বিশ্বজমিন

থাইল্যান্ডে আবার শুরু রুদ্ধশ্বাস অভিযান

মানবজমিন ডেস্ক

৯ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

রুদ্ধশ্বাস অভিযানে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ টিনেজ ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার অভিযানের দ্বিতীয় দিন আজ। গতকাল এ অভিযানে ৪টি বালককে উদ্ধার করা হয়। এরপর রাত হয়ে যাওয়ায় অভিযান স্থগিত করা হয়। আজ আবার সকালে তা নতুন করে শুরু হওয়ার কথা। উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানে বাকি আটটি বালক ও তাদের কোচকে উদ্ধার করার কথা। ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে তারা আটকে আছে চিয়াং রাই এলাকায় থাম লুয়াং গুহায়। গুহা মুখে তারা প্রবেশের পর ভারি বর্ষণে এর ভিতর ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। তারা আটকে পড়ে অনেক গভীরে। নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পর ওই গুহার ভিতর তাদের সন্ধান মেলে। এরপরই শুরু হয় উদ্ধারে বিশাল আয়োজন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ডুবুরিরা সেখানে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনির এক ডুবুরি মারা গেছেন। রোববার আটকে পড়া বালকদের মধ্য থেকে চারজনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ আবার গুহার ভিতর এয়ার ট্যাঙ্ক বা বাতাস ভর্তি ট্যাংক বসানোর কথা। তারপরই সকালে উদ্ধার অভিযান শুরু হওয়ার কথা। তবে এ অভিযান নিয়ে আশঙ্ক রয়েছে এখনও। সব বালককে ও তাদের কোচকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা। ওদিকে আবার প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে গুহার ভিতরে পানি বৃদ্ধি পাবে। উদ্ধার অভিযান থমকে দাঁড়াবে। ফলে ত্বরিত গতিতে শুরু হয়েছে অভিযান। আজ সকালে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, বাকি বালকদেরকে উদ্ধার তৎপরতা চলছিল। যেকোনো সময় তা শুরু হতে পারে। গুহার মুখে এনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে কমপক্ষে সাতটি এম্বুলেন্স। প্রথম দফায় রোববার ডুবুরিরা অপ্রত্যাশিত অল্প সময়ের মধ্যে চারটি বালককে বের করে আনেন। উদ্ধার করা বালকদের স্বাস্থ্য ভাল রয়েছে বলে জানিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যেহেতু আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ তাই ডুবুরিরা দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করতে চাইছেন। গুহা থেকে ওই বালকদের উদ্ধারে ডুবুরিদের ৯০ জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছেন। এর মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। ৫০ জন বিদেশী। তারা গুহার মধ্যে ওই বালকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন কিভাবে অন্ধকারে পানির ভিতর দিয়ে সাঁতরে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। এসব পথ সব স্থানে মসৃণ নয়। কোথাও কোথাও এতটা সরু যে তার ভিতর দিয়ে বেরিয়ে আসা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও গতকাল চারটি বালককে সফলতার সঙ্গে বের করে এনেছেন ডুবুরিরা। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে কিছুটা পথ হেঁটে আসা, হামাগুড়ি দেয়া, পর্বত আরোহনের মতো চলা এবং কিছুটা পথ ডুবুরিদের মতো সাঁতরে পাড়ি দেয়া। এক্ষেত্রে তাদের জন্য গাইড হিসেবে একটি রশি দেয়া হয়েছে। সেই রশি ধরে ধরে তারা গুহা মুখের দিকে অগ্রসর হয়। প্রতিজন বালককে বের করে আনতে সহায়তা করছেন দু’জন করে ডুবুরি। এক্ষেত্রে গুহার মধ্যবর্তী স্থানটি সবচেয়ে বিপদজনক। এ অংশটির নাম দেয়া হয়েছে ‘টি-জংশন’। এ ছাড়া রয়েছে একটি স্থান। এর নাম চেম্বার-৩। এটি হলো ডুবুরিদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বেস হিসেবে কাজ করছে।
যারা গুহার ভিতরে আটকে পড়েছিল:
চ্যানিন ভিবুলরুঙ্গরুয়াং (১১)। তার ডাকনাম টাইটান। সে সাত বছর বয়স থেকে ফুটবল খেলা শুরু করেছে।
পানুমাস স্যাংডি (১৩)। তার ডাকনাম মিগ। সে তার পিতামাতাকে লিখেছেÑ নেভি সিলের সদস্যরা আমাদের অনেক যতœ নিচ্ছেন।
দুগানপিত প্রোমটেপ (১৩)। তার ডাকনাম ডোম। সে উল্ড বোরসের ক্যাপ্টেন।
সামপোং জিয়াওং (১৩)। তার ডাকনাম পোং। সে থাইল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে।
মঙকোল বুনিয়েম (১৩)। তার ডাকনাম মার্ক। তাকে তার শিক্ষকরা অত্যন্ত ভাল ছেলে হিসেবে অভিহিত করেছেন। সে বড়দের, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করে।
নাত্তাউট তাকামরোঙ (১৪)। তার ডাকনাম টার্ন। সে তার পিতামাতাকে তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে অনুরোধ করেছে।
ইকারাত ওয়সুকচান (১৪)। তার ডাকনাম বিউ। সে তার মার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে একবার উদ্ধার হতে পারলে সে দোকানে তাকে সহায়তা করবে।
আদুল সাম-অন (১৪)। সে একটি ভলিবল টিমের সদস্য।
প্রজাক সুথাম (১৫)। তার ডাকনাম নোট। তার পরিবার তাকে স্মার্ট ও শান্ত বালক বলে অভিহিত করেছে।
পিপাট ফো (১৫)। তার ডাকনাম নিক। গুহার ভিতর থেকে সে তার পিতামাতাকে চিঠি লিখেছে। তাতে সে লিখেছে, গুহা থেকে বের হতে পারলে পিতামাতাকে সে একটি বারবিকিউতে খেতে নিয়ে যাবে।
পর্নচাই কামলুয়াং (১৬)। ডাকনাম টি। সে তার পিতামাতাকে বলেছে, ভয় পেয়ো না। আমরা ভাল আছি।
পিরাপাত সোমপিয়াংজাই (১৭)। তার ডাকনাম নাইট। যেদিন তারা নিখোঁজ হলো সেটা ছিল তার জন্মদিন। তার পিতামাতা তার জন্মদিন পালন করার জন্য এখনও অপেক্ষায় আছে।
কোচ ইকাপোল চানটাওং (২৫)। ডাকনাম আকি। তিনি এসব টিনেজ বাচ্চার পিতামাতার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তার কৃতকর্মের জন্য। কিন্তু অভিভাবকরা তাকে জানিয়ে দিয়েছেন তাকে তারা দায়ী করছেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status