শেষের পাতা

অসহায় নুরুর পরিবারের আহাজারি

মরিয়ম চম্পা

১১ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরুর শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। তার কিডনি ও ইউরিনে ইনফেকশনসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, চিকিৎসার খরচ   যোগাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

নুরুর ভাবি মিতা বলেন, এই মুহূর্তে নিজেদের খুব অসহায় মনে হচ্ছে। গত সোমবার নুরুর লিভার ও কিডনির টেস্ট করানো হয়েছে। এছাড়া ডান হাতের কাঁধের অংশ থেকে হাড় সরে যাওয়ায় গলায় ব্যাগ দিয়ে হাত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বুধবার ওর মাথার সিটি স্ক্যান করানো হবে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের হামলায় নুরু আহত হওয়ার পরপরই আমার শ্বশুরকে ফোন করে বলি বাবা নুরুর অবস্থা ভালো না। ওর চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে। আমার শ্বশুর একজন কৃষক। তার কোনো নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই খবর পাওয়ার পরপরই তিনি এলাকায় এক ব্যক্তিকে গিয়ে বলেন, ভাই আমি জমি বিক্রি করবো আমার টাকা লাগবে।

তখন একটি কাগজে লিখিত দিয়ে তিনি অল্প কিছু টাকার ব্যবস্থা করে ঢাকায় আসেন। মিতা বলেন, কিডনির সমস্যাটা সারতে অনেক সময় লাগবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। বর্তমানে নুরু একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানে দৈনিক ৭ হাজার টাকা বেড ভাড়া দিতে হয়। হাই পাওয়ারের মেডিসিনসহ আনুষঙ্গিক আরো খরচ রয়েছে। টানা এক সপ্তাহ ধরে বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার।

তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নুরু মেজ। নুরুর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা থানায়। নুরুর বয়স যখন আড়াই বছর তখন মা মারা যান। বাবা মো. ইদরিস হাওলাদার কৃষি কাজ করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে শুক্রবার নুরুর পিতা ইদরিস হাওলাদার বলেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার ছেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। তাকে অমানবিকভাবে পেটানো হয়েছে। আজকে আমার ছেলেকে পিটিয়েছে, কালকে আপনার ছেলে, এরপর তার ছেলে- এভাবেই দেশটা চলবে। কেবল আমরা মরে যাবো, আর তারাই বেঁচে থাকবে। কথা বলার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নুরুর বাবা।

গত ৩০শে জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় সকাল ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হককে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ রয়েছে। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকেও তাকে মধ্যরাতে বের করে দেয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতাল বদল করতে হয়।

এদিকে গুরুতর আহত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা তরিকুল ইসলাম তারেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী থেকে তাকে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তরিকুলের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। গত ২রা জুলাই বিকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করে। সেসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নেতা ও রাবি শিক্ষার্থী তারেককে রামদা, হাতুড়ি, লোহার পাইপ ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে তরিকুলের ডান পা ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status