দেশ বিদেশ

নির্বাচন কমিশনারের কাছে যত অভিযোগ সিলেটের প্রার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

নানা অভিযোগ সিলেট নির্বাচন কমিশনে। এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরেক প্রার্থীর অভিযোগ। মেয়র প্রার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ দিচ্ছেন। এখন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের অন্ত নেই। গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে ধরলেন প্রার্থীরা। এ সময় তারা খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনের প্রসঙ্গ এনে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার দাবি জানান। গতকাল দুপুরে সিলেটের রিকাবীবাজারের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। মতবিনিময়ে উপস্থিত হয়ে প্রার্থীরা তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের অভিযোগের মধ্যে ছিল- পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালানো, নির্বাচনী কার্যালয়ের তোরণ নির্মাণ করা, মোবাইল ফোনে হুমকি, পুলিশের ধরপাকড়, গোয়েন্দা পুলিশের তোড়জোড়। এসব অভিযোগের সুরাহা অচিরেই করে নির্বাচনকে আরো উৎসবমুখর পরিবেশে বজায় রাখার দাবি জানান প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান কোনো অভিযোগ দেননি। তবে, তিনি আহ্বান জানান, কোনো প্রার্থী যেনো মিথ্যা অভিযোগ উপস্থাপন করে নির্বাচনী পরিবেশকে ঘোলাটে না করেন। নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য তার মতো সব প্রার্থীদের কাজ করার অনুরোধ জানান তিনি। বলেন, সিলেট হচ্ছে আধ্যাত্মিক নগরী। এখানে রাজনৈতিক সম্প্রীতি বিরাজমান। নির্বাচন ৩০শে জুলাই শেষ হয়ে যাবে। আবার আমরা সম্প্রীতিতে বন্দি হবো। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেনো কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার দাবি জানান তিনি। নির্বাচন কমিশনারের কাছে বিস্তর অভিযোগ ছিল বিএনপি দলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর। তিনি নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, রাতের বেলা কারা পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে সেটি আমরা দেখছি না। যদি কোনো গোষ্ঠী সেটি করে থাকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আচরণবিধি সবাইকে মেনে চলতে হবে। এবং সবার জন্য সমান হতে হবে। কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করলে সেটি অন্যায় হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রার্থীরা যেসব অভিযোগ করেন সেসব অভিযোগ আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের পোলিং এজেন্টদের তালিকা চাওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ কারণে এখনো প্রার্থী ও ভোটাররা শঙ্কায় রয়েছেন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে কিনা- এ নিয়ে সন্দেহ আছে। এই সন্দেহ নির্বাচন কমিশনকে দূর করতে হবে। গোয়েন্দা পুলিশ মোবাইল ফোনে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ফোন দিচ্ছে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। কয়েক দিন আগে তার দলের মহানগরের ভাইস প্রেসিডেন্টের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, নির্বাচনী পরিবেশে একটি মহল উত্তেজনা বাড়াতে কাজ করছে। শুক্রবার রাতে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে নগরীর টিলাগড় এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার গাড়িতে কতিপয় দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। তিনি তাৎক্ষণিক নির্বাচন কমিশনকে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সিলেট শান্তির শহর। এই সিলেটে সম্প্রীতি রয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান তিনি। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমের অভিযোগ নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন কিংবা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নয়। তার অভিযোগ ছিল বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন তাকে এমন ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয় যে কারণে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। আর এখন তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি বহিষ্কারেরও হুমকি দেয়া হয়। নেতাকর্মীরা যাতে তার পক্ষে না থাকেন সে ব্যাপারে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সেলিম নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান অভিযোগ করেন খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সিলেট হচ্ছে পুণ্যভূমি। এই ভূমিতে কোনো বিতর্কিত নির্বাচন কেউ সহ্য করবে না। মেয়র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের ও সিপিবি’র প্রার্থী আবু জাফরও নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে অনুরোধ জানান। অভিযোগ দিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তোফায়েল হোসেন শেপুল বলেন- তার ওয়ার্ডের সায়েদ মিয়ার কলোনিতে এক কাউন্সিলর প্রার্থী মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়েছেন। এই ক্যাম্পে যারাই সেবা নিচ্ছেন তাদের খামের ভেতরে করে ৫০০ টাকা দেয়া হচ্ছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এমদাদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন- তার ওয়ার্ডে এক প্রার্থী প্রধান সড়ক দখল করে নির্বাচনী কার্যালয় খুলে বসেছেন। নির্বাচনের কর্মকর্তারা সেটি দেখলেও তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কাউন্সিলর প্রার্থী শামীমা স্বাধীনও অভিযোগে বলেন- তার কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনে ‘থ্রেট’ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মখলিছুর রহমান তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। বলেন- তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে টাকা ও মোবাইল ফোন উপহার দিচ্ছেন। নির্বাচনে ওই প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। এসব অভিযোগ শোনার পর নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকল ইসলাম পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না। যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ মিলে তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে সিলেটের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচন কমিশনার বলেন- নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে হলে প্রার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি লিখিত আকারে কমিশনে জমা দেয়ার দাবি জানান তিনি। অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখছে। নির্বাচন উপলক্ষে সিলেটকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা করা প্রয়োজন সব করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ৯ নং ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল তার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ওয়ার্ডে সন্ত্রাসীদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। এতে করে ভোটাররা আতঙ্কে আছেন। এদিকে গতকাল নির্বাচনী প্রচারণাকালে ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিমোদ আহমদ রুবেল তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ উপস্থাপন করেন। বলেন, ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন এক কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি নিজের ক্ষমতার বলে নির্বাচনী পোস্টার ছেপে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। আর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকন্দর আলী বিকালে নিজ এলাকা শেখঘাটে প্রচারণার সময় অভিযোগ করেন তার ওয়ার্ডে দুই রাজনৈতিক দলের নেতা এবং দুই প্রার্থী বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। তাদের মহড়ার কারণে গোটা ওয়ার্ডে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি দাবি করেন সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কের বৈদ্যুতিক বাতি খুলে নেয়া হচ্ছে। এতে করে তার ওয়ার্ড অন্ধকারে রয়েছে। বর্তমান কাউন্সিলরকে ব্যর্থ দেখাতে এমনটি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে নানা অপপ্রচার রটানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status