ঈদ আনন্দ ২০১৮

খেলাধুলা

ক্রিকেটারদের ‘ফুটবল’ উৎসব

ইশতিয়াক পারভেজ

৩০ জুন ২০১৮, শনিবার, ৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

তখনও রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে চার মাস বাকি। সেই সময় রাজধানীর একটি রেস্তরাঁয় ফুটবল নিয়ে জমে উঠেছিল তুমুল তর্ক। তবে কোনো সাবেক বা বর্তমান ফুটবলার সেখানে ছিলেন না। কথার সেই যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন বাংলাদেশ ওয়ানডের দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। শিরোপা জয়ে ব্রাজিলকে ছাড়াতে না পারলেও নিজের পছন্দের দল আর্জেন্টিনাকে মাশরাফি রেখেছিলেন সবার উপরে। চুপ থাকতে পারেননি ফুটবলে ব্রাজিলের অন্ধ-ভক্ত তামিম। অধিনায়ককে বুঝিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠলেন যে ফুটবলে ‘ব্রাজিলই’ সেরা।
এবার বিশ্বকাপের যতই দিন ঘনিয়ে এসেছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের ব্যাট-বলের লড়াইয়ে দমকা হাওয়ার মতো উড়ে এসেছে ফুটবল চর্চাও। চার-ছক্কা, নো আর এলবিডাব্লিউ এমন ক্রিকেটীয় ভাষার মাঝেও শোনা যায় গোল, পাসের মতো ফুটবলের চিরচেনা শব্দগুলো। শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারার নাম নয়, সেখানে শোনা যায় লিওনেল মেসি, নেইমার, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের গল্প। এবছর বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচি থাকলেও ক্রিকেটারদের মগজে ফুটবল বিশ্বকাপে প্রিয় দলের খেলার সময়গুলোও ঘুরপাক খাচ্ছে। যত ব্যস্ততা থাকুক বিশ্বকাপের খেলা কোনভাবেই না দেখে থাকা যাবে না।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে এমনও আছেন যারা অবসরে মাঠে নেমে পড়েন ফুটবল নিয়ে। আবার শখের এ ফুটবল খেলতে গিয়ে মুশফিক থেকে শুরু করে সর্বশেষ নাসির হোসেন ইনজুরিতে পড়েছেন দারুণভাবে। বাংলাদেশ দলে অবশ্য মাশরাফির পক্ষেই ‘ভোট’ বেশি, বেশির ভাগই আর্জেন্টিনার সমর্থক। টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ছাড়াও আবদুর রাজ্জাক, তুষার ইমরান, নূরুল হাসান সোহান, মুমিনুল হকের প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে তামিম ইকবালের ব্রাজিল সমর্থকদেরও পাল্লা কম ভারি নয়। রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আবুল হাসান রাজুরা ব্রাজিলের দারুণ ভক্ত। আবার দুই দলেরই সমর্থন করেন এমনও ক্রিকেটারও আছেন। তাই সুযোগ পেলেই তারা ফুটবল নিয়ে জড়িয়ে পড়েন নানা তর্কে। সেই সঙ্গে ক্রিকেটারদের ফুটবল উন্মাদনা নিয়ে আছে নানা মজার মজার গল্প। এমনই কিছু গল্প পাঠাকের জন্য তুলে ধরা হলোÑ
মাশরাফির প্রিয় আর্জেন্টিনার ফুটবল-ব্রাজিলের সাম্বা
ক্রিকেট মাঠে অনুশীলনে একটি অংশ জুড়ে থাকে ফুটবল খেলা। সেখানে দুই দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলেন ক্রিকেটাররা। তবে রোদ হোক আর বৃষ্টি অনুশীলনের ‘ফুটবল’ ম্যাচকে যিনি সিরিয়াস বানিয়ে ফেলেন তার নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। রীতিমতো সেখানে বড় ধরনের বাজিও ধরে ফেলেন তিনি। মাশরাফির ফুটবল প্রীতির আরো একটি বড় প্রমাণ নড়াইল ফাউন্ডেশন। এই নামের আড়ালে তিনি শুরু করেছেন ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে কাজ। নড়াইলে তিনি ফুটবল একাডেমির জন্য এরই মধ্যে সেরা কোচদের নিয়োগ দিয়েছেন। গড়ে তুলছেন আধুনিক জিমও। দেশসেরা পেসার এখন ক্রিকেটের বাইরে বড় সময় দিচ্ছেন ফুটবলেও। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত হলেও ব্রাজিলের খেলাও দেখেন মাশরাফি। দিয়াগো ম্যারাডোনার পর লিওনেল মেসির খেলায় তিনি বুঁদ হয়ে থাকেন। আর্জেটিনার প্রতি তার এই প্রেমের কারণ ম্যারোডোনা। নিজের প্রিয় দল নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই আর্জেন্টিনার সমর্থক। আশা করছি, এবার তারা আরেকটি বিশ্বকাপ জিতবে। অবশ্য মেসির চোট নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। তবে এখন সে মাঠে ফেরায় কিছুটা ভারমুক্ত মনে হচ্ছে।’ অন্যদিকে ব্রাজিলের খেলাও তার ভীষণ পছন্দ। তাতে কি ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের খোঁচা দিতেও ছাড়েন না তিনি। মাশরাফির নাকি ব্রাজিলের ফুটবলের সঙ্গে প্রিয় তাদের সাম্বা নাচও। তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করলেও ব্রাজিলের খেলাও দেখি। রোনালদোর খেলা দেখেছি, রোনালদিনহোর খেলাও খুব ভালো লাগতো। তবে আমার কাছে ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সাম্বা নাচ।’
ব্রাজিল নিয়ে ঝগড়া বাধান তামিম
ব্রাজিলের প্রায় অন্ধ-সমর্থক তামিম ইকবাল। তার বাবাও ছিলেন একজন ফুটবলার। বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন ফুটবলের প্রতি দারুণ নেশা। তার গোটা পরিবারই ফুটবলের দারুণ ভক্ত। বিশ্বকাপ এলেতো কথাই নেই ক্রিকেট রেখে ডুবে যান ফুটবলে। তবে এ নিয়ে তার সবচয়ে বেশি তর্ক হয় অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গেই। শুধু তাই নয় দলে যে ক’জন ব্রাজিল সমর্থক আছেন তাদেরও ভরসা তামিম। ব্রাজিল নিয়ে ঝগড়া করতে তিনি কাউকে ছাড়েন না। দেশসেরা এ ওপেনারের ব্রাজিল প্রেম ফুটে ওঠে তার নিজের কথাতেই। তিনি বলেন, ‘ফুটবল নিয়ে সবচেয়ে মজার তর্ক হয় মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে। গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৭ গোল খাওয়ার পর খুব খারাপ লেগেছিল। তবে আর্জেন্টিনা-সমর্থক কেউ বলতে এলে বলি, পরের বিশ্বকাপ থেকেও যদি জিততে শুরু করেন আমাদের সমান হতে ১২ বছর লাগবে! ওই লেভেলে আসেন, তার পর কথা হবে!
মেসিতে বুদ মুশফিক
মুশফিকুর রহীম মাঠে এসে খুব একটা কথা বলেন না প্রয়োজন ছাড়া। সারাক্ষণ তিনি ব্যাটিং আর কিপিং অনুশীলন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু কিছু মুহূর্তে তাকে দেখা যায় বেশ প্রাণবন্ত। সেটি অনুশীলনে ফুটবল খেলার সময়। তার চিৎকারই বেশি শোনা যায় তখন। কিছু দিন আগেই ক্রিকেট নয়, শখের ফুটবল খেলতে গিয়ে তিনি পড়েছিলেন গোড়ালির ইনজুরিতে। মাঠে তার ফুটবল খেলার ধরন দেখে মনে হয়েছিল তিনি বুঝি ম্যারাডোনার ভক্ত। কিন্তু না, আর্জেন্টিনার দারুণ সমর্থক হলেও তিনি আসলে লিওনেল মেসির প্রেমেই বুদ থাকেন। মেসির টানেই সম্প্রতি তিনি ঘুরে এসেছেন বার্সেলোনায়। কাতালান ক্লাবটির বিখ্যাত স্টেডিয়াম ন্যু ক্যাম্পে গিয়ে খুঁজে বেড়িয়েছেন মেসির ঘ্রাণ। সেই গল্প নিয়ে মুশফিক ‘আমি মেসির পাগল-ভক্ত, আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনারও অন্ধ-সমর্থক। মেসির ফুটবল-জাদু আমার ভালো লাগে, তেমনি ভালো লাগে বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা জিতলে। ছোটবেলা থেকে আমি ফুটবল খেলতে পছন্দ করি, দেখতেও পছন্দ করি। তবে ঠিক কবে থেকে যে বার্সেলোনা আমার প্রিয় ক্লাব হয়ে উঠলো মনে নেই। বার্সেলোনার খেলা দেখার জন্য আমার আলাদা প্রস্তুতি থাকে। যেখানেই থাকি, চেষ্টা করি, সবাইকে নিয়ে খেলাটা দেখতে। রাতের যে খেলাগুলো হয়, সেগুলো বেশির ভাগই দেখা হয়। তবে যদি আমাদের খেলা না থাকে।’
অন্যদিকে মুশফিকের ন্যু ক্যাম্পে যাওয়া নিয়ে পেছনের গল্পটাও মেসিকে ঘিরেই। তিনি বলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু, আত্মীয় ন্যু ক্যাম্পে গেছেন। মেসির কারণেই আমারও অনেক দিন ধরে ইচ্ছে ছিল সেখানে যাওয়ার। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইচ্ছে পূরণটাকে সহজ করে দিলো। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল বার্সেলোনায় যাব। ইংল্যান্ড থেকে যাওয়াটা সহজও। বেলজিয়ামে আমার এক বন্ধু থাকে। বার্সেলোনা যাওয়ার সবকিছু সেই ঠিকঠাক করে দিয়েছিল।’ এছাড়াও মুশফিক জানিয়েছেন তার মেসিকে এমন ভালবাসার পেছনের কারণও। তিনি বলেন, ‘অন্যদের খেলা যে একেবারেই উপভোগ করি না তা নয়, তবে মেসি সব সময় আলাদা। অনেকে বলে খেলাধুলায় সবচেয়ে বড় বিষয় শারীরিক সামর্থ্য। এটা অবশ্যই বড় ব্যাপার। তবে মেসির খেলা দেখলে কখনোই এটাকে বড় কিছু মনে হয় না। যেকোনো খেলার কথাই বলেন, আমি কখনোই মনে করি না এটা কোনো সীমাবদ্ধতা। মেসি যে কত বড় ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা, সেটা ওর খেলা দেখলেই বোঝা যায়। মানুষ হিসেবেও অত্যন্ত বিনয়ী। তার এই গুণটাই বেশি ভালো লাগে। আমার মেসি-ভক্ত হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ।’
আর্জেন্টিনা বলতেই সরব থাকেন মাহমুদুল্লাহ
মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ দুই ভায়রা। তাদের মধ্যে দারুণ মিলও আছে। দু’জনই চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু ফুটবল খেলার সময় মাহমুদুল্লাহকে দেখা যায় ভিন্ন চেহারাতে। হয়তো পায়ে ফুটবল এলেই তিনি নিজেকে ভাবতে শুরু করেন আর্জেন্টিনার বড় কোন তারকা খেলোয়াড়। আর ভাববেন নাইবা কেন? তিনি যে আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত। এমনকি দলের ব্রাজিল সমর্থকদের সঙ্গেও তর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ব্রাজিলের মতো তার পছন্দের দল এতটা শিরোপা না জিতলেও তার আশা এবার হয়তো হবে। বিশেষ করে মেসিদের নিয়ে অনেক প্রত্যাশা তার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার আর্জেন্টিনার তৃতীয় ট্রফির জন্য আত্মবিশ্বাসী তিনি।
দেশের ফুটবল ও আর্জেন্টিনা নিয়ে রাজ্জাকের দুঃখ
ছোট বেলা থেকেই জাতীয় দলের সেরা স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের ফুটবল খেলা দারুণ প্রিয় । সুযোগ পেলেই তিনি বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। ম্যারাডোনা আর মেসির দারুণ ভক্ত তাই বলার অপেক্ষা রাখেনা তার প্রিয় দলের নাম আর্জেন্টিনা। তিনি বলেন, ‘আমি আর্জেন্টিনাকে দারুণ সমর্থন করি। তারা অনেক শিরোপা না জিতলেও আমি এ দলের পাশেই থাকবো। আমি চাই এবার ইনশাআল্লাহ তৃতীয় শিরোপা হাতে তুলবে মেসির দল। আমি মেসির দারুণ ভক্ত তাই তার হাতে একটি ট্রফি দেখতে চাই।’ ব্যস্ত ক্রিকেটের কারণে ফুটবল খুব একটা খেলা না হলেও টিভিতে হলেও দেখা চাই রাজ্জাকের। বিশেষ করে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো মিস করেন না। তিনি বলেন, ‘আমি টিভিতে ফুটবল দেখি। বিশেষ করে ফুটবল বিশ্বকাপের ম্যাচতো মিস করিই না। আর আর্জেন্টিনার খেলা হলেতো কথাই নেই। আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকে কিভাবে খেলা দেখবো।’ নিজের প্রিয় দল আর্জেন্টিনার শিরোপা না পাওয়া নিয়ে যেমন তার দুঃখ আছে তেমনি বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে দুঃখ কম নয়। রাজ্জাক বলেন, ‘ক্রিকেটে এখন আমরা বিশ্বকাপ খেলি। ফুটবল নিয়েও সেই আশা ছিল আমাদের। কিন্তু ধীরে ধীরে তা শেষ হয়ে গেছে। কারণ আমাদের তো সেই মানের ফুটবলারই নেই যে তারা এ দেশের ফুটবলকে সেই মানে নিয়ে যায়। আবার নিজেকে সান্ত¡নাও দেই যে আমাদের পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাতেও ফুটবলের সেই অবস্থা নেই ভেবে।’
ক্রিকেটার না হলে ফুটবলার হতেন তুষার ইমরান
দেশের দারুণ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তুষার ইমরান। ৩৪ বছর বয়সেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ব্যাট হাতে হাঁকাচ্ছেন একের পর এক সেঞ্চুরি। গড়ছেন রানের পাহাড়। কিন্তু ক্রিকেটের চেয়ে তিনি ফুটবলই বেশি ভালবাসেন। যে কারণে সারা দিন ক্রিকেট খেলেও রাত জেগে দেখেন যে কোন ফুটবল লীগের খেলা। আর বিশ্বকাপ হলেতো কথাই নেই। টিভির সামনে থেকে তাকে সরানো কঠিন। তার সামনে ফুটবল নামটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠলেন, ‘আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা, আমার প্রিয় ফুটবলার ম্যারাডোনা। বলতে পারেন ম্যারাডোনকে দেখেই আমি ফুটবলের এমন অন্ধ ভক্ত। আমি ক্রিকেট খেলি ঠিক আছে। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে ফুটবলেই। আমি সারা দিন সুযোগ না পেলেও রাতে বসে ফুটবলের লীগের খেলাগুলো দেখি। আর আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। সত্যি কথা আমি ক্রিকেটার না হলে ফুটবলার হতাম নিশ্চিত। কারণ আমার আব্বার ভীষণ ইচ্ছা ছিল আমি ফুটবল প্লেয়ার হবো। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারিনি। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমি শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটার হতে পেরেছি।’ অন্যদিকে নিজে ফুটবলার হতে পারেননি তা নিয়ে যেমন কষ্ট আছে তেমনি তার দুঃখ বাংলাদেশের ফুটবল নিয়েও। তিনি বলেন, ‘আসলে খুব খারাপ লাগে যখন বাংলাদেশের ফুটবলের বর্তমান অবস্থা দেখি। একটা সময়
সালাউদ্দিন, আশরাফউদ্দিন চুন্নু, সাব্বিররা ছিলেন। এরপর মোনেম মুন্না, এমেলিরা ছিলেন। তারা ফুটবলটাকে যতদূর নিয়ে গেছেন, এখনকার ফুটবলাররা তার কিছুই করতে পারছেন না। যে কারণে দর্শকরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এ দেশের ফুটবল থেকে। এখনকার কিছু ফুটবলার যে ভালো খেলে না, তা নয়। কিন্তু যখন জাতীয় দলের জন্য খেলতে যায় তখন যেন কেমন হয়ে যায়। যদি ফুটবলের আগের অবস্থাও থাকতো তাহলে দেখতেন ক্রিকেটের চেয়ে সেখানেই বেশি দর্শক হতো।’
ম্যারাডোনাকে দেখেই ফুটবল ভক্ত মুমিনুল
মুমিনুল হক সৌরভ, যার ধ্যান-জ্ঞান সবই ক্রিকেট। এমনকি ইনজুরির ভয়ে তিনি ফুটবলও খেলতে চান না তেমন একটা। তাতে কি? ছোটবেলা থেকেই শচীন, লারার আগে তার স্বপ্নের হিরো দিয়াগো ম্যারাডোনা। আর প্রিয় দলের নামকি আর আলাদা করে বলতে হয়? এক কথায় তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘আমি আর্জেন্টিনার দারুণ ভক্ত। ছোট বেলা থেকেই ফুটবল পছন্দ করি। দিয়েগো ম্যারাডোনার আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড়। তাকেই দেখেই আমি ফুটবল খেলা ভালবাসতে শুরু করি। এখনতো ভালো লাগার তালিকাতে যোগ হয়েছে মেসি। বলতে পারেন এ দু’জনের কারণেই আমি আর্জেন্টিনা ও ফুটবল দুইটাই ভাল লাগে। বিএকএসপিতে যখন থাকতাম তখন ক্রিকেটের বাইরে আমাদের বন্ধুরা ফুটবল নিয়ে বেশি কথা বলতাম। এর আগের বিশ্বকাপগুলো দারুণ উপভোগ করেছি এবারও দুঃখ খুব একটা করতে পারবো না। কারণ সেই সময় আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজে সফর থাকবে। তবে চেষ্টা থাকবে যেন অন্তত আর্জেন্টিনার ম্যাচগুলো দেখতে পারি।’ আগেই তিনি বলেছিলেন কক্সবাজারে থাকলে তিনি হয়তো ক্রিকেটার হতে পারতেন না। তাহলে কি ফুটবালার হতেন? মুমিনুল বলেন, ‘না তা জানি না ফুটবলার হতাম কিনা। তবে ক্রিকেটার হওয়ার পর থেকে আমি মাঠে ফুটবল খেলতে ভয় পাই। কারণ এখানে ইনজুরির শঙ্কা থাকে বেশি। তবে ভয় পেলেও ফুটবলটা আমার বেশ প্রিয়। আমি চেষ্টা করি ফুটবল লীগের বড় বড় ম্যাচগুলো দেখার। সময় করে দেখিও ক্লাব ফুটবলের ম্যাচ গুলো।’
সৌম্য সরকারের পছন্দ পর্তুগাল
ফুটবল সমর্থনে সৌম্য সরকার একটু ভিন্ন ভূমিকাতে আছেন। একটি নয় দুটি দল তার পছন্দের তালিকাতে। একটি ব্রাজিল অন্যটি পর্তুগাল। এর কারণও আছে। ছোট বেলা থেকেই তার প্রিয় দল ব্রাজিল। বিশেষ করে রোনালদিনহোর কারণে তিনি এ দলের পাঁড় ভক্তও বলা যায়। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরও বেশ বড় ভক্ত তিনি। যে কারণে পর্তুগালকেও রেখেছেন পছন্দের তালিকাতে। সৌম্য বলেন, ‘আমি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কারণে পর্তুগালের সমর্থক। ওদের খেলা দেখি। আর ছোট বেলা থেকেই ব্রাজিলের সমর্থক।’ বেশি শিরোপা জিতেছে বলে ব্রাজিলের সমর্থক তা নয়, সৌম্য আসলে তাদের ফুটবলের মুগ্ধ। নিজের এ মুগ্ধতা নিয়ে সৌম্য বলেন, ‘আমি আসলে কে বেশি কাপ নিয়েছে তা নিয়ে কোনো দলের সমর্থন করিনা। আমি আসলে ছোট বেলা থেকেই ব্রাজিলের ফুটবল খেলা দেখেই বেশি মুগ্ধ। তাদের ফুটবলে অন্যরক বিষয় আছে। বিশেষ করে রোনালদিনহোর খেলা আমার ভীষণ ভালো লাগতো। এরপর রোনালদো আসল তখন তার খেলাও আমি খুব দেখতাম। বাসায় যদিও আমি ছাড়া ব্রাজিলের সমর্থক নেই। দাদারা সবাই আর্জেন্টিনার সমর্থক। সবাই এক সঙ্গে বসে খেলা দেখি। যদিও কারো সঙ্গে আমার ফুটবল নিয়ে তর্ক হয় না। আমি আসলে কেউ তর্ক করতে এলেও সুযোগ দেই না। চুপ করে থাকি।’
ব্রাজিলের জন্য ‘হাউ মাউ’ করে কাঁদেন তাসকিন
তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ শুধু ব্রাজিলের সমর্থনই করেন না তারা হারলে ‘হাউ মাউ করে কান্নাও করেন তিনি। অবশ্য এ জন্য তার বাবা দায়ী। কারণ তার বাবা আবদুর রাশিদ মনু আর্জেন্টিনার অন্ধভক্ত। আর ছেলের পছন্দের দল ব্রাজিল হারলেই এমন ক্ষ্যাপাতে শুরু করেন যে তাসকিন আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদেই ফেলেন। তাসকিন বলেন, ‘আমি ব্রাজিল ছাড়া কিছুই বুঝি না। ফুটবলটা দারুণ ভালো লাগে। রাতে আমি বাসায় ফুটবলটাই বেশি দেখি। এ বিশ্বকাপেও আয়োজন করে ফুটবল দেখবো।’ জাতীয় দলে তার গুরু থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি। তাদের মাঝে ব্রাজিল সমর্থন নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘আমাদেরতো জাতীয় দলে সুযোগ পেলেই ফুটবল নিয়ে ঝগড়া হয়। আমি ছাড়াও ব্রাজিলের বড় ভক্ত তামিম ভাই আছেন। যখন তর্ক শুরু হয় কেউ কাউকে ছাড়ে না। আপনি জাতীয় দলের কথা বাদ দেন। আমার বাসাতেও আমি ব্রাজিল নিয়ে খুব অসহায়।’ কেন ব্রাজিলের কারণে বাসাতে কি সমস্যা বউ বুঝি আর্জেন্টিনার সমর্থক? তাসকিন বলেন, ‘আরে না, আমার বউতো ফুটবল বোঝেই না। আমার বাবা হলেন আর্জেন্টিনার বড় সমর্থক। যখনই ব্রাজিল হারে তিনি আমাকে ভীষণ ক্ষ্যাপাতে শুরু করেন। একবারতো ব্রাজিল হারাতে তিনি আমাকে এমন
ব্যঙ্গ করলেন আমি হাউমাউ করে কেঁদেছি। এখনো হারলেই শুরু হয়ে যায় তার ব্যাঙ্গ করা।’ এ জন্য অবশ্য আর্জেন্টিনাকে তার প্রতিপক্ষ মনে হয় না। তাসকিন বলেন, ‘না, আর্জেন্টিনার খেলাও আমার ভাল লাগে। মেসিকেও ভীষণ ভাল লাগে। আমি প্রতিপক্ষ ভাবিনা।’
সাফল্যের কারণেই ব্রাজিলের সমর্থক মোসাদ্দেক
ফুটবল পেলেই মোসাদ্দেক হোসেন হোসেন নিজেকে ফুটবলার ভাবতে শুরু করেন। ক্রিকেটের পরই তার প্রিয় খেলা এটি। এবার অপেক্ষায় আছেন ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপের। তার দল ব্রাজিল এবারও শিরোপা পাবে সেটাই তার প্রত্যাশা। কারণ বেশি শিরোপার কারণেই তিনি ব্রাজিলের ভক্ত! মোসাদ্দেক বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই ব্রাজিলের খেলা দেখি। এই দলকে সমর্থন করি। কারণ ওরা বেশিবার বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছে।’ তবে শুধুই শিরোপার কারণেই ব্রাজিল ভক্ত সেটি মানতে নারাজ তিনি। মোসাদ্দেক বলেন, ‘ভালো খেলে বলেই ব্রাজিল এতোবার শিরোপা জিতেছে। শুধু কাপ বেশি নিয়েছে বলে আমি সমর্থন করি তা কিন্তু ঠিক নয়। ওদের খেলাতে অন্যরকম জাদু আছে।’ বিশ্বকাপে নিজের আয়োজন নিয়ে বলেন, ‘দেখেন আমরা বেশির ভাগ ক্রিকেটারই কিন্তু ফুটবলের ফ্যান। যে কারণে যতই খেলার চাপ থাকুক সামনে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার জন্য আমরা নানা আয়োজন করে রেখেছি। সুযোগ পেলেই সবাই মিলে খেলা দেখবো। আর এবারও প্রার্থনা করবো যেন ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়।’
আর্জেন্টিনাকে হারাতে চান রুবেল হোসেন
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ব্রাজিল সমর্থকদের দল ভারি করেছেন পেসার রুবেল হোসেন। শুধু তাই নয় মাঠে যখন ক্রিকেটাররা ফুটবল খেলেন তখন তাকে দেখা যায় সবচেয়ে সরব। নিজের প্রিয় দল ও ফুটবলের প্রতি ভালবাসা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ফুটবল খেলে বড় হয়েছি। এটি আমার ফিটনেসের জন্য অনেক উপকারীও। আমার প্রিয় দল ব্রাজিল। আমি তাদের খেলা দেখেই ফুটবলটাকে বেশি ভালবাসি। বিশেষ করে রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকা, কার্লোসরাই আমার আসল হিরো। এখন নেইমার আছে।’ যেহেতু ব্রাজিল তাই বলার অপেক্ষা রাখেনা যে প্রতিপক্ষ নিশ্চিত আর্জেন্টিনা। তিনি বলেন, ‘আমি আজন্ম ব্রাজিলের সমর্থক। আমিতো চাই আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিতে। তবে আর্জেন্টিনা ও মেসিসহ সব দলের জন্য শুভ কামনা রইলো। সেই সঙ্গে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে সেটাই চাই।’
রাহীর ‘ফুটবল’ ভয়ের সঙ্গে ভালবাসাও
জাতীয় দলের তরুণ সদস্য সিলেটের ছেলে পেসার আবু জায়েদ রাহী। ক্রিকেটকেই যিনি ধ্যানজ্ঞান করে এগিয়ে যাচ্ছেন। রাহী বলেন, ফুটবলের প্রতি আমার আগ্রহ খুব কম। সুযোগ পেলে আমি ক্রিকেটই খেলি। কিন্তু কেন ফুটবল নিয়ে এতো আনাগ্রহ? রাহী বলেন, ‘ভাই জীবনে অনেক ক্রিকেট খেলেছি। অনেক বড় বড় ম্যাচে খেলেছি। কিন্তু কোনো দিন কাটা ছেড়া করতে হয়নি। জীবনে একবারই ফুটবল খেলতে গিয়েছিলাম। গোল কিপার ছিলাম। আর আমার কপালে বল লেগে কেটে সেলাই দিতে হয়েছিল। তারপর থেকে আমি আর ফুটবল খেলি না। তবে ফুটবল ভালবাসি। চেয়েছিলাম গোলকিপার হতে। কিন্তু হতে পারিনি একদিনেই আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। মেসিকে খুব পছন্দ করি যে কারণে আর্জেন্টিনা ও বার্সার বড় সমর্থক। আবার ব্রাজিলের খেলাও ভালো লাগে। বিশ্বকাপ আসছে। আমি দুই দলকে সমর্থন করবো। তবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচে অবশ্যই আমি প্রকৃত আর্জেন্টাইন ভক্ত। যদি এ দুই দলই এবার বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত না থাকে। তবুও ফাইনাল আমি দেখিবোই। কারণ বিশ্বকাপের ফাইনালে যারাই যাবে তারা নিজেদের সেরাটাই উপহার দিবে। সেই ম্যাচ মনে থাকবে সবার অনেক দিন। তবে আমি চাই আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল ফাইনালে থাকুক। তাহলে ফাইনাল হবে অসাধরণ।’
তবুও ফুটবল খেলবেন মেসি ভক্ত নাসির হোসেন
পায়ের লিগামেন্টের ইনজুরি নিয়ে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে রয়েছেন নাসির হোসেন। কিন্তু তার ইনজুরিটা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে নয়। শখের ফুটবল খেলতে গিয়েই তার এই অবস্থা। কিন্তু নাসিরের ফুটবল প্রেম এতটাই যে মাঠে ফিরে আবারো ফুটবল খেলতে মুখিয়ে আছেন তিনি। তার কারণ হিসেবে বলেন, ‘আমি সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরেই ফুটবল খেলবো। কেউ আটকাতে পারবে না। কারণ আমার দ্বিতীয় খেলা হলো ফুটবল। আমি যখন ক্রিকেট খেলি না তখন ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ছোট বেলা থেকেই আর্জেন্টিনার ভীষণ সমর্থক। সেটা শুধু যে মেসির কারণে তা নয় আমার গোটা পরিবারই আর্জেন্টিনার ফুটবল নিয়ে মাতোয়ারা থাকে। এ কারণে আর্জেন্টিনাই আমার প্রিয় দল হয়ে উঠেছে। আর মেসির খেলা আমার ভীষণ ভালো লাগে। এবারও অপেক্ষায় আছি বিশ্বকাপ শুরুর। যেহেতু আমি বিছানাতে থাকবো, ক্রিকেট খেলাও নেই তাই আশা করি এবার বিশ্বকাপের খেলা আরো ভালোভাবেই উপভোগ করবো।’ ত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status