দেশ বিদেশ

এবার রনির পক্ষে সাফাই ভিডিও তবে রাশেদ বলছেন জোরপূর্বক

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

আড়াই মাস আগে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক মো. রাশেদ মিয়াকে চড়-থাপ্পড় মারার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর সংগঠন থেকে অব্যাহতি নেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলায় আসামি করা হয় রনিকে। কিন্তু ১১ই জুলাই বুধবার বিকালে নুরুল আজিম রনির ফেসবুক টাইমলাইনে আপলোড করা হয় এমন এক ভিডিও যেখানে রনির পক্ষে সাফাই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন রাশেদ নিজেই। আর এই ভিডিওটিও ভাইরাল হয়ে উঠছে ক্রমেই। ভিডিওবার্তায় রাশেদ নিজের মুখে স্বীকার করেছেন যে, রনি তার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। রনি তাকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কফিল উদ্দিনও রাশেদের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতামূলক কথা বলছেন। তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাশেদ মিয়া বলেন, রনির অনুসারীরা এক ছাত্রসহ তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে এই স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রদানে বাধ্য করেছে। এমনকি রনির বিরুদ্ধে করা তার মামলাটি তুলে নেয়ার হবে মর্মে তিনটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে।
রাশেদ মিয়া বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর বায়েজিদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে রনির ৮ থেকে ১০ জন ছেলে চারটি মোটর সাইকেলে এসে এক ছাত্রসহ আমাকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে মুরাদপুর বাদশাহ কমিউনিটি সেন্টারে পরে সেখান থেকে পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কফিল উদ্দিনের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে ১০০ টাকার তিনটি স্ট্যামেপ মামলা প্রত্যাহারের কথা লিখে দিতে বাধ্য করে। এ সময় আমি ভয়ে কিছু কথা বলিনি, যেগুলো ভিডিও করে তারা ফেসবুকে প্রচার করছে। তুলে নেয়া ছেলেদের মধ্যে চারজনকে চিনতে পারার কথা জানান রাশেদ মিয়া। এরা হলো, নুরুন্নবী সাহেদ, সেলিম, খোরশেদ ও মামুন। ওই সময় রনি না থাকলেও অনুসারীরা কাউন্সিলরের বাসায় তার সঙ্গে রনির মোবাইল ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেয়। এ সময় রনি তাকে গালাগাল করে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। জোরপূর্বক তুলে নেয়া, স্ট্যামেপ স্বাক্ষর নেয়া এবং হুমকির বিষয়ে তিনি থানায় কোনো ডায়েরি বা অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে বুধবার রাতে রাশেদ মিয়া বলেন, এই ব্যাপারে এখনো কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ কথা বলেই নীরব থাকেন তিনি। এদিকে কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন, রনি ও তার অনুসারীরা বলেছে, রাশেদ মিয়া স্বেচ্ছায় মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তার ওপর কেউ চাপ প্রয়োগ করেনি। রাশেদের ছাত্র নিজেও এই জোরপূর্বক তুলে নেয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে জানায়। অভিযুক্ত নূরুন্নবী সাহেদ জানায়, রাশেদ মিয়া নিজেই আমাদের কাছে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেছিলেন, রনি ভাইয়ের সঙ্গে তিনি আর কোনো ঝামেলা চান না। তিনি নিজেই মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন। সেই অনুযায়ী তিনি নিজেই আমাদের সঙ্গে প্রথমে বাদশাহ মিয়া কমিউনিটি সেন্টারে এবং পরে কাউন্সিলর কফিল ভাইয়ের বাসায় যান। তাকে তুলে নেয়ার কথা ডাহা মিথ্যা। রাশেদের সঙ্গে যাওয়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র সোহান জানায়, উনি (রাশেদ মিয়া) আমার শিক্ষক। আমার কাছে সম্মানিত। উনার বিষয়ে আমি কিছু বলব না। তবে এতটুকু বলতে পারি-আমি স্বেচ্ছায় গিয়েছিলাম। কেউ তুলে নিয়ে যায়নি। কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন বলেন, রনির সঙ্গে মামলাসহ সামগ্রিক বিরোধ নিয়ে মধ্যস্ততার জন্য রাশেদ মিয়া নিজেই একজন বিশ্বস্ত কাউকে খুঁজছিলেন। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা আমার কাছে আসেন। আমি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলি। রনির বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং তার সাড়ে নয় লাখ টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে রাশেদ সম্মত হন। আমি উভয়পক্ষকে মিলিয়ে দিলে তারা খুশি হয়ে চলে যায়। তবে রনি আমার বাসায় আসেনি। কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন বলেন, রাশেদ আমার বাসায় আসার পর আমি তাকে একান্তে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তাকে কেউ তুলে এনেছে কি না? তাকে অভয় দিয়েছিলাম। সে বলেছে স্বেচ্ছায় এসেছে। আর আমার বাসায় বসে তার কাছ থেকে জোর করে স্ট্যামেপ স্বাক্ষর নেয়ার মানুষ আমি কফিল উদ্দিন না। নূরুল আজিম রনি বলেন, রাশেদ আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠজনকে ফোন করে মামলা তুলে নেবেন বলেছিলেন। সেই ঘনিষ্ঠজনেরাই তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী কাউন্সিলর কফিল ভাইয়ের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি জানতে পারি। সেখান থেকে ফোনে রাশেদ আমাকে নিজেও বলেছেন যে তিনি বিরোধের অবসান চান এবং মামলা প্রত্যাহার করতে চান। এখন আরেক এধরনের কথা বলছেন সম্ভবত যারা তাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করতে বাধ্য করেছিলেন তাদের ভয়ে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে নগরীর জিইসি মোড়ে তার অফিসে নুরুল আজিম রনির চড়-থাপ্পড় মারার একটি ভিডিও ১৯ই এপ্রিল ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় রাশেদ মিয়া নগরীর পাঁচলাইশ থানায় নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। তবে নুরুল আজিম রনি ওই সময় ব্যবসার জন্য ধার দেয়া টাকা ফেরত না দেয়ায় মারধরের কথা সাংবাদিকদের বলেন।
ঠিক আড়াই মাস পর নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে রনির আপলোড করা ভিডিও বার্তায় রাশেদের সঙ্গে কথোপকথনে শোনা যায়, রনি রাশেদ মিয়ার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। রাশেদ রনির কাছ থেকে নগদ সাড়ে নয় লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তবে সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে পারেননি রাশেদ। পরে রনি কিছু টাকা ফেরত চান। রাশেদ টাকা দিতে না পারলে পুরো টাকাই ফেরত চান রনি।
কাউন্সিলর কফিল উদ্দিনের বাসায়ও রাশেদের সঙ্গে রনির বিষয়ে কথোপকথনের ভিডিও পাওয়া গেছে রনির টাইমালাইনে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status