দেশ বিদেশ

সীমান্ত এলাকায় মাইন বসানোর অভিযোগ অস্বীকার মিয়ানমারের

স্টাফ রিপোর্টার:

১৩ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গোপনে মাইন বা ইমেপ্রাভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গতকাল পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিজিপির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মজিবুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকায় ল্যান্ড মাইন ও আইইডির ব্যবহার সম্পর্কে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থান জানিয়েছেন, মিয়ানমার সিকিউরিটি ফোর্স কখনই সীমান্ত এলাকায় ল্যান্ড মাইন ও আইইডির ব্যবহার করে না। তারপরও কোথাও এ ধরনের জিনিস দেখা গেলে তাৎক্ষণিক উভয় পক্ষ যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্মেলনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ‘অবজেকশন’ বলে দাঁড়িয়ে যান বিজিপি কর্মকর্তারা। এ সময় প্রশ্নটি ‘আউট অব এজেন্ডা’ বলে উল্লেখ করে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমান বলেন, এই সীমান্ত সম্মেলনে দুই দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি অনেক বড় বিষয়। এটা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে। গত ৯ থেকে ১২ই জুলাই ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে এ সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এবং বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। যৌথ সম্মেলনে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। সীমান্তে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির বিষয় উল্লেখ করে সম্প্রতি মিয়ানমারের নাগরিকদের সীমান্ত অতিক্রমসহ সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ হতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধে মিয়ানমার পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পক্ষ হতে জানানো হয় যে, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বন্ধে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সম্মেলনে সীমান্তে মাদক, অস্ত্র, নারী ও শিশু পাচারসহ সব ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের জন্য সমন্বিত যৌথ টহল, সীমান্তে নজরদারি ও অন্যান্য তৎপরতা বৃদ্ধি, উভয় পক্ষের মাঠ পর্যায়ের অধিনায়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ এবং সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় পরস্পরের মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়ে বিজিবি-বিজিপি সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই বর্ডার লিয়াজোঁ অফিসের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। এ প্রসঙ্গে মিয়ানমার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, মংডুতে ইতিমধ্যে একটি বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবি’র পক্ষ হতে জানানো হয়, টেকনাফ উপজেলায়ও অনুরূপ একটি বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়েছে যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে মনে করেন তারা। সম্মেলনে উত্থাপিত বিষয়গুলোর মধ্যে মাদক দ্রব্য ইয়াবার ব্যাপকতার বিষয়ে উভয়পক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করে। যুব সমাজের ওপর ইয়াবার ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষ সবধরনের মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে পরস্পরকে সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে সম্মত হন। মিয়ানমারের পক্ষ হতে বৈঠকে অবহিত করা হয় যে, তাদের দেশেও একই সমস্যা বিরাজ করছে এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমান্তে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। উভয় পক্ষ সীমান্তে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন সীমান্ত সম্মেলনে। সিনিয়র পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন মিয়ানমারের নেপিডোতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

সীমান্ত সম্মেলনে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলে মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স (এমপিএফ) এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও সেদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন বিভাগ, মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ও ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমান, বিজিবিএম, এনডিসি’র নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশ নেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status