শরীর ও মন

আপনার ভয়, আতঙ্ক কোনও মানসিক ব্যাধির জন্য নয় তো!

জি নিউজ

৮ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

একটা প্রবাদ আমরা প্রায় সকলেই জানি, ব্যবহারও করি প্রয়োজনে, ‘ঘর পোড়া গরু, সিদুঁরে মেঘ দেখলে ডরায়’! জানেন কী এই ভয়ই প্রবাদের গ-ী পেরিয়ে বাস্তবেও রয়েছে অনেকের মনে! বিশ্বাস হচ্ছে না! এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা বাস্তবেই মেঘ দেখলে ভয় পান। পৃথিবীতে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যাঁরা খুব অদ্ভুত কিছু বিষয়কে ভয় পান এবং সারাক্ষণ তা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে থাকেন। চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ফোবিয়া বলা হয়। ফোবিয়া একধরণের মানসিক ব্যাধি (মেন্টাল ডিসঅর্ডার)। এমন বেশ কিছু ফোবিয়া আছে যা অজান্তেই আমাদের মনে বাসা বাঁধে, বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। আজ তেমনই কিছু অদ্ভুত ফোবিয়ার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

নেফোফোবিয়া (মেঘ-ভীতি)
নেফোফোবিয়অয় আক্রান্ত ব্যক্তি মেঘের ভয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কিত থাকেন। এমনকি তাঁরা আকাশের দিকে তাকাতেও ভয় পান। এই ফোবিয়ার মতোই আরেকটি ফোবিয়া আছে যার নাম অ্যানাবলফোবিয়া। অ্যানাবলফোবিয়অ আক্রান্ত ব্যক্তি উপরের দিকে তাকাতেও ভয় পান। আকাশ, বাড়ির ছাদ, উঁচু গাছ, এমনকি উঁচু বহুতলের দিকে তাকাতেও ভয় পান তাঁরা।

স্পেকট্রোফোবিয়া (আয়না-ভীতি)
স্পেকট্রোফোবিয়অয় আক্রান্ত ব্যক্তি আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বকেও ভীষণ ভয় পান। এই ফোবিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিসত্ত্বা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন বা নিজের ত্বকের সামান্য দাগও সহ্য করতে পারেন না। অতীতের কোনও ভয়ঙ্কর ঘটনা থেকেও অনেকের আয়না-ভীতি তৈরী হতে পারে।

অ্যান্থোফোবিয়া (ফুল-ভীতি)
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও পৃথিবীতে কিছু মানুষ ফুলের ভয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কিত থাকেন। এই ধরনের মানুষ ফুল দেখলে বা ফুলের কাছাকাছি থাকলে এক ধরণের মানসিক চাপ অনুভব করেন। অনেকে আবার পুরো ফুলটাকে ভয় না পেয়ে ফুলের বিশেষ কোন অংশ যেমন পাপড়ি বা রেণু ভয় পান

হেডোনোফোবিয়া (আনন্দ-ভীতি)
পৃথিবীর এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁদের আনন্দেও ভীতি কাজ করে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। এ ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি উপভোগ্য মূহূর্তগুলোকে ভয় পান। তাঁরা আনন্দ পেতে ও প্রকাশ করতে ভয় পান। এ ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সমাজের সবার থেকে আলাদা থাকতে পছন্দ করেন। তাই তাঁদের স্বাভাবিক সামাজিক জীবন-যাত্রা ব্যাহত হয়।

টেলিফোবিয়া (টেলিফোন-ভীতি)
১৯৯৩ সালে বৃটেনের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যে সে দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে টেলিফোন-ভীতি (টেলিফোবিয়া) আছে। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ফোন রিসিভ করতে বা ফোনে কথা বলতে ভয় পান ও এক ধরনের তীব্র মানসিক চাপ অনুভব করেন। তাঁরা ফোনে কি বলবেন তা বুঝে পান না এবং এক ধরনের অস্বস্তিতে ভোগেন। তাঁরা সব সময়েই ফোন এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন।

অ্যাবলাটোফোবিয়া (স্নান-ভীতি)
এই ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি স্নান করতে ভয় পান। তবে এই ফোবিয়া হাইড্রোফোবিয়া (জল-ভীতি) থেকে অনেকটাই আলাদা। এই ফোবিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তি জল ভয় পান না, তবে স্নান করতে ভয় পান। স্নান সম্পর্কিত অতীতে কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলে সাধারণত এই ধরনের ফোবিয়া তৈরি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্নান করতে বলা হলে অতিরিক্ত ঘাম, অচেতনতা, খিঁচুনি, বমি ভাব অথবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

হেলিওফোবিয়া (সূর্যের আলো ভীতি)
হেলওফোবিয়া হল সূর্য-রশ্মি ভীতি। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত হলে ব্যক্তি সূর্য-রশ্মিকে ভয় পান। স্কিন ক্যান্সার বা রোদে পুড়ে যাওয়ার ভয় থেকেও হেলওফোবিয়ার সৃষ্টি হয়। দিনের বেলাও তাঁরা ঘর অন্ধকার করে রাখেন এবং কখনওই সূর্যের আলোতে বাইরে বের হতে চান না। সামান্য সূর্য-রশ্মি ঘরে ঢুকলেও তাঁরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন। যে কোনও ধরণের ফোবিয়াই একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রাকে ব্যহত করে। তাই যে কোনও ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবহেলা না করে মানসিক ভাবে তাঁকে সহায়তা করা উচিত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status