অনলাইন

জার্মানিতে ‘কাজের লোক' রাখার ঝক্কি অনেক

১০ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ৫:৪৬ পূর্বাহ্ন

‘কাজের লোক' ছাড়া অনেক সংসার অচল হয়ে পড়ে৷ জার্মানিতে বেশিরভাগ মানুষ নিজের কাজ নিজেই সেরে ফেললেও কিছু ক্ষেত্রে ‘কাজের লোক' ছাড়া চলে না৷ তবে আইনি পথে নিয়োগ না করলে অনেক সমস্যা হতে পারে৷


দেশের অভিজ্ঞতা, বিদেশে অসহায়

বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ জার্মানির মতো দেশে এসে জীবনযাত্রার মান, চলাফেরার সুবিধা, চাকচিক্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান৷ যাঁরা কিছুকালের জন্য অথবা পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে এসেছেন, তাঁরা সবকিছু গুছিয়ে সংসার চালু করার পর একটি বিষয় টের পান৷ মনে প্রশ্ন জাগে, ঘরদোর ও বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় কাচা, ইস্ত্রি, রান্নাবান্না, বাসন মাজা – এ সব কাজ কে করবে? দেশের মতো ‘কাজের লোক', ‘কাজের বুয়া' কোথায় পাবো? সারা সপ্তাহ চাকরি অথবা সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকার পর ঘরের সব কাজ নিজে করা যে বড্ড কঠিন! বেশিরভাগ মানুষ নিয়মিত সেই সব কাজ সেরে ফেলে কাজের মাত্রা বাড়তে দেন না৷ অন্যদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়৷

ডিশ ওয়াশার, ওয়াশিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো যন্ত্র গৃহস্থালির কিছু কাজ সহজ করে দেয় বটে, কিন্তু তার পরেও কিছু কাজ থেকে যায়৷ জার্মানিতেও ‘কাজের লোক' রাখা সম্ভব, তবে তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একাধিক বিষয়৷ প্রথমত আর্থিক সামর্থ্য থাকা চাই৷ ঘণ্টা হিসেবে মজুরি স্থির করা হয়৷ সেই ব্যক্তি সপ্তাহে এক বা একাধিক বার নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা এসে কাজ করে যাবেন৷ কাজের ধরনও আগে থেকে স্থির করা থাকবে৷ আর হ্যাঁ, একটি বিষয় ভুললে চলবে না৷ জার্মানিতে শ্রমের মর্যাদা সব পেশার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ তাই সেই ব্যক্তির প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাতেই হবে৷

আইনি, না বেআইনি পথ?
অনেক পরিবারই সংসার সামলাতে এমন ‘পুৎসহিল্ফে' বা ‘কাজের লোক' রাখেন৷ তবে এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে৷ পরিচিত মহলে খোঁজখবর করলে সাধারণত ‘কাজের লোক'-এর সন্ধান পাওয়া যায়৷ সেই ব্যক্তির সঙ্গে কাজের ধরন, মজুরি ইত্যাদি নিয়ে একটা রফায়ও আসা যায়৷ তারপর দুই পক্ষই সন্তুষ্ট হলে সেই ব্যবস্থা অনেক কাল চলতে পারে৷ কিন্তু সেখানেই সমস্যা৷ জার্মানিতে এমন নথিবিহীন শ্রম বেআইনি৷ কাজের পরিসর যতই ছোট হোক না কেন, জার্মানিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তা করতে হয়৷ আয়কর, সামাজিক বিমাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ ও কর্মীর নাম নথিভুক্ত করতে হয়৷

এই দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ প্রথমত ধরা পড়লে জরিমানার আশঙ্কা রয়েছে৷ বাড়ির কাজ জার্মানির কর্মসংস্থান দপ্তরে ‘মিনি জব' হিসেবে স্বীকৃত৷ তাই সেই কাজ নথিভুক্ত না করলে ৫,০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷ সেই ‘কাজের লোক' বিদেশি হলে এবং তাঁর জার্মানিতে থাকা ও কাজের অধিকার না থাকলে জরিমানার অঙ্ক বা শাস্তির মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে৷ নথিবিহীন ‘কাজের লোক' চুরি করে পালালে থানায় ডায়রি করাও কঠিন৷ উলটে আপনারই জরিমানা হয়ে যেতে পারে৷ কাজে যাবার পথে অথবা কাজের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে জার্মানিতে নথিভুক্ত কর্মীরা দুর্ঘটনা বিমার সুযোগ নিতে পারেন৷ ‘কাজের লোক' নথিভুক্ত না হলে চিকিৎসার ব্যয় ও জরিমানার ধাক্কা আপনার কাঁধেই পড়তে পারে৷ তার উপর সরকার-স্বীকৃত ন্যূনতম মজুরি মেনে চলার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে৷ তার থেকে কম মজুরি দিলে আলাদা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ শুধু নিয়োগকর্তা নয়, ‘কাজের লোক' নিজেও এই সব সমস্যায় পড়ে নাজেহাল হতে পারেন৷

এমন সব সমস্যা এড়াতে অনেকে কিছু বেসরকারি সংস্থার শরণাপন্ন হন, যারা ‘কাজের লোক' ঠিক করে দেয়৷ যাবতীয় কাগজপত্র সামলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব নিয়ে গ্রাহককে ঝুটঝামেলা থেকে মুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় এমন সংস্থা৷ তারাই মজুরি গ্রহণ করে৷ তবে কার্যক্ষেত্রে এমন কিছু সংস্থা আইন অমান্য করে থাকে৷ তাই ভালোভাবে যাচাই না করে কোনো সংস্থার মাধ্যমে ‘কাজের লোক' নিয়োগ না করাই শ্রেয়৷

আইনি পথে সুবিধা

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নথিভুক্ত করে ‘কাজের লোক' রাখার কিছু সুবিধাও রয়েছে৷ যেমন, আয়করের ক্ষেত্রে কিছু ছাড়পাওয়া সম্ভব৷ অর্থাৎ, মজুরি বাবদ যে ব্যয় হয়েছে, তার কিছু অংশ কার্যত রাষ্ট্রই দিয়ে দেয়৷ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে করদাতা হিসেবে আপনিও সেই সুবিধা পেতে পারেন৷ বৈধভাবে সবকিছু করলে জরিমানা বা আইনি জটিলতার ঝুঁকির আশঙ্কাও মন থেকে দূর হয়৷ তা সত্ত্বেও একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে জার্মানিতে প্রায় ৮০ শতাংশ ‘কাজের লোক' বেআইনি ভিত্তিতে নিযুক্ত ছিলেন৷

এমন সব রক্ষাকবচ ‘কাজের লোক'-এর অধিকারও পাকাপোক্ত করে৷ উপযুক্ত পারিশ্রমিক ছাড়াও তাঁরা নিজেদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেতে পারেন৷ বাৎসরিক ছুটি, স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বিমার মতো সুবিধাও তিনি ভোগ করতে পারেন৷

সুত্র- DW
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status