দেশ বিদেশ

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তাসফিয়া হত্যার আলামত মেলেনি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যার আলামত মেলেনি বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্তকারী নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাসফিয়ার ময়নাতদন্তকারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুজন কুমার দাশ বুধবার তাসফিয়ার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর নানা পর্যালোচনা শেষে গতকাল তাসফিয়ার আত্মহত্যার বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হওয়ার কথা বলেছেন মামলা তদারক কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, তাসফিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আমরা পর্যালোচনা করেছি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাসফিয়ার মুখে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত থাকলেও তার ওপর কোনো ধরনের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। মূলত পানিতে পড়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সুরতহাল প্রতিবেদন ও সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের প্রতিবেদনেও তাসফিয়ার পোশাক ও যৌনিপথে যৌন সংক্রান্ত ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকরা এটি পানিতে পড়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে বলেছেন। খুন হয়েছে এমন জোরালো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, ফরেনসিক ল্যাবের প্রতিবেদন, সুরতহাল প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, গ্রেপ্তার আসামিদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তদন্ত টিম একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, খুন নয় তাসফিয়া আত্মহত্যাই করেছেন। পর্যালোচনার বিবরণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাসফিয়া পরিবারের ভয়ে মানসিক চাপ নিতে না পেরে নিজ আগ্রহেই সিএনজি অটোরিকশায় করে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যায়। পরে রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে কোনো এক সময় সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপরও যেহেতু এটি আলোচিত মামলা বিষয়টি নিয়ে আরও অধিকতর তদন্ত চালানো হচ্ছে। দুই-একটি প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত টিম। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে এই মামলার ইতি টানতে পারবো বলে জানান তিনি। তদন্ত সূত্র জানায়, তাসফিয়া নগরীর ইউরোপিয়ান স্কুলে পড়ালেখা করতো। সেখানে থাকা অবস্থায় ফেসবুক-ইমোতে আসক্তি হয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শুরু করে সে। সে কারণে তাকে মৃত্যুর দুই মাস আগে নগরীর সাইনশাইন গ্রামার স্কুলে ভর্তি করান তার পরিবার। এরপরও তার চলা ফেরায় পরিবর্তন না আসায় তার কাছে থাকা দামি দুটি মোবাইল সেট নিয়ে ফেলেন তার বাবা। এরই মাঝে বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান মির্জার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাসফিয়া। বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবা নানাভাবে শাসন করতে থাকেন। এরপরও প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য একটি দামি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিলেন। সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ইমো আর হোয়াটসআপ অ্যাপসের মাধ্যমে আদনানের সঙ্গে যোগাযোগ করতো তাসফিয়া। ঘটনার দিন ২রা মে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে তাসফিয়া ও আদনান। সেখানে ২০-২২ মিনিট ছিল তারা। তারা দুটি আইসক্রিম অর্ডার করেছিল। বিল দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর ওই টেবিলে গিয়ে ওয়েটার দেখতে পান গ্রাহক আইসক্রিম খায়নি। মূলত ওই সময়ে তাসফিয়ার মা তাকে ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়ার কারণেই সে আইসক্রিম না খেয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যায়। যদিও এর আগে তারা দুজনেই ওই দিন বিকালে বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে সিআরবি যায়। সেখান থেকে স্টেডিয়াম সংলগ্ন গ্রিডিগার্টস রেস্টুরেন্টে বসে সেখানেও কিছু খায়নি তারা। পরে দুজন সিএনজি অটোরিক্সা করে গোলপাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে আসে। তবে তাসফিয়া আদনানকে জিইসির বাসায় যাওয়ার কথা বলে সিএনজি অটোরিকশা ঠিক করলেও তাসফিয়া সেই সিএনজি অটোরিকশাটি নিয়ে বাসা থেকে প্রায় ১৮ মাইল দূরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে চলে যায়। সেখানে রাত সাড়ে সাতটার দিকে পৌঁছার পর নিরিবিলি পাথরের ওপর সৈকতে বসে থাকে তাসফিয়া। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী তাকে একাকী বসে থাকতে দেখলেও নানা কারণে বা কোনো ফাঁদে পড়ছেন কি না এসব ভেবে কিছুই বলেননি বা তার কাছেও যাননি। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয়রা একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পান তবে কেউ সেদিকে আর যাননি। পরে সকালে ঠিক যেই স্থানে তাসফিয়া বসে ছিল তার থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে পাথরে ওপর উপুড় অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করার পর বিকালে তার পরিচয় মেলে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status