অনলাইন

আমরা প্রমাণ করেছি

সংসদ রিপোর্টার

১১ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ৫:০৯ পূর্বাহ্ন

গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেই দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়। আমরা তা প্রমাণ করেছি। গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক সেটাই আমরা চাই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে দেশ উন্নত হয় না, বরং মানুষ বঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার হয় তাও বার বার এ দেশে প্রমাণ হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, সুরক্ষাসহ যে কোন উন্নয়নে দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নারী মানে একজন মা। কিন্তু একজন নারী হয়ে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া এটা চিন্তাই করা যায় না। এটা সমস্ত নারী জাতির জন্য কলঙ্ক। সংরক্ষিত মহিলা আসনের নুরজাহান বেগমের সম্পুরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একজন নারী হয়ে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আদালতের রায়ে জেলে রয়েছেন। মামলাটা আমরা করিনি। রাজনৈতিক কারণে করলে আমরা ২০১৪-১৫ সালেই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম। তিনি বলেন, কোর্টের রায়ে তার সাজা হয়েছে। মামলাটি প্রায় ১০ বছর চলেছে। বিএনপি’র এতো জাঁদরেল জাঁদরেল আইনজীবী কেউই আদালতে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলো না। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি অপরাধী। আর বিএনপি নেতারাও সেটা জানতেন বলেই মামলার রায়ের আগেই দলটির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা সংশোধন করে দুর্নীতিবাজ, অপরাধী ও দন্ডিতদের নেতা হওয়ার সুযোগ রাখা হলো কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যেভাবে সুষ্ঠূভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমাদের মেয়েরাই লাভবান হবে। আমি বলবো- নারীর ক্ষমতায়ন সুরক্ষা, উন্নয়ন সবকিছুই নির্ভর করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। দেশে যখন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ থাকে তখন সর্বস্তরের মানুষ কর্মক্ষেত্রে পারদর্শীতা দেখাতে পারে, দেশে উন্নতি হয়। আমরা ১৯৯৬ সালে যেসমস্ত প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম, বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। দেশে যদি সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ অব্যাহত থাকে তাহলে অনেক কাজ করা যায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রেখেছি বলেই দেশে এতো উন্নতি হয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে নারীরা নির্যাতিত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর মতো নারীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়, পাশবিক নির্যাতন চালায়। ৬ বছরের ছোট শিশুকে পর্যন্ত গণধর্ষণ করে। দেশের এমন কোন স্থান ছিল না যেখানে নির্যাতন হয়নি। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা ভোট পায়নি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালের নামে তারা নির্বিচারে নারীসহ দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সারাদেশে নাশকতা চালিয়েছে। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতা তখনই সম্ভব যখন দেশে গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে। কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিতে আমাদের আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা দরকার। আমরা তা নির্মাণ করবো। যার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ভৌগলিক দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে যোগাযোগ তৈরি করবো। আমরা বাংলাদেশ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এছাড়া আমরা আরও উন্নত বিমানবন্দর নির্মাণ করবো। দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবো। গ্রামকে নগরে পরিণত করবো, দেশের সব গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেব। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শান্তিময় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।

আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অসামান্য ভূমিকা
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা সর্বদা কাজ করে চলেছি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান আজ সর্বস্বীকৃত। একদিকে আজ বাংলাদেশ যেমন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় রেখেছে অসামান্য ভূমিকা। যার ফলে অর্জন করেছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মানজনক স্বীকৃতি। শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব শান্তির জন্য গৃহীত যে কোন উদ্যোগে বাংলাদেশের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ বজায় থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্বে একটি সুন্দর, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশের ভূমিকা আজ সারাবিশ্বে স্বীকৃত। বর্তমানে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় হলো সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। সন্ত্রাসবিরোধী ১৪টি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের প্রত্যেকটিতেই বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ সমগ্র বিশ্বে রোল মডেল। তিনি বলেন, মিয়ানমারে অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে আমরা মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই উদারতা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা তথা শান্তি বজায় রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, যা আজ সর্বজনবিদিত।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে সব ধরণের সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, ইতোপূর্বে জঙ্গী/সন্ত্রাসী/নাশকতামূলক/ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কর্মকান্ড ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীসহ সকল অপরাধীদের কর্মকান্ডরোধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম গঠন করে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ১৮ মে থেকে এ পর্যন্ত চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং এগুলো পরিবহনের বাহন উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট মোট ১৫ হাজার ৩৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মোট ২০ হাজার ৭৬৭ জন আসামীকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ হাজার ২৮৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দেশ ও বিদেশে যুগোপযোগি প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রেরণের পরিকল্পনা
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম নাসিমা ফেরদৌসীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে নিজেদের অবস্থানকে সমুন্নত রাখতে এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আয়ুস্কাল শেষ হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে প্রেরণ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, স্বপ্নের স্যাটেলাইট নির্মাণ ও এর সফল উৎক্ষেপণে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। মহাকাশে আজ বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ গৌরব আমাদের সরকারের, এ গৌরব দেশের ১৬ কোটি মানুষের। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আওয়ামী লীগ সরকারের গতিশীল উন্নয়নের ধারাবাহিকতার অংশ। এই স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো। সংসদ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করলো এক এলিট ক্লাবে। নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর এই ক্লাবে বাংলাদেশ ৫৭তম সদস্য। স্থল ও জলসীমা জয়ের পর মহাকাশ জয় ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘ যাত্রা। দীর্ঘ ৬ বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গত ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ জয় সম্ভব হয়েছে। এই স্যাটেলাইট স্পেস টেকনোলজির জ্ঞান সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে এবং এর মাধ্যমে বার্ষিক ১৪ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

নারীর ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশ রোল মডেল
সংরক্ষিত মহিলা আসনের নুরজাহান বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ক্ষেত্রসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করে আসছি। নারী উন্নয়নে আমাদের এ কর্মকান্ড আমরা অব্যাহত রাখবো। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারী উন্নয়নে আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারী-পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সুসংহতকরণ আমাদের সরকারের গৃহীত বহুমুখী কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আমাকে ইউএন উইমেন প্লানেট ৫০ ঃ ৫০ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status