্পে, গ্রিজম্যান, মাতুইদিরা ভয়ংকর। বিশেষ করে গ্রিজম্যানরা তো বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। ফাইনালের মতো ম্যাচে দেখবেন দারুণ জ্বলে উঠেছে। অন্যদিকে দেখেন ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণে থাকে স্ট্রাইকার মানজুকিচ। তাকে মার্ক করে ফেললে পিছন থেকে এসে গোল করতে হবে। আমার মনে হয় না ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে নিজের ঘর সামলেই বড় ঝুঁকি নিবে না ক্রোয়েশিয়া।

‘ক্রোয়েশিয়ার ব্যাকআপ বেঞ্চ দুর্বল’- জাহিদ হাসান এমিলি
শক্তির দিক থেকে যদি বলেন ফ্রান্সকেই আমি এগিয়ে রাখবো শিরোপার দাবিদার হিসেবে। অনেক পার্থক্য আছে দুই দলের। কিন্তু আমার কাছে ফ্রান্সের তুলনায় ক্রোয়েশিয়ার বড় দুর্বলতা মনে হয়েছে ব্যাকআপ বেঞ্চ। এখানে ফ্রান্স বেশ এগিয়ে। ওদের ওসমান দেম্বেলে, নাবিল ফেকির, কোরেনতিন তোলিসোদের মতো ব্যাকআপ আছে। কিন্তু মানজুকিচ ব্রোজেভিচ ইনজুরিতে পড়লে তেমন কোনো ব্যাকআপ আমি দেখি না। এছাড়াও গোটা বিশ্বকাপ দেখেন ওদের তুলনাতে টেকনিকও বেশ এগিয়ে ফ্রান্স। এখানে ফ্রান্স যদি তাদের ডিফেন্স একই রকম শক্ত রাখে ক্রোয়েশিয়া সাহস করবে না উপরে উঠে আক্রমণ করার। এই চেষ্টা করলেই ফ্রান্সের কাউন্টার অ্যাটাক ক্রোয়েশিয়াকে গুঁড়িয়ে দেবে। তবে আশা করি দারুণ ফাইনাল হবে।

অনুলিখন: ইশতিয়াক পারভেজ
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status