শেষের পাতা
সিলেটে আলোচনায় নির্বাচনী পোস্টার
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন
বৃষ্টির মৌসুম। সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণায়ও হঠাৎ-হঠাৎ বৃষ্টি বাগড়া দিচ্ছে। প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রথম ধাপ পোস্টার সাঁটানো নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ‘পোস্টার’ নিয়ে সিলেটে এখন আলোচনা। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে এমন অভিযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি ভোটের ময়দান। তবে, গতকাল দুপুরে পোস্টার ছেঁড়ার রহস্য সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণের কথা জানালেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সুবহানীঘাট এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট শহরে রাতের বেলা মালবাহী ট্রাক চলাচল করে। আমরা যারা প্রার্থী তারা পোস্টার এমনভাবে টানিয়েছেন ওই ট্রাকে লেগে পোস্টার কখনো কখনো ছিঁড়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার পোস্টারেও এমনটি হয়েছে বলে দাবি করেন কামরান। পোস্টার টানানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া নিয়ম মতোই। দড়িতে ঝুলিয়ে এক সঙ্গে অনেকগুলো পোস্টার সাঁটানো হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলেই ভিজে পোস্টার ঝুলে থাকে। তবে, বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর মুখে অন্য সুর। তিনি পোস্টার নিয়ে গতকাল সকালেও অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিনিয়ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে তার টানানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। রাতের আঁধারে কে বা কারা এ কাজ করে সেটি তিনি দেখতে পাননি। এ কারণে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার অক্ষত থাকলেও তার পোস্টার পড়ে থাকতে দেখেছেন বলে তিনি জানান। পোস্টার টানানো নিয়ে বুধবার রাতে সিলেট নগরে তোলপাড় হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় লোকমান নামে বিএনপি প্রার্থীর নিয়োজিত এক শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে কামরানের সুপারিশেই পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এর আগে মধ্যরাতে বিএনপি প্রার্থী সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এই ঘটনার সমাপ্তি ওখানেই ঘটলেও সিলেটে পাল্টাপাল্টি কমছে না। আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরান এ নিয়ে কোনো অভিযোগ না করলেও বিএনপির প্রার্থী আরিফ অবিরত অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘আমি কারো কাছে বিচার চাই না। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহ ওদের বিচার করবে।’ এদিকে, পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেছেন, আরিফের সমর্থকরা বিভিন্ন স্থানে তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। একই সঙ্গে আরিফ তার সঙ্গে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদেরও নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এই হুমকির কারণে তার নির্বাচনী স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। নগরীর আম্বরখানা ও চৌহাট্রা এলাকায় তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে সেলিম অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে বিএনপির তৃণমূলসহ সিলেটের নেতারা রয়েছেন। তারা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে। কিন্তু আরিফুল হক চৌধুরী নানাভাবে তার বিরুদ্ধেও চক্রান্তে মেতে উঠেছেন। এতে করে নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্ন ঘটছে। সিলেটে ২০ দলীয় জোটের বিদ্রোহী প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তবে, কারো বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। এদিকে বৃহস্পতিবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকাতে মেয়রপ্রার্থীদের পোস্টার পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কে বা কারা এগুলো ছিঁড়ে ফেলে রেখে গেছে। জিন্দাবাজার এলাকায় ওভারসিজ সেন্টারের ঠিক উল্টোদিকে দেখা গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ঝুলছে মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পোস্টার। পোস্টারগুলো যে ঠিক উপরে আবার নৌকার পোস্টার লাগানো। আরোও একটু উত্তর দিকে এগুলো লতিফ সেন্টারের নতুন ভবনের সামনে চোখে পড়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে রাখা। আল-হামরা শপিং সিটির উল্টোদিকে দেখা গেছে আরিফের পোস্টার ছেঁড়া এবং বেশ কিছু পোস্টার রাস্তায় ফেলে রাখা। চৌহাট্টা ট্রাফিক পয়েন্টে দেখা গেছে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জামায়াত মহানগর শাখার আমির এহসানুল মাহবুব জোবায়েরের বেশকিছু পোস্টার ফেলে রাখা। আরেকটু উত্তরদিকে আম্বরখানার পথে এগুলো সিভিল সার্জন অফিসের উল্টোদিকে বনফুল কনফেকশনারির সামনে দেখা গেছে একই সঙ্গে মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও এহসানুল মাহবুব জোবায়েরের পোস্টার ছেঁড়াবস্থায় খুঁটির সঙ্গে ঝুলছে। এমন অবস্থা নিয়ে প্রত্যেক মেয়রপ্রার্থীই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে, নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলা করার জন্য কোনো পক্ষ এমন জঘন্য কাজ চালাচ্ছে। সিলেটের রিটার্নিং কার্যালয়ের মুখপাত্র ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে কয়েকটি অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কয়েকটি টিম মাঠে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি।