প্রথম পাতা

ডনাল্ড ট্রাম্প এখন বলছেন জোরালো সম্পর্কের কথা

মানবজমিন ডেস্ক

১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

মাত্র একদিনের ব্যবধানে নিজের সুর বদলে ফেললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার যে ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন, পরের দিন একই বিষয়ে সুর বদলে যুক্তরাজ্যের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। গতকাল বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন দু’দেশের সরকার প্রধান। এতে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করা অপরিহার্য। ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্য যা-ই করুক না কেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। এ সময় তিনি ব্রেক্সিটকে দু’দেশের  সম্পর্ক উন্নয়নের বড় সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ আগের দিন দ্য সানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনাকে ভণ্ডুল করে দিতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরো বলেন, বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে, শুক্রবার সকালে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। তখন ব্রেক্সিট নিয়ে করা মন্তব্যের বিষয়ে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে এড়িয়ে যান তিনি। বৈঠকে তারা উভয় দেশের বন্ধন আরো জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। পরস্পরকে প্রশংসার বন্যায় ভাসান তারা। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মে বলেন, ন্যাটো সম্মেলনে খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন ট্রাম্প। আর ট্রাম্প উভয় দেশের বন্ধন আরো জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মে’র সঙ্গে আমার খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।’ আগের দিন ব্রেক্সিট নিয়ে করা মন্তব্যের কারণে অনুতপ্ত কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প অনেকটা বিরক্ত হয়ে মাথা নাড়ান। পরে নিজের সহকারীদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। যাতে বুঝা যায়, এমন প্রশ্নে তিনি বেশ বিব্রত।

দ্য সানের সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলেন ট্রাম্প: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম যুক্তরাজ্য সফরের শুরুতেই বিস্ফোরক মন্তব্যের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সফর শুরুর আগে বৃটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বৃটেনের নানা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খোলেমেলা কথা বলেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তার নমনীয় ‘ব্রেক্সিটে’র (ইইউ থেকে বৃটেনের প্রস্থান) ফলে বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা মাটি হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেছেন, ব্রেক্সিট দরকষাকষি নিয়ে তার দেয়া পরামর্শ তেরেসা মে অগ্রাহ্য করেছেন। তার ভাষ্য, ‘যদি বৃটেন প্রস্থানের বিষয়ে ইইউ’র সঙ্গে নমনীয় চুক্তি করে, তাহলে আমরা বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে কার্যত বৃটেনের সঙ্গে আলোচনা করবো না; কারণ সেটা হয়ে যাবে অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার সমতুল্য। ফলে এ কারণে সম্ভবত চুক্তি মাঠে মারা যাবে। আমি আসলে তেরেসা মেকে বলেছিলামও তার কী করা উচিত, কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি।’
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ কিছু সূত্র বলেছিল, ব্রেক্সিট নিয়ে নমনীয় চুক্তি হলে যুক্তরাজ্যের অনেক বিষয়েই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইইউর। ব্রাসেলসের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতা থাকলে বৃটেন-যুক্তরাষ্ট্র আন্তঃআটলান্টিক বাণিজ্য চুক্তি অসম্ভব হয়ে পড়বে।

শুধু ব্রেক্সিট নিয়ে নয়, বৃটেনের আরো নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ট্রাম্প। কিছুদিন আগে পদত্যাগ করা বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, জনসন অসাধারণ প্রধানমন্ত্রী হবেন। তার বিদায়ে আমি কষ্ট পেয়েছি। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তেরেসা মে ও বরিস জনসন। এখনও জনসনকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের মধ্যে এই পদের অন্যতম দাবিদার ভাবা হয়।

এছাড়া লন্ডনের লেবার দলীয় মেয়র সাদিক খানের সঙ্গে পূর্বের তিক্ততা আরো নতুনভাবে নিয়ে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদের ইস্যুতে লন্ডন মেয়রের পারফরম্যান্স বেশ শোচনীয়।
তার আরেক বিস্ফোরক মন্তব্য ছিল অভিবাসন নিয়ে। তিনি মনে করেন, ‘লাখ লাখ মানুষকে ইউরোপে প্রবেশ করতে দেয়াটা’ উচিত হয়নি। তিনি এর সঙ্গে লন্ডনে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন। এটি সামাল দিতে সাদিক খানের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। পাশাপাশি, এত অভিবাসী প্রবেশের ফলে ইউরোপের ‘সংস্কৃতি’ হারিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। তার মতে, ইউরোপে অভিবাসন হতে দেয়াটা লজ্জাকর বিষয়।
এ ছাড়া তার সফরের সময় লন্ডনের আকাশে বিশাল আকারের ট্রাম্প বেলুন ওড়ানো হচ্ছে। ডায়পার পরা শিশু ট্রাম্পের বেলুন ও প্রতিবাদ নিয়ে তিনি বলেন, এসবের ফলে তার মনে হচ্ছে লন্ডনে তিনি স্বাগত নন। ট্রাম্প আরো বলেন, লন্ডন শহর একসময় তার পছন্দের ছিল, কিন্তু এখন সেখানে যাওয়ার তেমন কারণ পান না তিনি।
তবে বৃটিশ রানী ও জনগণ নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন তিনি। তার বিশ্বাস, তিনি যা চান, বৃটিশ জনগণও তা-ই চায়।

এদিকে ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করেছেন তেরেসা মে। ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাণিজ্য চুক্তি করতে ট্রাম্পকে রাজি করাতে তার আগের মন্তব্য দৃশ্যত অগ্রাহ্য করছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী।
টুক্সেডো পরিহিত ট্রাম্পকে ঐতিহাসিক বেলেনহেইম প্রাসাদে স্বামী ফিলিপ মে সমেত স্বাগত জানান তেরেসা। ট্রাম্পের পাশে এ সময় ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ছিলেন। তবে মোলাকাতের পরপরই তেরেসা মে’র হাত ধরে সামনে আগাতে থাকেন ট্রাম্প। গতবার তেরেসা মে’র হোয়াইট হাউজ সফরেও একই কাণ্ড করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status