ইংল্যান্ড থেকে
এক মিউজিয়াম দেখতে দরকার এক সপ্তাহ
সামন হোসেন, সেন্ট পিটার্সবার্গ (রাশিয়া) থেকে
১২ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন
মস্কো রাশিয়ার রাজধানী হলেও সেন্ট পিটার্সবার্গের রাস্তাঘাট একটু বেশিই ব্যস্ত মনে হয়েছে। শহরের প্রতিটা গলিতে আনন্দ। কি অনায়াসে হেসেখেলে একে অপরের কাঁধে হাত রেখে হেঁটে চলছে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপন মনে রঙ-তুলিতে ছবি আঁকছেন শিল্পী। গিটার নিয়ে কেউ মনের সুখে বাজিয়ে যাচ্ছেন গান। একেবারেই হাসিখুশিতে ভরপুর জমজমাট একটা শহর। বিশ্বকাপের সাতটি খেলা পড়েছে এই শহরে। এ কারণেই দু’বার সেন্ট পিটার্সবার্গে আসতে হয়েছে। এই শহরের নামে আগে কত কি শুনে এসেছি! একজন দুজনকে দিয়ে কখনোই একটা শহরকে কিংবা একটা জাতিকে বিচার করা যায় না। রাশিয়ার সব মানুষই কেজিবির এজেন্ট নয়; সবাই বাসার ছাদে নিউক্লিয়ার বোম্ব সেট করে আমেরিকার দিকে তাক করে বসে নেই। এখানেও শিল্পী আছে, গায়ক আছে, উচ্ছল টিনেজার তরুণ-তরুণী আছে; আমার মতো, আমাদের মতো, সুখে উদ্বেলিত, দুঃখে জর্জরিত হাজার হাজার সাধারণ মানুষ আছে। যা নিজ চোখে না দেখলে হয়তো কোনোদিন বিশ্বাসই হতো না।
একটি দেশ ও জাতির যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা এবং নিজস্ব স্বকীয়তায় বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অনন্য নজির রাশিয়ার এ শহরটি। পুরো শহরই যেন খাল ও ব্রিজে ভরা। শহরজুড়ে রয়েছে ৩০০ কিলোমিটারের মতো সুদৃশ্য খাল। ব্রিজ আছে ৮০০ এর মতো। পরিপাটি শহরটির বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পর্যটকদের টেনে আনে এখানে। হারমিটেজ মিউজিয়াম, পিটার অ্যান্ড পল ফের্টেস, সামার গার্ডেন, দ্য স্টেট রাশিয়ান মিউজিয়াম, দ্য ক্যাথেরিন প্যালেস, পিটারহফ, ম্যারিনক্সি থিয়েটার, সেন্ট আইজ্যাক ক্যাথিড্রাল, চার্জ অব সেইভিয়ারসহ অসংখ্য দর্শনীয় জায়গা এই শহরে। জল, স্থল ও আকাশ-যেখান থেকেই এ শহর দেখুন না কেন, আপনার নজর কাড়বেই।
বেলজিয়াম ফ্রান্সের সেমিফাইনলের ফাঁকে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল পিটারহফ ও হারমিটেজ মিউজিয়ামে। এক সময় সেন্ট পিটার্সবার্গ ছিল রাশিয়ার রাজধানী। ১৯১৮ সালের পর কেন্দ্রীয় সরকার রাশিয়ার রাজধানী ঘোষণা করে মস্কোকে। কয়েকবার নামও পরিবর্তন হয়েছিল শহরের। মাঝে এ শহরের নাম ছিল লেনিন গ্রাদ। ১৯৯১ সালে শহরটির নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ ফিরিয়ে দেয়া হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রতিষ্ঠাতা পিটারের বাসভবন পিটারহফের নামেই একটি শহর রয়েছে যা সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর থেকে একটু বাইরে। মেট্রো বাস মিলিয়ে এক ঘণ্টার পথ। চার সহকর্মী ও ফিফা ভলান্টিনয়ার মশিউরকে নিয়ে প্রবেশ করলাম পিটারহফের ভিতরে। সুউচ্চ প্রাচীন ভবনের ছড়াছড়ি। কোনোটা পিটারের সবার ঘর, কোনোটা আবার বৈঠকখানা, কোনটা আবার অতিথি শালা। এসব মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক মতো পুরো দালান চোখে পরলো। এরপর আমরা আসতে আসতে ভবনের পেছনের দিকে আসলাম। ছয়শ’ রোবেলের টিকিটের বিনিয়য়ে আমরা প্রবেশ কলাম পিটারের বাগানবাড়িতে। ত্রিশ কিলোমিটার বাগানবাড়িতে সারি সারি গাছপালা। রয়েছে নানা স্বর্ণের মূর্তি। পেছনে রয়েছে বাল্টিক সাগরের একটি অংশ। রাশিয়া বিশাল এক দেশ হলেও ওই সময় কৃষ্ণসাগর, বাল্টিক সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিল না। পিটার দ্য গ্রেট দায়িত্ব নিয়েই এসব সমুদ্র উপকূলের সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ তৈরির কাজ শুরু করেন। বাল্টিক সাগরের একটি অংশ ছিল তার বাসভবন পিটারহফের ঠিক পেছনে। যেখান দিয়ে পর্যটক চাইলে ঘুরে বেড়াতে পারবেন বাল্টিক সাগরে। সময়ের স্বল্পতার কারণে আমরা আর সমুদ্র ভ্রমণে যায়নি। গাড়ি ভাড়া না নেয়ার কারণে পুরো পিটারহফও ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি।
ম্যাচের দিন সকালে দিন গেলাম হ্যার্মিটেজ মিউজিয়ামে। ১৭৬৪ সালে ক্যাথলিন দ্যা গ্রেট দারা প্রতিষ্ঠিত হ্যার্মিটেজ মিউজিয়াম রাশিয়ার শিল্প সংস্কৃতির এক অপরূপ সংগ্রহশালা। নেভা নদীর তীরে অবস্থিত এই মিউজিয়ামটির ইউন্টার প্যালেস, ক্ষুদ্র হ্যামির্টেজ পুরনো ও নতুন হার্মিটেজ হার্মিটেজ থিয়েটারসহ ৫টি বিল্ডিংয়ে সা সংরক্ষিত আছে তা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ১৮৫২ সালে। ত্রয়োদশ থেকে এ পর্যন্ত যতো ভাস্কর্য আছে ১২০টি কক্ষে তা সংরক্ষিত আছে। একদিন কেন গোটা এক সপ্তাহে পুরো হার্মিটেজ মিউজিয়াম দেখে শেষ করা সম্ভব নয়।
মিউজিয়ামে প্রবেশেই চোখে পড়বে ১৯.২ টন ওজনের মার্বেল পাথরের কোলান ভাসি। প্রধান সিড়ির দেয়াল ও ছাদের অভ্যন্তরে সোনার তৈরি পাতের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ বিস্ময় সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় নিকোলাসের স্ত্রী আলেকজান্ডার ফিওডিরোভানের ড্রয়িংরুমটিও সোনায় মোড়ানো। ট্রেসরি গ্যালারিতে রয়েছে সোনা ও হীরকখচিত নানারকম অলঙ্কার। ফ্রান্স স্পেন ইতালির নবজাগরণে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রাফায়েল, জর্জনে, ভোরোনেজে ও লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর্ম সোভা পাচ্ছে এখানে। এই মিউজিয়ামের মাইকেল অ্যাঞ্জেলার কারসিং বয় নামে একটি শিল্পকর্ম সংরক্ষিত আছে। নাইট হলটি মূলত পনেরশ ও সতেরশ শতকের বিভিন্ন অস্ত্র ও মুদ্রার সংগ্রহশালা। ১৯১৭ সালে বিপ্লবের পর রাশিয়ার বহু মূল্যবান সম্পদ, পরে যেগুলো জাতীয় সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। তার অধিকাংশ এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। সময় স্বল্পতার কারণে হার্মিটেজের কিছুই ভালো করে দেখার সুযোগ হয়নি।
জানতাম রাশিয়ার মানুষ থিয়েটারপ্রিয়। সেন্ট পিটার্সবার্গের মানুষ একটু বেশিই।
এখানে তিন শতাধিক থিয়েটার হল আছে। থিয়েটার এতটাই জনপ্রিয় যে, এখান থেকে আসে রাজস্ব আয়ের বড় একটা অংশ। ৫০০ রুবলের নিচে থিয়েটারের কোনো টিকিট নেই এখানে। হার্মিটেজ থেকে ঘুরে তাই থিয়েটার দেখতে চেয়েছিলাম। সেন্ট পিটার্সবার্গেও সবচেয়ে বড় প্রভেস্কি থিয়েটারের সামনে থেকে হতাশ হয়ে ফিরতে হলো আমাদের। ওইদিন কেন আগামী এক সপ্তাহের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়েছে। এ কারণে হয়নি থিয়েটারে ঢোকাও। দেখার অপূর্ণতা থাকলেও দু’বারের সেন্ট পিটার্সবার্গ ভ্রমণে তৃপ্ত হয়েছি, যা তৃপ্তি রাজধানী মস্কোও আমাকে দিতে পারেনি।
একটি দেশ ও জাতির যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা এবং নিজস্ব স্বকীয়তায় বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অনন্য নজির রাশিয়ার এ শহরটি। পুরো শহরই যেন খাল ও ব্রিজে ভরা। শহরজুড়ে রয়েছে ৩০০ কিলোমিটারের মতো সুদৃশ্য খাল। ব্রিজ আছে ৮০০ এর মতো। পরিপাটি শহরটির বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পর্যটকদের টেনে আনে এখানে। হারমিটেজ মিউজিয়াম, পিটার অ্যান্ড পল ফের্টেস, সামার গার্ডেন, দ্য স্টেট রাশিয়ান মিউজিয়াম, দ্য ক্যাথেরিন প্যালেস, পিটারহফ, ম্যারিনক্সি থিয়েটার, সেন্ট আইজ্যাক ক্যাথিড্রাল, চার্জ অব সেইভিয়ারসহ অসংখ্য দর্শনীয় জায়গা এই শহরে। জল, স্থল ও আকাশ-যেখান থেকেই এ শহর দেখুন না কেন, আপনার নজর কাড়বেই।
বেলজিয়াম ফ্রান্সের সেমিফাইনলের ফাঁকে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল পিটারহফ ও হারমিটেজ মিউজিয়ামে। এক সময় সেন্ট পিটার্সবার্গ ছিল রাশিয়ার রাজধানী। ১৯১৮ সালের পর কেন্দ্রীয় সরকার রাশিয়ার রাজধানী ঘোষণা করে মস্কোকে। কয়েকবার নামও পরিবর্তন হয়েছিল শহরের। মাঝে এ শহরের নাম ছিল লেনিন গ্রাদ। ১৯৯১ সালে শহরটির নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ ফিরিয়ে দেয়া হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রতিষ্ঠাতা পিটারের বাসভবন পিটারহফের নামেই একটি শহর রয়েছে যা সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর থেকে একটু বাইরে। মেট্রো বাস মিলিয়ে এক ঘণ্টার পথ। চার সহকর্মী ও ফিফা ভলান্টিনয়ার মশিউরকে নিয়ে প্রবেশ করলাম পিটারহফের ভিতরে। সুউচ্চ প্রাচীন ভবনের ছড়াছড়ি। কোনোটা পিটারের সবার ঘর, কোনোটা আবার বৈঠকখানা, কোনটা আবার অতিথি শালা। এসব মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক মতো পুরো দালান চোখে পরলো। এরপর আমরা আসতে আসতে ভবনের পেছনের দিকে আসলাম। ছয়শ’ রোবেলের টিকিটের বিনিয়য়ে আমরা প্রবেশ কলাম পিটারের বাগানবাড়িতে। ত্রিশ কিলোমিটার বাগানবাড়িতে সারি সারি গাছপালা। রয়েছে নানা স্বর্ণের মূর্তি। পেছনে রয়েছে বাল্টিক সাগরের একটি অংশ। রাশিয়া বিশাল এক দেশ হলেও ওই সময় কৃষ্ণসাগর, বাল্টিক সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিল না। পিটার দ্য গ্রেট দায়িত্ব নিয়েই এসব সমুদ্র উপকূলের সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ তৈরির কাজ শুরু করেন। বাল্টিক সাগরের একটি অংশ ছিল তার বাসভবন পিটারহফের ঠিক পেছনে। যেখান দিয়ে পর্যটক চাইলে ঘুরে বেড়াতে পারবেন বাল্টিক সাগরে। সময়ের স্বল্পতার কারণে আমরা আর সমুদ্র ভ্রমণে যায়নি। গাড়ি ভাড়া না নেয়ার কারণে পুরো পিটারহফও ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি।
ম্যাচের দিন সকালে দিন গেলাম হ্যার্মিটেজ মিউজিয়ামে। ১৭৬৪ সালে ক্যাথলিন দ্যা গ্রেট দারা প্রতিষ্ঠিত হ্যার্মিটেজ মিউজিয়াম রাশিয়ার শিল্প সংস্কৃতির এক অপরূপ সংগ্রহশালা। নেভা নদীর তীরে অবস্থিত এই মিউজিয়ামটির ইউন্টার প্যালেস, ক্ষুদ্র হ্যামির্টেজ পুরনো ও নতুন হার্মিটেজ হার্মিটেজ থিয়েটারসহ ৫টি বিল্ডিংয়ে সা সংরক্ষিত আছে তা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ১৮৫২ সালে। ত্রয়োদশ থেকে এ পর্যন্ত যতো ভাস্কর্য আছে ১২০টি কক্ষে তা সংরক্ষিত আছে। একদিন কেন গোটা এক সপ্তাহে পুরো হার্মিটেজ মিউজিয়াম দেখে শেষ করা সম্ভব নয়।
মিউজিয়ামে প্রবেশেই চোখে পড়বে ১৯.২ টন ওজনের মার্বেল পাথরের কোলান ভাসি। প্রধান সিড়ির দেয়াল ও ছাদের অভ্যন্তরে সোনার তৈরি পাতের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ বিস্ময় সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় নিকোলাসের স্ত্রী আলেকজান্ডার ফিওডিরোভানের ড্রয়িংরুমটিও সোনায় মোড়ানো। ট্রেসরি গ্যালারিতে রয়েছে সোনা ও হীরকখচিত নানারকম অলঙ্কার। ফ্রান্স স্পেন ইতালির নবজাগরণে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রাফায়েল, জর্জনে, ভোরোনেজে ও লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর্ম সোভা পাচ্ছে এখানে। এই মিউজিয়ামের মাইকেল অ্যাঞ্জেলার কারসিং বয় নামে একটি শিল্পকর্ম সংরক্ষিত আছে। নাইট হলটি মূলত পনেরশ ও সতেরশ শতকের বিভিন্ন অস্ত্র ও মুদ্রার সংগ্রহশালা। ১৯১৭ সালে বিপ্লবের পর রাশিয়ার বহু মূল্যবান সম্পদ, পরে যেগুলো জাতীয় সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। তার অধিকাংশ এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। সময় স্বল্পতার কারণে হার্মিটেজের কিছুই ভালো করে দেখার সুযোগ হয়নি।
জানতাম রাশিয়ার মানুষ থিয়েটারপ্রিয়। সেন্ট পিটার্সবার্গের মানুষ একটু বেশিই।
এখানে তিন শতাধিক থিয়েটার হল আছে। থিয়েটার এতটাই জনপ্রিয় যে, এখান থেকে আসে রাজস্ব আয়ের বড় একটা অংশ। ৫০০ রুবলের নিচে থিয়েটারের কোনো টিকিট নেই এখানে। হার্মিটেজ থেকে ঘুরে তাই থিয়েটার দেখতে চেয়েছিলাম। সেন্ট পিটার্সবার্গেও সবচেয়ে বড় প্রভেস্কি থিয়েটারের সামনে থেকে হতাশ হয়ে ফিরতে হলো আমাদের। ওইদিন কেন আগামী এক সপ্তাহের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়েছে। এ কারণে হয়নি থিয়েটারে ঢোকাও। দেখার অপূর্ণতা থাকলেও দু’বারের সেন্ট পিটার্সবার্গ ভ্রমণে তৃপ্ত হয়েছি, যা তৃপ্তি রাজধানী মস্কোও আমাকে দিতে পারেনি।