অনলাইন

হজে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশে আবারও সঙ্কট কেন

১৩ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট।
কিন্তু হজ যাত্রা শুরুর আগে নতুন সঙ্কটে পড়েছে বিমান, কারণ সৌদি আরব শর্ত দিয়েছে যে ভাড়া করা বিমানে করে যাত্রীদের নেওয়া যাবে না।
এছাড়াও সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হাজীদের জন্য 'অনাপত্তিপত্র' সংগ্রহ করতে গিয়েও জটিলতায় পড়েছে হজ এজেন্সিগুলো।
সবমিলিয়ে পুরো ব্যাপারটি এখন অনেক হজযাত্রীর কাছে শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে।

এ বছর হজে যাবেন এক লাখ ২৭ হাজার মানুষ। তাদের বেশিরভাগই, এক লাখ কুড়ি হাজার, যাবেন হজ এজেন্সির মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন বাকি সাত হাজার ।
হজ এজেন্সির মাধ্যমে যারা হজে যাচ্ছেন তাদের একজন কিশোরগঞ্জের রোকেয়া আক্তার। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, হজের সব টাকা পয়সা ও কাগজপত্র জমা দেয়ার পর এখনও তিনি রয়েছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
তিনি বলছেন, "আমরা তো টাকাপয়সা সব জমা দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কবে যাবো, তা এখনো জানায়নি এজেন্সিগুলো। শুধু বলেছে, বিশ তারিখের মধ্যে বিমানের টিকেট হতে পারে।"

তিনি জানান, অতীতে তার একজন আত্মীয় এরকম কয়েক দফা ঢিলেমির পর আর হজেই যেতে পারেননি। এ কারণে তার বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
তার মতো একই সঙ্কটে রয়েছেন আরো অনেক মানুষ যারা হজে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। মোট যাত্রীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক, ৬৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করে বাংলাদেশ বিমান। কিন্তু নতুন বিধিবিধানের কারণে তারাও পড়েছে সমস্যায়। আর বাকিরা যান সৌদি এয়ারলাইন্সে।
সাধারণত হজের আগে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে ভাড়া করে আনা উড়োজাহাজ দিয়ে সৌদি আরবে শিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

কিন্তু এবছর জুন মাসে সৌদি আরব জানিয়ে দিয়েছে যে, এরকম ভাড়া করা উড়োজাহাজ দিয়ে এবার হজ ফ্লাইট চালানো যাবে না। ফলে বিপদে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "আগেই আমরা উড়োজাহাজগুলো ভাড়া করে ফেলেছি। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের এই সিদ্ধান্তে আমরা বেশ বেকায়দাতেই পড়েছি।"

তিনি জানান, বিমানের ফ্লাইট বাড়িয়ে তারা এখন এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
হজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষে শুধুমাত্র নিজস্ব বিমান দিয়ে হজের এই মৌসুমে ফ্লাইট পরিচালনা করাটা বেশ কঠিন। হজের সময় এর আগে শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিবছর হজের সময় যাত্রী সঙ্কটের কারণে বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। আবার শেষের দিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ পড়ে বিমানের উপর।

গতবছর এরকম বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করার পর, হজের ঠিক আগে আগে অতিরিক্ত ২৮টি বিমান স্লট নিতে হয়েছিল বিমান বাংলাদেশকে।
বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলছেন, "এ বছর সৌদি সরকার জানিয়ে দিয়েছে, নির্ধারিত হজ স্লটের বাইরে অতিরিক্ত কোন স্লট পাওয়া যাবে না। ফলে কেউ যদি নির্ধারিত ফ্লাইটে টিকেট কেটেও না আসেন, তার হয়তো পরে হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।"
এসব অনিশ্চয়তার কারণে এখনো বিমানের বেশ কিছু আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বিমান বলছে, আগেভাগে টিকেট সংগ্রহের জন্য তাগাদা দেয়া হলেও, পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে টিকেট কিনতে চায়না অনেক এজেন্সি। সৌদি আরবের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে এবং হজ যাত্রীদের পুরো খরচ অনলাইনে পরিশোধ করে আগেই হাজীদের অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করতে হবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এর অংশ হিসাবে সৌদি আরবের বাসা-ভাড়া, খাবার বা যাতায়াতসহ সেখানকার পুরো খরচটি অনলাইনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে এজেন্সিগুলোকে।

এ বছর ৫২৮টি এজেন্সিকে হজ যাত্রী পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে।
হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব বলছে, অনলাইন জটিলতার কারণে এটি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে এজেন্সিগুলো।
এজেন্সির কর্মকর্তারা বলছেন, হজের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের আইন ও বাংলাদেশের আইন সমন্বয় করে তাদেরকে কাজ করতে হয়। এর ফলে, এজেন্সিগুলো অনাপত্তিপত্র হাতে পাচ্ছে না, যে কারণে তারা হাজীদেরকেও তাদের যাওয়ার ব্যাপারে দিনতারিখ জানিয়ে নিশ্চিত করতে পারছেন না।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অল্পকিছু হজ যাত্রীর জন্যে সৌদি সরকারের অনাপত্তি সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ প্রথম হজ ফ্লাইট চালু হচ্ছে আর মাত্র দু'দিনের মধ্যে।
হজ এজেন্সি গুলোর সংগঠন হাব এর মহাসচিব এম শাহাদত হোসাইন তসলিম বলছেন, "তাক্ষণিকভাবে সৌদি আরবের অনেক আইন পরিবর্তন হয়েছে, যার সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন। শুধু আমাদের এজেন্সিগুলোই নয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়কেও এরকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তারপরেও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি, যাতে এই সমস্যাটি কাটিয়ে প্রত্যেকের হজ যাত্রা নিশ্চিত করা যায়।"

সূত্রঃ বিবিসি
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status