প্রথম পাতা

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে

সংসদ রিপোর্টার

১৩ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হবে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আদালতের রায় অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। গতকাল সংসদের চলতি বাজেট  অধিবেশনের সমাপনী দিনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই অংশ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, আন্দোলনকারীরা যে কী চায় বারবার জিজ্ঞাসা করা হলেও সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। এ বিষয়ে সরকার থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাহলে এদের (আন্দোলনকারী) অসুবিধাটা কোথায় আমার সেটাই প্রশ্ন? তবে আন্দোলনের নামে যারা ভিসি’র বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তারা যে কি চায় বারবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেটা কিন্তু সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বুধবারই বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায় রয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের রায় আছে যে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ওইভাবে সংরক্ষণ থাকবে। আমরা হাইকোর্টের রায় কীভাবে লঙ্ঘন করবো। কীভাবে হাইকোর্টের রায় বাদ দেবো? সেটা তো আমরা করতে পারছি না। তবে তো হাইকোর্টের রায় অবমাননা হবে। তবে কোটা যেটাই থাকুক, কোটা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে যে জায়গায় খালি থাকবে সেখানে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে এবং সেটাই করা হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র বাসভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে ভালো কথা, কিন্তু ভিসি’র বাড়িতে আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়া, গাড়িতে আগুন দেয়া, বাড়িতে আগুন দেয়া, ভাঙচুর এবং লুটপাট করা, এমনকি ভিসি’র পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এটা কী কোনো শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কী কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে? তিনি বলেন, আজকে তারা কথায় কথায় আন্দোলনের নামে ক্লাসে তালা দেয়, ক্লাস করবে না, পরীক্ষা দেবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কে হবে? সেশন জট আগে অনেক ছিল, অন্তত আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেশন জট দূর করেছি। সেশন জট ছিল না। কিন্তু এখন তাদের (আন্দোলনকারী) কারণেই আজকে আবার সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, মাত্র ১৫ টাকা হলের সিট ভাড়া, আর ৩০ টাকার খাবার পৃথিবীর কোথায় আছে? আজকে যারা হলে থাকে, তাদের জন্য নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকার সিট ভাড়া দিয়ে আর ৩০ টাকার খাবার খেয়ে যারা লাফালাফি করে, তাহলে সিট ভাড়া আর খাবার যে বাজার দর আছে সেইভাবেই দিতে হবে তাদের। সেটা না করে তারা হলের গেট ভেঙে ফেলবে, মধ্য রাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে- এটা কী আন্দোলন? মধ্য রাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে। আমি চিন্তায় বাঁচি না। ভোর সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত তাদের সবার হলে পৌঁছে দিয়ে আমি ঘুমিয়েছি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভিসি’র বাড়িতে সিসি ক্যামেরা ছিল, হামলার সময় সেটা ভেঙে ফেলেছে। চিপটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে যেন হামলাকারীদের দেখা না যায়। কিন্তু তারা জানতো না আশে পাশে আরও অনেক ক্যামেরা ছিল। বৃটিশ কাউন্সিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা ছিল, সেই  ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একটা একটা করে হামলাকারীকে খুঁজে বের করা হচ্ছে। এখানে যারা ভাঙচুর করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে- তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকে স্বীকারও করেছে। যেখানেই যারা থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে, তারা যতই আন্দোলর করুক। তিনি বলেন, শিক্ষার নীতিমালা তো সরকার করবে। সেটা আমাদের দেখার বিষয়, শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করবে। অনেক জায়গায় চাকরি খালি আছে, যারা মেধা তালিকায় থাকছে, কেউই বাদ যাচ্ছে না। যারাই মেধাবী তারা কোন কোনোভাবে চাকরি পাচ্ছে।
এবারের সংসদ সুন্দর ও সহনশীল পরিবেশ ছিল

বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সংসদে ভদ্র, সুন্দর, সহনশীল পরিবেশ ছিল। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যেটা হওয়ার কথা ছিল মূলত সেটাই হয়েছে। অতীতে সংসদে খিস্তিখেউর, জনপ্রতিনিধি হলেও ফাইল ছোড়াছুড়ি, টেলিভিশনের ক্যামেরা ভাঙচুর, অভদ্র কথাবার্তায় এমন বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়ে যেতাম, যাতে জাতির কাছে লজ্জিত হতাম। এবারের সংসদ ২০১৪ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গঠন হয়েছে। সংসদ অধিবেশনে কোনো অশালীন ঘটনা হয়নি। বিরোধী দল সংসদে থেকে প্রত্যেকটা বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, বাজেট অধিবেশনে দেশের ইতিহাসে সবচাইতে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি। কারণ আমাদের একটাই লক্ষ্য তা হচ্ছে- দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। আমরা প্রতিটি বছর প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ ভাগে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হয়েছি। বিশ্বের কেউ বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। আমরা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করার লক্ষ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে অনেক ঝড়-ঝঞ্ছা মোকাবিলা করে আজ বাংলাদেশ শুধু উন্নয়ন করছে না, স্থায়ী উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অনেক মানুষই এখন ভিক্ষার চাল নিতে চায় না

বর্তমান সরকারের আমলে গ্রামীণ অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন আর কোনোদিক থেকে পিছিয়ে নেই। আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। বিশ্বব্যাপী আজ বাংলাদেশ সমাদৃত। আমাদের লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ করা। তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলেছি। রোজার সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্যশস্য পাঠাই। কিন্তু অনেক স্থানে এখন খাদ্য নেয়ার মতো লোক নেই। সবাই বলে আমাদের ঘরে খাবার আছে, ভিক্ষার চাল নিব না। কারণ তাদের ঘরে খাদ্য আছে, ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করেছি। শুধু খাদ্য নয়, মাছ, তরিতরকারি ও মাংস উৎপাদনেও আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছি। আমরা পুষ্টি ও আমিষ দিতে পেরেছি বলেই মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। পুরুষদের ৭১ এবং মেয়েদের আয়ুস্কাল ৭২ থেকে ৭৩ হয়েছে। তিনি বলেন, আজ দেশের কোথাও মানুষের মধ্যে হাহাকার নাই। বরং মানুষ আমাকে গালি দেয় কাজের লোক পায় না বলে। আমাদের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আমরা শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো। তিনি বলেন, বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়া এখন অনেকের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যাদের সামর্থ্য নাই তাদের চিকিৎসা করিয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, বেসরকারিখাতকে আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বিদ্যুৎ, বিমান, ব্যাংক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলিটারি ডিক্টেরররা ক্ষমতা দখল করে উপকারের বদলে দেশের সর্বনাশ করে গেছে। মতিঝিলে একসময় ঝিল ছিল। আইয়ুব খান তা বন্ধ করে দেয়। সেগুনবাগিচা ও পান্থপথে আগে খাল ছিল। জেনারেল এরশাদ সাহেব এসে সেই খাল বন্ধ করে দিয়ে বক্সকালভার্ট নির্মাণ করেন। এতে করে পানি এখন আরা নামতে পারে না। জিয়া এয়ারপোর্ট থেকে দীর্ঘরাস্তায় দু’ধারে থাকা সকল কৃষ্ণচুড়া গাছ কেটে ফেলে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে ক্ষমতায় আসতে পারলে আমরা সকল বক্স কালভার্ট ভেঙে ফেলে নিচে খাল এবং উপর দিয়ে এলিভেটেড রাস্তা করে দেবো। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বৃদ্ধির সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের কারণে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বৃদ্ধি করতে সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এতে করে কোনো নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে আসার পথে কোনো বাধা হবে না। কিন্তু এটা নিয়েও নারী আন্দোলনের অনেকে সমালোচনা করেন। তাদের বলবো এতো কথা না বলে আগামী নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিন, জনগণের কাছে যান, ভোট নিয়ে সংসদে আসুন। কিন্তু ভালো একটা কাজ করার পরও কেন জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন? ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে পালনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক-কামার-কুমার-বেদে-হিজড়া-নৃ-গোষ্ঠীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ভাগ্যের পরির্তনের কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে দেশের একটি মানুষ দরিদ্র থাকবে না, একটি মানুষও অবহেলিত ও গৃহহারা থাকবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলবোই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status