শেষের পাতা

বিসিসি নির্বাচন

জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে যোগ দেননি আওয়ামী লীগ প্রার্থী

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে

১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের জনগণের মুখোমুখি নিয়ে এসেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ অংশগ্রহণ করেননি এতে। বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সুশাসনের

 জন্য নাগরিক (সুজন) সিটি নির্বাচনে মেয়রদের এবং সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে হাজির করেন। এখানে উপস্থিত জনতা প্রশ্ন করেন, প্রার্থীরা উত্তর দেন। বিশেষ করে বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ধারাবাহিকভাবে এবারো এধরনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ  কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মূলত প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীর কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন অর্ধ সহস্রাধিক মানুষ। কিন্তু ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ উপস্থিত হননি। এতে উপস্থিত দর্শকরা হতাশ হন।

অনুষ্ঠানে ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন (তাপস), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব, বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু, সিপিবির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে সুজন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম, গণরায় মেনে নেয়ার জন্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি যারা নির্বাচিত হবেন তাদের করপোরেশনে নামে-বেনামে কোনো ঠিকাদারি না করার জন্য আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু বলেন, বিগত সময়ে মেয়রের পদে থেকে কে কি করেছেন তা সবাই জানে। শুধু শওকত হোসেন হিরণই কাজ করেছেন। মেয়র পদে দুর্নীতিমুক্তদের বসা প্রয়োজন। আমি বাজে কমিটমেন্ট দিবো আর নির্বাচিত হলে ভুলে যাবো সেটা হতে দেয়া উচিত নয়। ভোটাররা ১ দিনের জন্য ভোট দিবেন আর যোগ্য প্রার্থী না হলে ৫ বছরের জন্য পস্তাবেন। পার্সেন্টিসবাজদের দুর্নীতিবাজদের ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। আমার ভোট চাইতে লজ্জা করে কারণ আমি বরিশালবাসীর জন্য কিছু করিনি। তবে দয়া করে যদি ভোটাররা ভোট দেন তবে বরিশালের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার বলেন, ভোটে অংশগ্রহণ করেছি, যা নিয়ে মানুষের মাঝে সংশয়, শঙ্কা রয়েছে। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের কমিটমেন্ট করতে হবে আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো এবং জনগণের ভোট যারা দখল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আজ দলীয় নির্বাচনের কারণে দলীয়করণ হয়ে গেছে। আমরা চাই গণতন্ত্র মুক্তির পথে আসুক। গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত না হলে সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য আমাদের বাজেটে বরাদ্দের নির্ভরতা কমাতে হবে। আমি বিগত সময়ে যখন মেয়র ছিলাম তখন সিটি করপোরেশনের কোনো জায়গা লিজ দেইনি, ১১টি মার্কেট করেছি, কালেক্টর পুকুর দখলমুক্ত করেছি, বাড়িঘর, মন্দির দখলমুক্ত করেছি। এমনকি সন্ত্রাস করতে দেবো না কমিটমেন্ট করেছিলাম তাও করতে দেইনি। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক করেছি, মেয়র পদক ঘোষণা করেছিলাম। মেয়র হলে নগর উন্নয়নে পরিকল্পনা করে জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবো। খাল খনন, জলাবদ্ধতা নিরসন, শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ, নবীনদের জন্য কর্মসংস্থানসহ নানান সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবো। বরিশালকে সুন্দর নগরী করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, নির্বাচিত হলে নগর কাউন্সিলের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। আমি এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রথম নারী প্রার্থী। বিগত ১৫ বছরে কোনো মেয়রই নারীবান্ধব কর্মসূচি হাতে নেয়নি। আমি মেয়র হলে কর্মজীবী নারী হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টারসহ নারীবান্ধব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি সমাজকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে পাড়ায় পাড়ায় পাঠশালা তৈরি, রচনা প্রতিযোগিতা, গণিত উৎসব, সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা করা হবে। সিপিবির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনকে দৃষ্টিনন্দন একটি নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক উন্নয়নসহ নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। নগরের বস্তি এলাকার মানুষদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন (তাপস) বলেন, জনগণের উন্নয়ন আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিতে চাই না। জনগণ সবার ওপরে। নির্বাচিত হলে নগরভবনে নগরপিতা হিসেবে নয়, সেবকভবনে নগরের সেবক হিসেবে বসতে চাই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব বলেন, সিটি করপোরেশনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার জন্য দুর্নীতিমুক্ত করা হবে। পার্সেন্টিসমুক্ত করপোরেশন গড়া হবে। এ সময় তিনি সৎ লোককে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের কাছে আহ্বান জানান। সুজন বরিশাল মহানগর কমিটির সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্তসহ ভোটার ও বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status