দেশ বিদেশ

বন্ধুর মুখে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যার মূল আসামি পিন্টু দেবনাথ রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে। তবে সে একেক সময় একেক কথা বলে তদন্তকারী সংস্থাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কখনো বলছে তার সঙ্গে ভাড়াটিয়া কিলার ছিল আবার কখনো বলছে একাই খুন করেছে। তবে তদন্তকারী সংস্থা বলছে, যতক্ষণ পর্যন্ত  পিন্টু দেবনাথ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় তার বক্তব্য প্রদান না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো কিছুই বিশ্বাস করবো না।
এদিকে তদন্তকারী সংস্থা অনেক সতর্কতার সঙ্গে পিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। কারণ সে বাইপাস রোগী। কিছু সময় পর পর সে ঘামিয়ে যাচ্ছে। এবং অস্থির হয়ে উঠছে।
তদন্ত সংস্থার সূত্রমতে, রিমান্ডে পিন্টু প্রথমে জানায় তিনি খুন করেননি। খুনের জন্য তিনজন কিলারকে ভাড়া করেছিলেন। তাদের সঙ্গে বাপেনও ছিল। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা খুনিদের নাম ও ঠিকানা জানতে চাইলে তা জানাতে পারেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের জেরার মুখে পিন্টু স্বীকার করেন- প্রবীরকে একাই খুন করেছেন তিনি।
তদন্ত সংস্থার সূত্রমতে, পিন্টু জানিয়েছে ১৮ই জুন রাত ৯টার দিকে প্রবীরকে মোবাইলে ফোন করে আমার বাসায় আনি। এরপর দু’জনে একত্রে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখি। প্রবীর বিস্কিট খেয়ে কোমল স্প্রাইট পান করার সময় পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে তাকে আঘাত করি। সে আমাকে ঝাপটে ধরে, কয়েকটা লাথি মারে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আমি চাপাতি দিয়ে আঘাত করতে থাকি। প্রবীর রক্তাক্ত হয়ে টিভির রুমে খাটের উপর লুটিয়ে পড়ে। এরপর বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করি। এরপর চাপাতি দিয়ে তার দেহ একে একে ৭ টুকরো করি। ৫ টুকরো লাশ বাজার থেকে আনা সিমেন্টের ৩টি ব্যাগে এবং পা দুটি আরেকটি ব্যাগে ভরি। অন্য একটি ব্যাগে রক্তাক্ত বিছানার চাদর, বালিশ, পরিদেহ কাপড় ও চাপাতি ভরি। বাথরুমে গোসল করে নিজের শরীরের রক্ত ধুয়ে ফেলি। শেষ রাতের দিকে চারদিকের পরিবেশ একেবারে শান্ত হয়ে গেলে বাসার নিচে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকিতে ৩টি ব্যাগ ফেলি। কিন্তু ট্যাংকিতে জায়গা না হওয়াতে পা ভর্তি ব্যাগটি বাড়ির উত্তর পার্শ্বের ময়লার স্তূপের সঙ্গে ড্রেনের মাথায় ফেলে দেই। এবং রাতেই শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে ফেলে দেই চাপাতি, বিছানার চাদর আর বালিশ ভর্তি ব্যাগ। অথচ পিন্টু দেবনাথ প্রবীর ঘোষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুই বছর আগে প্রবীর তাকে ভারতে নিয়ে বাইপাস অপারেশন করিয়ে আনে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পিন্টুর দেয়া তথ্যমতেই শহরের কালিবাজারের একটি হার্ডওয়্যারের দোকান পরিদর্শন করা হয় যেখান থেকে সে চাপাতি কিনেছিল। ওই দোকান মালিক সত্যতা স্বীকার করেছেন। এছাড়া শহরের চারারগোপ এলাকাতে চান্দু এন্ড কোং দোকানের পাশের কামারের দোকানে গিয়ে ওই চাপাতি শান দেয়া হয়। ওই দোকান মালিকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পিন্টু দেবনাথ পুরো চতুর ও কৌশলী লোক। গ্রেপ্তার হবার পর পুরো ঘটনা নিজের উপর নিতে চাচ্ছে। একটি মানুষকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতে একজন পারে না। পিন্টু বারবার হত্যার জন্য দুটি কারণ উল্লেখ করেন, সেগুলো হলো বন্ধকী স্বর্ণ লেনদেন ও স্বর্ণ ভবনে পিন্টুর নামে ক্রয় করা দোকানে প্রবীরের টাকা দেয়া নিয়ে। পিন্টুর দাবি প্রবীর তাকে দুইবার হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নূরে আলম জানান, প্রথম দিকে পিন্টু পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন। তাই এখন যেসব তথ্য দিচ্ছেন, সেগুলো সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় তার বক্তব্য প্রদান না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো কিছুই বিশ্বাস করবো না।
নিহত প্রবীর ঘোষ শহরের কালিরবাজারের ভোলানাথ জুয়েলারির মালিক। পিন্টুও জুয়েলারির মালিক। তারা চার বন্ধু। প্রবীর, পিন্টু, গোপী ও উত্তম। এরমধ্যে প্রবীর ও পিন্টু বেশি ঘনিষ্ঠ। মজার বিষয় হলো প্রবীর ঘোষকে হত্যার পর গত ২১ দিন প্রবীরের সন্ধানে মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে সক্রিয় উপস্থিত ছিল পিন্টু। কেউ বুঝতেও পারেনি ঘাতক তাদের সঙ্গেই আছে।
 পিন্টু শহরের ১৫ আমলাপাড়া কেসি নাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির দুই তলার একটি ফ্লাটে গত ২২ বছর ধরে বসবাস করেন। ৯ই জুলাই রাতে পিন্টুর দেখানো মতে, ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকি থেকে প্রবীর ঘোষের ৫ টুকরো লাশ এবং ১০ জুলাই রাতে ড্রেন থেকে পা দুটি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। বর্তমানে সে এবং তার কর্মচারী বাপেন ভৌমিক ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। শুক্রবার তার রিমান্ডের ৪ দিন শেষ হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status