দেশ বিদেশ

ফাঁড়ির গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন বগুড়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়া প্রতিনিধি

১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

বগুড়ায় ফাঁড়ির গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে একজনকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার মোস্তাফিজার রহমান কিরণের মা বাদী হয়ে গত ১লা জুলাই মামলা করেছেন। মামলায় বগুড়া শহরের বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলামসহ পুলিশ ফাঁড়ির অন্য সদস্যদের আসামি করা হয়। এদিকে মামলার পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পরে ওই মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীর পক্ষ থেকে জোর করে আবেদনও করানো হয়েছে। পুলিশ নির্যাতনের শিকার মোস্তাফিজার রহমান কিরণ বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া বটতলার মৃত সাইফুল আলমের ছেলে। গত ১১ই জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কিরণ। ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলামের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে কিরণ বলেন, ঈদের চারদিন পরে পুলিশ তাকে তার বাড়ি থেকে ধরে আনেন। পরে তাকে বনানী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কাছ থেকে অস্ত্র চায় পুলিশ। কিরণ জানান, তার কাছে তো কোনো অস্ত্র থাকার কথা নয়। তখন বনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ তারিকুল ইসলাম কিরণকে হাতকড়া অবস্থায় দুই পায়ের হাঁটুতে মারধর করেন। এতে তারা ডান হাঁটু মারাত্মকভাবে জখম হয়। এরপর তারা পাগুলো বেঞ্চের হাতলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। তরিকুল আসরের নামাজে যাওয়ার আগে কিরণকে ফাঁড়ির গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় তারা হাতকড়া খুলে কিরনকে গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে দেন। এরপর তরিকুল আবার এসে কিরণকে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে তরিকুলের কাছ থাকা লাঠি ভেঙে যায়। ওই লাঠির আঘাতে কিরণের শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত বের হয়। এ সময় কিরণের মা তাকে জানালার সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। কিরণকে নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে তার মাকেও গালিগালাজ করে পুলিশ। পরে আরও নির্যাতন করা হয় কিরণকে। এরপর তাকে মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জবানবন্দির একপর্যায়ে আদালতকে তার শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো দেখান কিরণ। জবানবন্দিতে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘জখমীর শরীর পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তারা ডান বাহুতে, কুনইয়ে, কবজিতে, আঙুলের উল্টো পিঠে ও নখে বিভিন্ন মাপের জখমের চিহ্ন রয়েছে। বাম বাহুতে, কনুইয়ে বিভিন্ন মাপের কালশিরা জখমের দাগ রয়েছে। কমরের ডান পাশে পেছনে প্রায় ৪ ইঞ্চি লম্বা আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাম পায়ের গোড়ালি থেকে উরুর নিম্নাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন মাপের প্রায় ৮ থেকে ১০টি কালশিরা জখমের দাগ রয়েছে। ডান পায়ের হাঁটুতে ব্যান্ডেজ এবং হাঁটুর নিতে পায়ের পেছনে ৩-৪টি জখমের চিহ্ন রয়েছে। দুই পায়ের পাতায় পানি জমেছে।’
কিরণের মা পারভীন আক্তার জেলা দায়রা ও জজ আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন -২০১৩ এর ৭ ধারার বিধান অনুসারে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন (মামলা নং-০২পি/১৮) আদালত বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং ৪ঠা জুলাই শুনানি শেষে আদেশে জেলা ও দায়রা জজ উল্লেখ করেন যে, শাস্তিযোগ্য অভিযোগের সত্যতা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাই অভিযোগের বিষয়ে একটি মামলা করার এবং একজন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী থানায় মামলা রেকর্ড করা হয় এবং সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্তবর্তী অভিযোগ তদন্ত শুরু করেন। কিরণের মা পারভীন বেগম ও চাচাতো বোন গুলশানারা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করায় কিরণকে পুলিশ বলেছে তাকে শ্যুট করা হবে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বাসায় যান। পুলিশ কর্মকর্তা মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধের পাশাপাশি বলেন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে কদিন টিকে থাকবেন। পুলিশের বিপক্ষে সাক্ষী কোথায় পাবেন? একপর্যায় পুলিশের ভাড়া করা সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে তাদেরকে আদালতে বাদীর আইনজীবীর চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে স্বাক্ষর করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলা তদন্ত করছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী। তিনি মামলা প্রত্যহারের বিষয়ে বলেন, বাদী স্বইচ্ছায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছে। তাকে কোনো চাপ দেয়া হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status