বাংলারজমিন

অ্যামোনিয়া গ্যাসে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫শ’ কর্মী আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

১১ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ৯:০৫ পূর্বাহ্ন

আশুগঞ্জ সারকারখানা থেকে নির্গত মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই গ্যাসে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কর্মরত দেশি-বিদেশি পাঁচশ’ কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এর কর্মকর্তারা। তাদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এ ঘটনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিদেশি শ্রমিকদের অনেকে প্রকল্প এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। অনেকে আবার দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন। বিষয়টি জানিয়ে মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান, সারকারখানা কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরে পত্র দিয়েছেন। তারা প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে সারকারখানা বন্ধ রাখারও প্রস্তাব করেন। তবে সার কারকারখানার কর্মকর্তারা বলছেন- যে অভিযোগ করা হচ্ছে বিষয়টি সেরকম নয়। এই প্রবলেম আদৌ নেই।
চরচারতলা এলাকায় সারকারখানার পাশেই ১৫০ মেগাওয়াটের (এইচ এফ ও চালিত) একটি নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। সি আর আর সি জিয়ং নামের একটি চাইনিজ কোম্পানি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। তাদের ২ শতাধিক বিদেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছে এখানে ।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দেয়া অভিযোগে বলা হয়- ২৫শে জুন থেকে ক্রমাগত অতিরিক্ত মাত্রায় ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত হচ্ছে সারকারখানা থেকে। এতে চায়নিজ বিদেশি ও স্থানীয় কর্মীসহ প্রায় ৫শ’ কর্মীর অধিকাংশই মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যাদের মধ্যে কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তীব্র অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত হওয়ায় তাদের শ্বাসনালী জ্বালাপোড়া, চোখে প্রদাহ, চোখ ও নাক জ্বালাপোড়া করা, শ্বাসনালী শুকিয়ে যাওয়া, ফুসফুস আক্রান্ত হওয়া, মাথা ঘোরানো, ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া এবং খাদ্যনালিতে প্রদাহে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পতিত হয়েছেন বিদেশি কর্মীরা। ঢাকা এবং স্থানীয়ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে তারা উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে সময় অতিবাহিত করছেন। এতে সকল বিদেশি ও স্থানীয় কর্মীরা তাদের কাজে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছেন না। ফলে কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে তারা প্রকল্প স্থান ত্যাগ করা শুরু করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় ওই পত্রে। এই অবস্থা চলমান থাকলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে তারা নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন বলেও এতে বলা হয়। সার্বক্ষণিকভাবে অ্যামোনিয়া গ্যাসের নির্গমনের তীব্রতার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ পরিকল্পনামাফিক এগুচ্ছে না বলে জানান বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা।
আশুগঞ্জ সারকারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এটিএম বাকী বলেছেন-সারকারখানায় সামান্য অ্যামোনিয়ার প্রভাব থাকবেই। তারা যদি এটা প্রকট আকার মনে করে সে ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। তারা যখন এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে আসে তখনই বাধা দেয়া হয়েছিল। আসলে এখন কিছুই নেই। যদি এমন প্রবলেম হতো তাহলে আমরা কাজ করতাম কীভাবে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় ১৪ মাস বন্ধ থাকার পর ১লা জুন রাত ১১টায় চালু হয় আশুগঞ্জ সারকারখানা। কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাস দূষণের অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের। দীর্ঘস্থায়ীভাবে অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবের কারণে স্থানীয় জনজীবন, উদ্ভিদকূল ও প্রাণীকূলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পত্রে উল্লেখ করা হয়।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status