দেশ বিদেশ

বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ালো ১৭২২ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১২ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি আগের অর্থবছরের প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১ মাসে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২২ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯.৯৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন বড় প্রকল্পের সরঞ্জাম দেশে আমদানি হওয়ায় বিপুল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় চাপে পড়েছে। আমদানি বাড়লেই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা অনেক দুর্বল হয়েছে। যার প্রভাব পড়ে আমদানি ও শিল্পপণ্যের দামে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২২ কোটি ৮০ লাখ (১৭.২৩ বিলিয়ন) ডলার। এই অঙ্ক আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের প্রায় দ্বিগুণ। আর পুরো অর্থবছরের (জুলাই-জুন) ঘাটতির চেয়ে ৮২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর অর্থবছর শেষে হয়েছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঘাটতি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৫ হাজার ৫২ কোটি ৪০ লাখ (৫০.৫২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩২৯ কোটি ৬০ লাখ (৩৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ঘাটতি বেড়েছে সেবা বাণিজ্যেও। জুলাই-মে সময়ে সেবা বাণিজ্যে মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪০৮ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩০০ কোটি ডলার ছিল (সেবাখাতের বাণিজ্যে মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে)।
গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই হিসাবে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে সরকারের আর্থিক হিসাবে ভালো উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে যেখানে ৪২১ কোটি ৭০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, এবার একই সময়ে সেই উদ্বৃত্ত ৮০৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মে মাস শেষে ৯৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ২২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ২৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই দশ মাসে এফডিআই কমেছে ৭.৩৬ শতাংশ। এই সময়ের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ দেশে এসেছে ৪৩৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৮২.৬৬ শতাংশ বেশি।
আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যেও বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৩৭ কোটি ৯০ লাখ (৯.৩৮ বিলিয়ন) ডলারে। এই ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের প্রায় সাড়ে চার গুণ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে ২২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। জুনে অর্থবছর শেষে তা ১৪৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। বিশ্লেষকরা বলেন, গত অর্থবছরজুড়েই আমদানি বাড়ছিল। শেষদিকে এসে আরো বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবার আমদানি ব্যয় ৬০ বিলিয়ন ডলারের মতো হবে। আর বাণিজ্য ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status